১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:০৯

ষোড়শ সংশোধনী এবং রাজনৈতিক প্রকৌশল

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বাংলাদেশ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ছিল মূলত সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে একটি বিচারিক পর্যালোচনা তথা জুডিশিয়াল রিভিউ। গোটা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যালোচনা একটি স্বীকৃত সাংবিধানিক ক্ষমতা। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব পলিটিক্সে বলা হয়েছেÑ Judicial Review means: ÒThe power to review legislative and executive acts and to nullify those that are believe to contravene a constitution.”। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ আদালতের ক্ষমতা রয়েছে পার্লামেন্টের পাস করা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বাতিল করার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তাদের চিরায়ত ও অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বলে শাসক দল প্রণীত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে রায় দেন। এখন দেখা যেতে পারে, কিভাবে এবং কেন ষোড়শ সংশোধনী বাতিলযোগ্য ছিল। সচেতন নাগরিক মাত্রই জানে, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের বিচার আদালতের কাঠামোর মধ্যেই নিয়োজিত ছিল। এই বিধিবিধানের নামÑ ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’। বিচারক যদি অন্যায় ও নৈতিক স্খলনের কোনো অপরাধ করেন, তাহলেই একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচার করবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্য দু’জন সিনিয়র বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মোতাবেক ১৯৭৫-পরবর্তী সময়কাল থেকে এ ব্যবস্থাটি অনুসৃত হয়ে আসছে। যদিও ১৯৭২ সালের সংবিধানে ব্রিটিশ সংবিধানের আদলে বিচারকদের বিচারের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত ছিল, ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনী মোতাবেক তা রাষ্ট্রপতির প্রতি অর্পণ করা হয়। জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে অন্যান্য দেশে চলমান ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে তা সর্বোচ্চ বিচারালয়ে প্রত্যর্পণ করেন।

দীর্ঘকাল ধরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বর্তমান রয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ দুইবার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতসীন ছিল। তখন এটা মেনে নিয়েই তারা দেশ পরিচালনা করছিল। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করে। এতে বিচারকদের বিচার বা অভিশংসনের ক্ষমতা উচ্চ আদালত থেকে কেড়ে নিয়ে জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তারা উচ্চ আদালতের ওপর তাদের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলো এবং সিভিল সোসাইটি এর তীব্র প্রতিবাদ করে। ওই সময় কয়েকজন আইনজীবী জাতীয় সংসদের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। দীর্ঘ সময় ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের সাংঘর্ষিক বলে রায় দেন। সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়। সেই সাথে বর্তমান শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তারা একটি দীর্ঘ পর্যালোচনা দেন। এতে সরকার অসম্ভব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী, পাতিমন্ত্রী এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা কোর্টের রায় এবং ব্যক্তিগতভাবে এস কে সিনহাকে ন্যক্কারজনক ভাষায় আক্রমণ করেন। তারা তার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের হুমকি দেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব নিয়মতান্ত্রিক ও বিচারিক পন্থা অবলম্বন না করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং অপকৌশলের আশ্রয় নেন। ক. তারা শক্তি প্রয়োগের হুমকি দেন, তাকে আর বিচারকের আসনে বসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করেন। খ. তার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের ১১টি অভিযোগ উত্থাপন করেন। গ. তার মতো সুস্থ ব্যক্তিকে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেন। ঘ. তাকে এক ধরনের গৃহবন্দী করেন। ঙ. অবশেষে তাকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করেন। চ. বিধি মোতাবেক তার স্বপদে ফিরে আসাকে ‘সুদূরপরাহত’ বলে মন্তব্য করেন। ছ. সিনহার অন্যায় অপকর্মের অভিযোগ আইনসম্মত উপায়ে প্রকাশ না করে অন্য বিচারকদের কাছে প্রমাণাদি উপস্থাপনের উদ্দেশ্য কী? জ. প্রেসিডেন্ট কি অধস্তন বিচারকদের প্রভাবিত করার জন্য বারবার বঙ্গভবনে ডেকে পাঠাতে পারেন? ঝ. এখন যখন জনাব সিনহার দেশে ফিরে আসার কথা তখন অ্যাটর্নি জেনারেল সদর্পে এটা কি বলতে পারেন যে, তার বিচারকের আসনে ফিরে আসা সুদূরপরাহত? ঞ. তাহলে এটা কি প্রমাণিত হলো না যে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কার্যব্যবস্থা তাদের পরিকল্পিত কৌশলের ফলাফল?

