৯ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১২

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতা কাটছে না

রেমিট্যান্সের প্রধান বাজার সৌদি আরবে অস্থিতিশীলতা ; বাড়ছে চালসহ ভোগ্যপণ্য আমদানি

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতা সহসাই কাটছে না। চালসহ ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়ে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিমাণ চাল আমদানির জন্য এলসি (আমদানি ঋণপত্র স্থাপন) খোলা হয়েছিল তার দায় এখনো পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। এরই মধ্যে পিঁয়াজ সঙ্কটের কারণে পিঁয়াজের আমদানি বাড়ছে। এতে সামগ্রিক দায় বেড়ে চলছে। কিন্তু সরবরাহের দিকে তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বিশেষ করে দেশের প্রবাস আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রধান বাজার সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে। তাই কাক্সিত হারে রফতানি আয় না বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহের ঘাটতি থেকেই যাবে। আর এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের চলমান অস্থিতিশীলতা সহসাই কাটবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮০ টাকা ৯৫ পয়সা। কিন্তু গতকাল ব্যাংকগুলো থেকে প্রতি ডলার পেতে আমদানিকারকদের ৮৩ টাকার ওপরে ব্যয় করতে হয়েছে। অর্থাৎ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সাথে ডলারের প্রকৃত মূল্য ২ টাকার ওপরে উঠে গেছে। অথচ তা এক টাকার ওপরে পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ডেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকই তা মানছে না। বিশেষ করে বিদেশী ব্যাংকগুলো ডলার ছাড়ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের যে অস্থিতিশীলতা ছিল তা থেকেই যাচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, যাদের কাছে ডলার আছে ওই সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরও ডলার ছাড়ছে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তঃব্যাক রেট কেউ মানছে না। তাদের বেশি দরেই ডলার কিনতে হচ্ছে এবং বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল তিনি ৮৩ টাকা ৫ পয়সা দরে ডলার কিনে ৮৩ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ডলার সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কিন্তু দায় বেড়ে যাচ্ছে আগের হারেই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে পিঁয়াজের বাজার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেশি মূল্যে পিঁয়াজের এলসি খোলা হচ্ছে। আবার চাল আমদানির জন্য যে পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছিল তার দায় পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। এখনো অনেক ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে হবে। সুতরাং বাজারে ডলারের বাড়তি চাহিদা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সরবাহের পরিস্থিতি তেমন উন্নতি হয়নি। বরং সামনে আরো কমে যেতে পারে। কারণ, দেশের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩০ শতাংশই আসে সৌদি আরব থেকে। কিন্তু সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহের বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। অপর দিকে রফতানি আয় বাড়ছে না। বরং কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় হয়েছিল প্রায় ২২৬ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা কমে হয়েছে ২০১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সামনে রফতানি আয়ের পরিস্থিতিও খুব বেশি উন্নতি হবে না বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ের খাত বাড়লেও আয়ের খাত কাক্সিত হারে বাড়ছে না। এতে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট কাটছে না, বরং এ সঙ্কট আরো বেড়ে যেতে পারে। পরিস্থিত উন্নতি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও তহবিল ব্যবস্থাপকদের সাথে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে করপোরেট লেনদেনে সতর্ক হতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরো বলা হয়, কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখা (অথরাইজড ডিলার) বন্ধ করে দেয়া হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/266801