১০ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫০

বাজারে স্বস্তি ফিরছে না

বাজারে শীতের সবজি আসা শুরু হলেও কমেনি দাম। বরং বিভিন্ন অজুহাতে একটার পর একটা সবজির দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়
জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ছে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো ধরনের সবজি নেই, এক মাসের ব্যবধানে পিয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ বেড়েছে কয়েক গুণ। চালের দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো অনেক বেশি।
এ অবস্থায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে প্রতিদিনের বাজার তালিকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি নতুন আলু ১০০ টাকা, শিম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, আর গাজর ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এই চিত্র দেখা গেছে।

বাজারে এক আঁটি কচুশাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। কাঠকচুর পিস এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর কচুর ছড়া কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ঝিঙা, চিঁচিঙ্গা, ধুন্দুল, কাকরোল প্রভৃতি সবজির পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
অন্যান্য সবজির মধ্যে বেগুন কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৬৫ টাকা আর শশা, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিঁচিঙ্গা, করলা, কাকরোল ও কচুরমুখী-এ কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা দরে। এছাড়া ছোট আকারের ফুলকপি প্রতিপিস ২০-২৫ টাকায়, বাঁধাকপি পিস ২৫-৩০ টাকা, লাউ ৪০-৫০ টাকা, লেবুপ্রতি হালি ২০-৪০ টাকা। পালংশাক ও লালশাক ২০ টাকা আর পুঁইশাক ও লাউশাকের আঁটি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এপ্রিল মাসের শুরু দিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসে একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিদরে। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। ৩০-৩২ শতাংশ দাম বেড়েছে ছয় মাসের ব্যবধানে। এপ্রিল মাসে খুচরা বাজারে ২৪-৩০ টাকা দরে দেশি পিয়াজ বিক্রি হলেও ছয় মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ভারতীয় পিয়াজ বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে পিয়াজের দাম ১৬৩ শতাংশ, আদা ৫২ শতাংশ, খোলা সাদা আটা ৯ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ শতাংশ, মুগ ডাল ২৮ শতাংশ, খাসির মাংস ২৬ শতাংশ, গরুর মাংস ১৭ শতাংশ ও ইলিশ মাছের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে। চালের দাম কমার কথা বলা হলেও সংস্থাটির হিসেবে এখনো তা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসেবে উল্লেখযোগ্য নিত্যপণ্যের মধ্যে বর্তমানে মোটা চাল ৪২-৪৬ টাকা, সরু চাল ৬০-৬৫ টাকা, আটা ২৮-৩৪ টাকা, ময়দা ৩৪-৪৪ টাকা, ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১০৪-১০৯ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০০-১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাস্তবে বাজারে অধিকাংশ পণ্যই এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে সরবরাহ কম। আগের তুলনায় পরিবহন ভাড়া বেশি। তাই সবজির দাম বাড়তি। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। সেসময় অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তায় জাগায় জাগায় চাঁদা দেয়া। এসব কারণেই বাড়ে।

কাওরানবাজারের মুদি দোকানদার সোহেল বলেন, আড়ৎ থেকে পিয়াজ কিনে আনি। সেখানে দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পিয়াজে ১৮ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ফলে দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=91228