৮ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৫

বার্মার চোরাবালির ফাঁদে বাংলাদেশ

সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়, বিশেষ করে যখন কোনো সংকট ঘনিয়ে আসে দৃশ্যত তখন কালক্ষেপণের প্রবণতা দেখা যায়
বাংলাদেশের সরকারগুলোর মধ্যে। এমন প্রবণতা চলছে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর পর থেকে। এরপর সত্যিকারভাবে সামষ্টিক অর্থে, যখন তারা দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেন, যা ততক্ষণে তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে অথবা সরল অর্থে বলা যায় সিদ্ধান্তটি ভুল। স্থায়ী কৌশল বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণে তারা নিয়মিতভাবে এবং মাঝে মাঝেই ইচ্ছাকৃতভাবে কৌশলে এড়িয়ে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা বিদ্যমান, হোক সেটা সাধারণ একটি কালভার্ট নির্মাণ অথবা পররাষ্ট্র বিষয়ক জটিল কোনো পলিসি প্রণয়ন।

এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢলের মতো প্রবেশ মোকাবিলা করতে লড়াই করছে বাংলাদেশ।
যদিও সরকারিভাবে শরণার্থীর মর্যাদার বিষয়টি এখানে অনেকটা অস্পষ্ট। ২৫শে আগস্টের আগে থেকেই এই রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিদ্যমান। এখন বিশ্ব শুধু দেখতে পাচ্ছে এর সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটাকে। বাংলাদেশের জন্য এ সমস্যা শুরু হয়েছে ১৯৭৮ সালে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বার্মার জন্য এ সমস্যা শুরু হয়েছিল বিগত সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে। আর অবস্থার অবনতি হয়ে খারাপ অবস্থায় যায় ১৯৪০ সালের পর। এ সমস্যা একবারে অথবা একেবারে সমাধানের পরিবর্তে দশকের পর দশক একে জিইয়ে রাখে বার্মিজরা। ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী বার্মা ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের খুব ঘনিষ্ঠ। তারাই অব্যাহতভাবে এর পরিণতি ভোগ করছে। এই সমস্যা কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে তার যথাযথ পরিকল্পনা অথবা কৌশল কখনোই ছিল না বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর কাছে। উপরন্তু, কালক্ষেপণ না করে ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতার যে ঘাটতি আছে তা দিনকে দিন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে, অব্যাহত গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বার্মা। এতে তাদের চলার পথে অধিক থেকে অধিকতর গতি পাচ্ছে। তাদের অপকর্মের বিষয়ে রয়েছে একটি অ্যাকশন প্লান, যা হলো এক রকম পাগলামো ও শঠতায় পরিপূর্ণ।
অন্যদিকে, এই পথে প্রতিটি পদক্ষেপের সামাল দিতে হাতড়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। বার্মার এসব অপকৌশল কিভাবে কাজ করে ও তার পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার- তা তুলে ধরাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
বার্মা সরকার বাস্তুচ্যুতকরণ ও নিজেদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদের অংশ হিসেবে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ওই সময় দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এ সমস্যা সমাধানের কথা বলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কূটনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানে কোনোই কর্ণপাত করে নি বার্মা। যাহোক, চীনের মধ্যস্থতায় ও বাংলাদেশ সরকারের পাল্টা “বিশেষ ব্যবস্থা” নেয়ায় সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয় তারা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে ১৯৭৮ সালের ৯ই জুলাই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও বার্মা। ওই চুক্তিতে বলা হয়, ‘সোশালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃত অথবা তাদের পক্ষে সমঝোতায় অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা ১৯৭৮ সালের ৭ থেকে ৯ই জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় নিচের বিষয়গুলোতে একমত হয়েছেন,’...‘বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরগুলোতে অবস্থানরত বার্মার আইনগত অধিবাসীদের দ্রুততার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে সোশালিস্ট রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব বার্মা সরকার। তবে ওইসব ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের সদস্যদেরসহ প্রদর্শন করতে হবে বার্মিজ ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ...’।
এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, বার্মা সরকার রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করেছে আইনগত বৈধ নাগরিক হিসেবে। এই চুক্তির অধীনে বার্মা সরকার প্রায় সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বাধ্য হয়। এর কিছু সময় পরই, ১৯৮২ সালে, যন্ত্রণাদায়ক ওই স্মৃতি ভেতরে পুষে বার্মা সরকার রোহিঙ্গাদের (বিশেষ করে মুসলিমদের) নাগরিকত্ব বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনে। নতুন ওই অদ্ভুত আইনানুসারে রোহিঙ্গাদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৮২ সালের আগে রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা সব প্রাসঙ্গিক নথিপত্র ও পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়া হয়। এরপর, গোলাপি, নীল ও সবুজ রঙের নতুন তিন ধরনের পরিচয়পত্র প্রবর্তন করা হয়। যারা রাখাইনে কমপক্ষে পাঁচ প্রজন্ম ধরে বাস করছে শুধুমাত্র তারাই পূর্ণ নাগরিকত্ব পায়। ধরা হয়, ১৮২৩ সাল হচ্ছে রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উচ্চতায় উঠে আসার সময়। ওই বছর থেকেই তাদের উত্থানের শুরু। ১৮২৩ এর পর থেকে যারা রাখাইনে বাস করা শুরু করেছেন তারা সবাই সহযোগী নাগরিকত্ব লাভ করেছে। যারা ১৯৪৮ এর আগে পূর্ণ বা সহযোগী নাগরিকত্ব কোনটাই পায়নি তাদেরকে দেশ্যভূত নাগরিক (ন্যাচারালাইজ সিটিজেন) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দেশ্যভূত নাগরিকরাই হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিম- যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। নাগরিকত্ব বিষয়ক নতুন এই আইনটি রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি থেকে বের করে দেয়ার জন্য বার্মা সরকারের একটি সুনিশ্চিত পরিকল্পনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

