৯ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪

নর্থ সাউথের শিক্ষক নিখোঁজ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবার বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তিনি। তারপর আর বাসায় ফিরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গভীররাতে এ বিষয়ে খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়রি করেন তার পিতা। সাধারণ ডায়রিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭ই নভেম্বর সকাল ৭টায় তার কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বারিধারার উদ্দেশে বের হয়ে বাসায় ফিরেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

নিখোঁজের ঘটনায় পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। খিলগাঁও থানায় করা সাধারণ ডায়রির সূত্র ধরে পুলিশ, র্যা ব ও গোয়েন্দাদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। নিখোঁজ শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার (৩৫) দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহের হোসেনের একমাত্র ছেলে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান ছিলো রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায়। সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে ওই এলাকার রোকেয়া সরণির লায়ন ভবন এলাকায়। সকাল ৭টা ১৩ মিনিটে মুবাশ্বার হাসান সিজারের অবস্থান ছিল দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার বাসায়। তারপর রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিল তার ফোনের অবস্থান। গতকাল বিকালে দক্ষিণ বনশ্রীর ওই বাড়িতে গেলে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সিজার নিখোঁজের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন জানান, প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার বাসা থেকে বের হন তিনি। বিকাল ৪টায় সিজারের সঙ্গে কথা হয় মোতাহের হোসেনের। তিনি জানতে চেয়েছিলেন বাসায় কখন ফিরবে। জবাবে সিজার জানান, একটু কাজ আছে। কাজ শেষ করেই বাসায় ফিরবো। তারপর কেটে যায় অনেক সময়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবার ফোনে কল দিলে সিজারের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তারপর থেকে উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটছিল তাদের। বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়েও সিজারের সন্ধান মেলেনি। মোতাহের হোসেন বলেন, আমার ছেলে শিক্ষকতা করে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে। সে কখনও রাজনীতি করেনি। জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেন তিনি। মোতাহের হোসেন জানান, তার ছেলে ছোটবেলায় নামাজ পড়লেও বড় হয়ে নামাজ পড়তো না। ধর্ম-কর্ম থেকে অনেকটা দূরে ছিল। তবে তার ছেলেকে কেউ হয়তো অপহরণ করেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এমনি এমনিতো আর নিখোঁজ হয়নি। তবে কারা কেন করেছে এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন সিজারের পিতা।

সিজারের ছোট বোন তামান্না তাসনিম বলেন, আমার ভাই পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে জড়িত ছিল না। তবে পারিবারিক বিষয়ে জানতে চাইলে এসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।
সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে বিষণ্নতায় ছিলেন সিজার। এক সন্তান জন্মের পর বিচ্ছেদ ঘটে স্ত্রীর সঙ্গে। পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশু সন্তানকে নিয়ে হাজারীবাগে থাকেন তার প্রাক্তন স্ত্রী। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বাসাতেই বেশির ভাগ সময় কাটতো তার। তবে সমপ্রতি জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। সিজারের নিখোঁজের বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। পারিবারিক সমস্যা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না তা গুরুত্বসহকারে দেখছে পুলিশ। শিগগিরই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

গত কয়েক দিন যাবৎ তার গাড়িটি নষ্ট ছিল। মঙ্গলবার কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তার বোন তামান্না জানান, উবার অথবা সিএনজি অটোরিকশা হবে। আমরা দেখিনি। মুবাশ্বার হাসান সিজার দক্ষিণ বনশ্রীর বাসার আশপাশের লোকদের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাদের প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ২৮ বছর যাবৎ ওই এলাকায় রয়েছেন। সিজারের বাবার সঙ্গে তার প্রায়ই কথা হয়। কিন্তু ছেলে সিজারকে কখনও সেভাবে দেখেননি। যদিও ১৩ বছর যাবৎ ওই এলাকায় বসবাস করছেন সিজার ও তার পরিবারের সদস্যরা। তার পিতা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা অবসরপ্রাপ্ত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। এই দম্পতির দুই সন্তান সিজার ও তামান্না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন করেছেন মুবাশ্বার হাসান সিজার। বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের ডান্ডি ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। পরে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রিফত ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন।

একই এলাকায় সহোদর নিখোঁজ: একই এলাকায় নিখোঁজ হয়েছে প্রকৌশলী দুই ভাই। দক্ষিণ বনশ্রীর এইচ ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৬৭/এ নম্বর বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে বের হয়ে যান সহোদর আসাদুজ্জামান ও ফয়সাল রহমান। বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুইটি বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। পরে রাতে আসাদুজ্জামানের স্ত্রী তানজিনা সাঈদ খিলগাঁ থানায় উপস্থিত হয়ে একটি জিডি করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান নকিয়া-সিমেন্স প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রকৌশলী। এক সময় তিনি অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছিলেন। পরে ঢাকায় এসে ট্রাভেল এজেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তার ছোট ভাই ফয়সালও একজন প্রকৌশলী। দুই ভাই একত্রে ট্রাভেল এজেন্টের ব্যবসা করতেন। তাদের বাবার নাম মৃত আব্দুর রশিদ মুন্সী। খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, সহোদর নিখোঁজের ব্যাপারে জিডি হয়েছে। তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, ২২ আগস্ট ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন বিমানবন্দর সড়ক থেকে অপহৃত হন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাদাত আহমেদ (৪৫)। ২৭ আগস্ট বেলারুশের অনারারি কনস্যুলার ও ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে গুলশানের ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে যায়। একই দিন সাভারের আমিনবাজারের বাসা থেকে বের হয়ে ফিরে আসেননি কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ধানমন্ডির স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে কানাডার মনিট্রলের ম্যাগসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ ফাহিম নিখোঁজ হন। তারা এখনও উদ্ধার হননি।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=91169