১০ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১১:০২

বিনামূল্যে পাঠ্যবই

নিম্নমানের সাড়ে ৫০০ টন কাগজ বাতিল

বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজ ছাপানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫৫০ টন কাগজ বাতিল করেছে পরিদর্শক দল। একই সঙ্গে নিম্নমানের কাগজে ছাপা হওয়া প্রচুর বইও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বাতিল হয়েছে ৪০৮ টন কাগজ। তবে প্রাথমিকের বই নিয়ে এবার সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে নবম-দশম শ্রেণির সুখপাঠ্য বই নিয়ে বেকায়দায় আছে এনসিটিবি।

এই বইয়ের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে তদন্ত দলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং পরিদর্শন দল কন্টিনেন্টাল বিডির কড়া নজরদারির কারণে প্রাথমিকের বই নিম্নমানের কাগজে ছাপাতে পারেনি মুদ্রণকারীরা। বড় বড় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিল। কাগজের ব্যাপারে কোনো আপস করেনি পরিদর্শক দল। এছাড়া প্রথম দিকেই নিম্নমানের কাগজের ছাড়পত্র না দেয়ায় বইয়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। নিম্নমানের কাগজ প্রেসে নেয়ার পর প্রায় দেড়শ’ টন কাগজ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছাপা হওয়ার পর প্রচুর বই কেটে ফেলা হয়েছে। গত ৭ই নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কাছে জমা দেয়া প্রাথমিকের বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপায় নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করায় বলাকা প্রিন্টার্সের ১১০টন, লেটার অ্যান্ড কালারে ১৪০ টন. লেখন আট প্রেস ৫০ টন, এস আর প্রিন্টার্সে ৬০ টন, প্রিয়াংকা ৫০ টন, জুপিটারে ও সীমান্ত দুটি প্রিন্টার্সের আলাদা ১০০ টন, সাগরিকা ১৯০ টন, পিএ প্রিন্টার্স ২০ টন, পেপার প্রেসেস ৪৯০ টন কাগজ বাতিল করা হয়। এসব কাগজের গায়ে লাল কালি দিয়ে বাতিলের সিল দেয়া হয়। প্রাথমিকের ১০ কোটি ৩৬ লাখ বইয়ের মধ্যে ৭ কোটি ৮০ লাখের ৪০ হাজারের বেশি বই প্রিন্ট হয়েছে, যা মোট বইয়ের ৭৫ শতাংশের বেশি। আর ৬ কোটি ৪৮ লাখের বেশি বইয়ের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, যা মোট বইয়ের ৬৩ শতাংশ। ৫০৮টি উপজেলার মধ্যে ৪২৫টি উপজেলায় বই পৌঁছেছে। ৯৮টি লটের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি বইয়ের কাজ করা ৩২টি প্রতিষ্ঠানের ইতিমধ্যে জুপিটার, সরকার প্রেস, ভাই ভাই প্রেস, শ্যাডো প্রিন্টার্স, লেটার অ্যান্ড কালার, পেপার প্রসেস, মমতাজ প্রিন্টার্স এবং মানামা প্রিন্টার্স শতভাগ কাজ শেষ করেছে। নভেম্বরের শেষে দিকে প্রাথমিকের বই ৯০ ভাগ প্রিন্টার্স শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে প্রাথমিকের বই মনিটরিং করা কন্টিনেন্টাল বিডি প্রকল্পের পরিচালক শেখ বেলাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই নিম্নমানের কাগজের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে ছিলাম। প্রথমদিকেই কাগজ ছাড়পত্রে কঠোরতায় এবার প্রাথমিকে মানসম্মত কাগজে বই ছাপা হয়েছে। শুধু মানসম্মত নয়, এবার প্রাথমিকের বই যথাসময়ের আগেই উপজেলায় পৌঁছানোর সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তিনি বলেন, আমি নিজেই রাত ১১-১২টা পর্যন্ত প্রেস মনিটরিং করছি। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দু’জন তিনজন লোক সার্বক্ষণিক বসিয়ে রেখেছি। প্রাথমিক পর্যায়ের বই নিম্নমানের কাগজ দিয়ে ছাপানোর কোনো সুযোগ ছিল না বলে জানান তিনি।

এদিকে মাধ্যমিকের সুখপাঠ্য বই নিয়ে জটিলতার এখনও কাটেনি। চলতি সপ্তাহ ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০২ লটের প্রায় পৌনে দুই কোটি বইয়ে কাজ দেয়ার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৯শে নভেম্বর কাজ বুঝে নিবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার পর এসব কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ দিন সময় দিতে হবে। এরপর জরিমানা দিয়ে আরো ২৮ দিন পর্যন্ত তারা বই ছাপাতে পারবে। অর্থাৎ ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার ৫৫ দিন শেষ হবে জানুয়ারি ১৬ তারিখ। এ বছর সুখপাঠ্যের বই নিয়ে ১লা জানুয়ারি বই উৎসব করা সম্ভব এটা এনসিটিবি ধরে নিয়েছে। তবে মাধ্যমিকে অন্যান্য বই প্রিন্টার্সে অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যে ইনফেকশন টিম বাল্টিক বিডি প্রায় ৩০০ টনের বেশি কাগজ বাতিল করেছে। আর সুখপাঠ্যের কাজ পাওয়ার ১২টি প্রতিষ্ঠানের স্যাম্পল হিসেবে দেয়া কাগজ থেকে ১০৮ টন কাগজ বাতিল হয়েছে।
মাধ্যমিকের পরিদর্শন এজেন্ট বালটিক বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আর কাইয়ুম মানবজমিনকে বলেন, নিম্নমানের কাগজ দেয়ায় ৩০০ টনের বেশি কাগজ বাতিল করেছি। এছাড়া সুখপাঠ্যে ১০৮ টন কাগজ বাতিল হয়েছে। তার দাবি, মাধ্যমিকে নিম্নমানের কাগজে কোনো বই ছাপা হয়নি। সুখপাঠ্য ছাড়া মাধ্যমিকের অন্যান্য বই সময়মতো পৌঁছে যাবে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগের বেশি বই ছাপা শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, মাধ্যমিকের সুখপাঠ্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরিতে দেরি হওয়ায় দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব হয়েছে। গত সপ্তাহে কিছু প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। সুখপাঠ্যের জন্য ১৮টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক বই ছাপার কাজ তদারকি করছেন। তাদের সহযোগিতা করতে মন্ত্রণায় ও এনসিটিবির একট উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং টিম কাজ করছে। এবার সব বই ব্লু বাইন্ডিং হওয়ায় পানিতে ভিজলেও সহজে নষ্ট হবে না। এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রাথমিকের বই নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। বইয়ের মানসহ সময়মতো বই দেয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। মাধ্যমিক স্তরের বই যথাসময় পৌঁছে যাবে। সুখপাঠ্য বই নিয়ে একটু জটিলতা ছিল, এটাও থাকবে না বলে জানান তিনি।

 

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=91245