১৯৯১-৯২ সালে বার্মা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর আরেক দফা অত্যাচার চালায়। এইবার দুই লাখ রোহিঙ্গা অত্যাচার থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের আগমন দেখে বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। বার্মার পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় সেই আহ্বানে সাড়া দেয়। ১৯৯২ সালের ২৩-২৮শে এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয় উভয়পক্ষ। ওই বৈঠকে একটি বিবৃতিতে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে, ওই বিবৃতিকে একটি চুক্তি হিসেবেই ধরা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের চুক্তির সঙ্গে এই চুক্তি বেশ কিছু জায়গায় ভিন্নতা ছিল। প্রথমত, বার্মা এই চুক্তিতে দুটি প্রধান ‘কী-ওয়ার্ড’ (গুরুত্বপূর্ণ শব্দ) যোগ করে- একটি হচ্ছে, বার্মার বৈধ নাগরিক ও অপরটি হচ্ছে বর্মী সমাজের সদস্য। তখন কেন এই শব্দ দুটি যোগ করা হয়েছিল তা আজকে বেশ সপষ্ট। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তনটি ছিল তা হচ্ছে, ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতিতে বার্মা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে যে, তারা সঠিক নথিপত্র ছাড়া কাউকে ফেরত নেবে না। তৃতীয়ত, যারা বার্মায় স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায় না- তাদেরকে জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই তিনটি প্রধান পরিবর্তন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অক্ষমতাকে প্রকাশ করে। নীতিমালা প্রণয়নকারীদের বাংলাদেশ পক্ষ এই সময় এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, কেন বার্মা ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব বিষয়ক আইনে পরিবর্তন এনেছিল ও ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতিতে নতুন নতুন সব শব্দ ও শর্ত কেন যোগ করেছিল। এর সবই আজকেই সমস্যার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক।
বর্তমানে মিয়ানমার হিসেবে পরিচিত বার্মার কর্তৃত্ব এখনো ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতি ও পরবর্তীকালে এর উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত চুক্তির দিকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশকে অবশ্যই বুঝতে হবে তারা কেন বারবার ১৯৯২ সাল নিয়ে আলোচনা করে এবং এখানে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব বিষয়ক আইনে এর গুরুত্ব কতটুকু। শুধুমাত্র বৈধ নাগরিকদের ফেরত নেয়া নিয়ে বার্মার যেই ধূর্ত পরিকল্পনা রয়েছে তা পুরোপুরি বুঝতে হবে বাংলাদেশকে, নয়তো রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই বাংলাদেশকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

