৯ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১১

আ’লীগ সমর্থিত নীল দলের শিক্ষকদের বিবাদ চরমে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে আগে নীল দলের সদস্যদের মধ্যে বাগি¦তণ্ডার ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় শিক্ষকদের দুইপক্ষের মধ্যে মারামারির নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে নীল দলের দু’টি অংশই। এর মাধ্যমে নীল দলের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনাকে লজ্জাকর মন্তব্য করে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠিত নীল দলের পূর্বঘোষিত সাধারণ সভায় শিক্ষকদের দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ করতে হয়েছে সভা। লজ্জাজনক এ ঘটনার পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে নীল দলের দুই অংশই।
নীল দলের ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনকে মারধর করেছেন এমন অভিযোগে প্রক্টরের অপসারণ দাবিতে গত ৫ নভেম্বর মানববন্ধন করে নীল দলের একটি অংশ। পরদিন পাল্টা মানববন্ধন করেছে অন্যপক্ষ। উভয়পক্ষের অভিযোগ অন্যপক্ষের হাতে তারা মারধরের শিকার হয়েছেন।
নীল দলের এ বিভক্তি সাম্প্রতিক এসব ঘটনার ফল নয়, বরং আগের কিছু ঘটনার জের ধরেই এ বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে সিনেটে ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নীল দলে বিভাজনের সূত্রপাত ঘটে। তখন থেকে নীল দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপ সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের অনুসারী, অন্যটি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের অনুসারী। নীল দলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এ বিভেদের সূচনা।
২০১৫ সালের এপ্রিলে অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনকে আহ্বায়ক করে এক বছরের জন্য নীল দলের কমিটি করা হয়। মূলত ভিসিপন্থীদের নিয়েই এ কমিটি করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও তারা পদ ছাড়েননি। নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে কয়েক দফা আশ্বাস দিলেও তা কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তখনকার ভিসির মদদেই এ কমিটি গড়িমসি করছে এমন অভিযোগ ছিল ভিসিবিরোধী অংশের। এ থেকে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এরপর চলতি বছরের মে মাসে ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট সিনেটে ৩৫ জন শিক প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে নীল দলের বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে। ফলে নীল দলের দু’টি অংশ সিনেট নির্বাচনে দু’টি প্যানেল জমা দেয়।

১১ মে ভিসি লাউঞ্জে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে প্যানেল জমা দেয়ার কথা। কিন্তু দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর প্রার্থী তালিকা সিলগালা করে নিয়ে আসেন। এ সময় উপস্থিত অন্য শিকেরা প্রার্থী তালিকা দেখতে চান। কিন্তু ড. নাজমা শাহীন তা দেখাননি। এতে নীল দলের ভিসিবিরোধী অংশের সন্দেহ হয়, সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের বাইরে নতুন নাম সেখানে যোগ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেেিত শিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে সিনিয়র শিকদের বড় একটি অংশের সমন্বয়ে ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন। তখন থেকে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে নীল দল। এই বিবাদ মিটাতে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপও করতে হয়েছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমাজ ও বিশিষ্টজনরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জিত ও ুব্ধ। লজ্জিত এ জন্য যে, এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। ুব্ধ এ কারণে যে, এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে মামুলি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষকরা যে মারামারিতে অংশ নিচ্ছেন তা খুবই লজ্জাজনক। এর আগে সিনেটের অধিবেশন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পেটালেন তারা। এটা নিন্দিত, গর্হিত ও ঘৃণ্য কাজ। এসব বিষয়ে এখনো প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ুণœ হচ্ছে।
নীল দলের শিক্ষকদের বিবাদের বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ বলেন, আমার দেখার কিছু নেই। ভিসির কাছে জিজ্ঞেস করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করে। এখানে অনেকের অনেক ধরনের মন্তব্য থাকে। তারা সেভাবেই তাদের মত প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের অনাকাক্সিত ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সত্যি দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। তবে দ্রুতই তা ঠিক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/266783