যেকোনো দেশের বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। ক্ষমতাসীন দল এই ঐতিহাসিক রায়কে অগ্রাহ্য করে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি যে অবজ্ঞা ও বৈরিতা দেখিয়েছেÑ তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। রায় প্রকাশ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে যেসব মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেসব অভিযোগ অনেক পুরনো। এটা যেকোনো বালকও বোঝে যে, তার নিয়োগের সময় এবং পরবর্তীকালে সরকারের আদেশ-নিষেধগুলো বিনাবাক্য ব্যয়ে পালন করেছেন, তখন এসব অভিযোগের খোঁজ নেয়া হয়নি। কিন্তু এখন যখন তিনি সরকারের বিপক্ষে রায় দিয়েছেন তখন তিনি হয়ে দাঁড়িয়েছেন মারাত্মক অপরাধী। তাহলে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় যে, মূল অপরাধী কারা?

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেন তা ছিল রীতিমত ঐতিহাসিক। শাসক দলের লৌহ কাঠামোর বাইরে এসে তারা এ রায় প্রদানে যে সততা ও সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা অনেক কাল ধরে মনে রাখার মতো। উল্লেখ্য, ওই রায়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, যারা এমিকাস কিউরি হিসেবে মামলা চলাকালীন মত দিয়েছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী এ কাজের জন্য তাকে পাকিস্তান আমলের অসম্ভব সৎ সাহসী বিচারপতি ইব্রাহিম ও কায়ানির সাথে তুলনা করেছেন। দেশের পত্রপত্রিকা এবং চ্যানেলগুলোর মতামত যদি সমন্বিত করা হয় তাহলে দেখা যাবে, ওই রায়ের পাল্লা অনেক ভারী। যারা সচেতন মানুষ তারা অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এটি গেল ওই রায়ের প্রতি জনমতের প্রতিফলন। আর যদি স্পিরিট বা চেতনা অর্থে রায়টিকে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে, রায়টি মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। যেভাবে সরকারের আর দুটো অঙ্গÑ আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সরকারের করতলগত হয়েছে, সেভাবে যদি উচ্চ আদালত রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাহলে তা জনগণের জন্য অসম্ভব অসহায়ত্ব নিয়ে আসবে। জাতীয় সংসদের অধীনে বিচারকদের স্থাপনই হলো ধনিক-বণিকদের স্বার্থে বিচারব্যবস্থার বলিদান। এজাতীয় সংসদ সম্পর্কে সবারই জানা অভিযোগÑ এ সংসদ অনির্বাচিত, অগ্রহণযোগ্য ও অস্বাভাবিক। অবশ্য আইন যখন করা হয় তখন তো আপাতত কোনো বিষয়কে সামনে রেখে করা হয় না। তারপরও অপ্রিয় সত্য এই যে, দীর্ঘকাল ধরে আমাদের জাতীয় সংসদ ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন’ ও ‘বাণিজ্যিকীকরণের’ অভিযোগে অভিযুক্ত। সুতরাং ‘কোটিপতিদের কাব’ যে তাদের স্বার্থসিদ্ধিতে বিচারকদের ব্যবহার করবে না তার নিশ্চয়তা কী? আরেকটি নির্মম সত্য হচ্ছে এই যেÑ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ রয়েছে। তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন-গুম ও হামলা-মামলায় দেশবাসী কঠিন দিন অতিক্রম করছে, সেখানে বিচার পাওয়ার সর্বশেষ দীপশিখাটি তাদের হাতে চলে গেলে মানুষ আশ্রয় পাবে কোথায়?