২৫শে আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের সামপ্রতিক ঢলের শুরু হওয়ার পর থেকে, বারবার ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতির কথা ঘুরেফিরে আসছে। এমনকি একসময় বাংলাদেশও উল্লেখ করেছে যে, মিয়ানমারকে অবশ্যই ১৯৯২ এর যৌথ বিবৃতি ও পরের চুক্তি অনুসারে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। বোধ করি অনেককেই বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করতে হয়, বাংলাদেশের ‘কীর্তিমান’ সব নীতিপ্রণয়নকারীরা যখন এমন দাবি করছিলেন, তখন তারা আদতে কি বুঝতে পারছিলেন যে, তারা কি বলছেন? শেষমেশ অবশ্য তারা বুঝেছেন, তবে এতদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে।
সমপ্রতি বার্মার স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির অফিসের এক মন্ত্রী তিন দিনের ঢাকা সফর করেন। ওই বর্মী প্রতিনিধির সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন, তারা ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতি মেনে নিয়ে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত। ঠিক এর পরদিন, ৪ঠা অক্টোবর, বার্মার স্টেট কাউন্সেলরের অফিস বলেছে যে, ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতি অনুসারে বৈধ নাগরিকরা মিয়ানমারে ফিরে আসতে পারবে। আর মিয়ানমার খুশি হয়েই তাদের পুনর্বাসন করবে।

ফাঁদটি এখানেই। যদি এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, নয় লাখের মধ্যে মাত্র ১৪ থেকে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে। চূড়ান্তভাবে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ৯ই অক্টোবর বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক সভার আয়োজন করে। এমন কি বার্মার পরিকল্পনা বা তাদের ১৯৮২ সালের নাগরিক আইন সম্পর্কে বাংলাদেশি নীতিনির্ধারকদের সঠিক ধারণা ছিল কিনা এ ব্যাপারে সেখানের কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে থাকতে পারেন।

৯ই অক্টোবরের সভায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার অবস্থান পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন। তিনি দাবি করেন, মিয়ানমারের বৈধ নাগরিকত্বের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কাজে আসবে না। এটি রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেয়ার জন্য মিয়ানমারের একটি কৌশল মাত্র। তারা কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন না করার জন্যই এমনটি করছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশ এই বিষয়টি কেন আগেই বোঝেনি বা এমন ‘হোমওয়ার্কও তাদের ছিল না। কেন বাংলাদেশ এই ইস্যুতে গভীর অনুসন্ধান করে নি। সর্বাগ্রে তারা কিসের ওপর ও ভিত্তিতে একমত হয়েছে বলে বলেছিল?
এখানে দুইটি বিষয়ের উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বাংলাদেশ এই দফায় প্রথমে রোহিঙ্গা সংকটের বাস্তব গভীরতা ও ফলাফল উপলব্ধি করতে পারেনি। এমনকি সীমান্তে বার্মিজ সেনারা প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড চালানোর পরও সে বিষয়ে ২৫শে আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না- এটা অবিশ্বাস্য। যখন সংকট দরজায় কড়া নাড়ল, বাংলাদেশ তখনও অপ্রস্তুত। সীমান্তে মোতায়েনকৃত বিজিবি সদস্য থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারক পর্যন্ত সর্বত্রই সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দেয়। এটাই হলো “অ্যাডহকিজমের” অনিবার্য ফল।

দ্বিতীয়ত, ঢাকা অপেক্ষা করছিল দিল্লীর জন্য। আশা ছিল, সংকট উত্তরণে দিল্লি ