১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:০৮

সময়ের কঠিন সত্য কিন্তু

হারুন-আর-রশিদ

গত ১৫ অক্টোবর সিইসি সময়ের একটি কঠিন সত্য কথা বলেছেন, তা হলো ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কথাটির ব্যাখ্যা দেন এভাবেÑ ব্যক্তি হিসেবে এবং দলের কাণ্ডারি হিসেবে কঠিন সময়ে জিয়াউর রহমান ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ৯ বছর বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছে একনাগাড়ে। পরে ১৯৯১ সালে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার নেতৃত্বে বিএনপি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছিল। বিএনপির সাথে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার হাত-পা বাঁধা; সীমিত শক্তি। এ দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাবো একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে। এ জন্য সব দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। এগুলো যদি তার অন্তরের কথা হয়ে থাকে তাহলে ধন্যবাদ জানাই, আর যদি লোক দেখানো হয়ে থাকে তবে কপটচারী মানুষ হিসেবে আমৃত্যু নিন্দা দৃষ্টিতে সবাই দেখবে। আমরাও অপেক্ষায় থাকব জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রকাশের শেষ দিন পর্যন্ত। সিইসি পদটি বড় মাপের একটি সাংবিধানিক পদ, যার সাথে জাতি ভাগ্য এবং চাওয়া-পাওয়ার একটি নিবিড় সংযোগ রয়েছে।

এবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লাস্ট মেসেজটা ছিল আমি সুস্থ আছি, তবে কেন যাচ্ছি, কবে ফিরছি, বলব না। রাত ১১টার পর ১৩ অক্টোবর ২০১৭ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফাইটে ওঠার আগ মুহূর্তে তার এ বক্তব্যে কী বিশেষ ইঙ্গিত দেয় সুপ্রিয় পাঠকসমাজ তার উত্তর খুঁজে নেবেন। এটা কোনো ড্রামার রিহার্সেল নয়, বাস্তব ঘটনা। এর পরের দিন দেখলাম, অভিযোগÑ তিনি প্রচুর অবৈধ সম্পদের মালিক, নষ্ট বা দূষিত চরিত্রের মানুষ। আসলে অপ্রিয় সত্য কথা বলায় এখন তদন্তের মুখোমুখি প্রধান বিচারপতি। ভোগান্তি মাত্র শুরু, এর শেষ কোথায় আল্লাহই ভালো জানেন। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। সমাজে প্রতিবাদী সাহসী সৎ মানুষের অভাব এতটা বেড়েছে, যা কল্পনারও অতীত। ইরানি চলচ্চিত্রে বাদশাহ এজিদের দরবারি আলেমদের কাঁধে উপবিষ্ট বানর নিয়ে মসজিদে গমন ও গানবাজনার আসরে উপস্থিতি দেখে ভাবলাম, বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম হবে কেন? ১৪০০ বছর আগে কুফা নগরীতে যা ঘটেছে, সেটা এখন বাংলাদেশে ঘটলে অপরাধটা বুঝি আর অপরাধ থাকে না। মোহাম্মদ বিন কাসেমের মতো ১৭ বছরের একজন ঈমানদার মানুষ তৈরি করতে পারিনি। ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজীর মতো একজন মানুষ তৈরি করতে পারিনি। এই দুই ব্যক্তি অল্প বয়সে যে তেজ ও সাহস দেখিয়েছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ খুশি ছিলেন বলে এ রকম দুঃসাহসী অভিযানে বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। রাজা দাহিরের মতো অত্যাচারী রাজার বাহিনীকে ১৭ বছরের কিশোর কিভাবে কুপোকাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা ভাবলে নড়েচড়ে বসতে হয়। ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবিজয় করেছিলেন বখতিয়ার খিলজী। এসব ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আজকের প্রজন্ম যদি ইতিহাস জানে তাহলে আমাদের এই উল্টাপাল্টা কর্মকাণ্ড ধোপে টিকবে না। অতীত ইতিহাস মুছে ফেলে মনগড়া ইতিহাস রচনা করলে, তা জাতির ভিত্তিকে দুর্বল করে দেবে। এটা পরাশক্তি যারা ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে চায় না, তাদেরই কাম্য। হাল জামানায় যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তারা হাটবাজারের ইজারাদারের মতো মসজিদ মাদরাসার সব উচ্চপদে আসীন হচ্ছেন এবং সুকৌশলে দলীয় মতবাদ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামে আকিদাগত জ্ঞান নেই, নবী সা:-এর সুন্নত চেহারায় নেই, আমলেও নেই তাদের। মসজিদে দুনিয়াবি আলাপ-আলোচনা যেন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব কারণে ইসলাম রুহানি শক্তি পাচ্ছে না। ফলে বিজাতীয় শক্তির আগ্রাসনের কবলে গোটা মুসলিম বিশ্ব। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের ছোট এই দেশটি পরিচালনার জন্য প্রয়োজন মাত্র কয়েকজন সৎ মানুষ; কিন্তু দেশে অসৎ চরিত্রের মানুষের দাপট এত বেশি, সৎ ব্যক্তিদের পালিয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প নেই। বর্তমানে মিথ্যা একটি বড় ধরনের শিল্প। উৎপাদন প্রতিদিন লাখ লাখ টন। মিথ্যা বলার প্রবণতা এত বেশি যা সত্যকে ঢেকে ফেলেছে। যেখানেই যান টাকা আয়-রোজগার এসব বৈষয়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা। মেয়ের জামাই কত টাকা মাসিক ইনকাম করে, কয়টা বাড়ি ও গাড়ি আছে এসব আলাপ মসজিদেও হতে দেখেছি। উপাসনালয়ের চাকচিক্য বেড়েছে বটে, ঈমানের গভীরতা বাড়েনি। ঘাটতি ঈমানের। যে ঘাটতি ছিল না মোহাম্মদ বিন কাশিমের মধ্যে। ছিল না বঙ্গবিজয়ী বখতিয়ার খিলজীর মধ্যে, ছিল না দামেস্ক বিজয়ী খালেদ বিন ওয়ালিদের।

কিছু দিন আগে সূরা রুম পড়ছিলামÑ প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করি। কুরআন না পড়লে মনে হয় পুরো দেহটাই যেন মরুভূমি। দেহটাকে বারিসিক্ত করার জন্য কুরআন পড়া আবশ্যক এবং বুঝে-শুনে পড়লে এর মজাই আলাদা।
রোম ও পারস্যের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হচ্ছিল। রোমবাসী আহলে কিতাব হওয়ায় মুমিনরা রোমের বিজয় কামনা করত। আর মুশরিকরা কামনা করত পারস্যের বিজয়। রোমবাসী পরাজিত হলে মুশরিকরা সানন্দ্যচিত্তে মুমিনদের সাথে ঠাট্টা-মশকারা করতে লাগল। পরে রোমের বিজয়ের কথা আল্লাহ তখন বলে দিলেন। দ্বিতীয় হিজরিতে রোমের যেমন বিজয় হয়, তেমনি মুমিনরাও বদর প্রান্তে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবা নিয়ে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন।
লেখক : গ্রন্থকার, কলামিস্ট
Email: harunrashidar@gmail.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/267308