এ সরকার জনমতের তোয়াক্কা করে না বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন নেই তাদের, তবুও এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রবহমান জনমত এবং স্পিরিটকে অগ্রাহ্য করে তারা এটি রিভিউ বা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও তাদের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত অধিকার রয়েছে, তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এটি একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। সেখানেও পরিকল্পিত অপকৌশলের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে স্পষ্টত বাইরে রেখে কৌশলে তারা এই নভেম্বরের মধ্যেই রায়টি উল্টানোর পাকা বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। ইতোমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে পরামর্শ করেছেন। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউর বিষয়টি এখন সরকার, বিচারালয় ও জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সরকারের কৌশল আলোচনা করলে দেখা যায়, অন্য ছয়জন বিচারপতিকে চাপ প্রয়োগ করে তারা রায়টি বাতিল করতে চায়। এখানে একটি নৈতিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ইতঃপূর্বে ওই ছয়জন বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে একমত পোষণ করে সর্বসম্মতভাবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছিলেন। এখন তাদের পক্ষে অন্য রায় দেয়া প্রশ্নসাপেক্ষভাবে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ, দেওয়ানি কার্যবিধির ৪৭ ধারা এবং আপিল বিভাগের আদেশ ২৬ অনুযায়ী রিভিউ বা পর্যালোচনার মীমাংসা হয়ে থাকে। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘সংসদের যেকোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগ প্রণীত যেকোনো বিধিসাপেক্ষে আপিল বিভাগের ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা ওই বিভাগের রয়েছে।’ বেশির ভাগ পর্যালোচনামূলক রায়ে মূল রায়ের বিপরীত হয়নি। পর্যবেক্ষক মহল ভেবেছিলেন যে, সরকার মূল রায়ের চেয়ে ‘পর্যবেক্ষণ’-এর প্রতি বেশি নাখোশ। সমঝোতার একটি সূত্র হিসেবে এমনও বলা হচ্ছিল যে, সিনহা গং পর্যবেক্ষণ অংশ প্রত্যাহার করে নেবেন। এখন সরকার পরিবর্তিত অবস্থার সুযোগ নিতে যাচ্ছে। এতে করে ষোড়শ সংশোধনীর প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যাবে। তবে এ রায়ের ফলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কী হবেÑ তা স্পষ্ট নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে রায়টি অটোমেটিক কার্যকর হবে না, সংসদের অনুমোদন লাগবে। রায় ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘যতবার তারা বাতিল করবে ততবারই জাতীয় সংসদ নতুন করে তা অনুমোদন করবে।’ সেটা ছিল সরকারের একটি অজনপ্রিয় কপট সিদ্ধান্ত। এখন যে সিদ্ধান্ত আসছে, তাতে মনে হয় সরকার ষোলআনা লাভ করতে চাচ্ছে।

ইংরেজিতে একটা কথা আছেÑ ÔGrasp all, lost all’। সব সুবিধা নিতে গেলে সব সুবিধা হারানোরও ঝুঁকি আছে। ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলো আশায় বুক বেঁধেছিল। ওবায়দুল কাদের স্বীকারও করেছিলেন, আওয়ামী লীগ আবারো বিপদের মুখোমুখি হয়েছে। বিপদটা কী? সিনহা যে রায় দিয়েছিলেন তাতে সরকার খাদের কিনারে গিয়েছিল বৈকি? বিরোধী মহলে গুজব রটেছিল যে, সুবিধাজনক সময়ে সিনহা কাগজে এক খোঁচায় সরকারকে অবৈধ বলবেন। উল্লেখ্য, তিনি সরকারকে ওই রায়ে ‘অপরিপক্ব’ বলেছিলেন। তবে এরকম সম্ভাবনার কথা অনেকেই অবাস্তব বলেছেন। সরকার যেভাবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল-পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তাতে আসলেই সরকারকে অপরিপক্ব ভাবার কারণ রয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতের সম্মান, মর্যাদা ও শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সরকার সংযম ও দূরদৃষ্টি দিয়ে রণকৌশলটি পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করি।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/267307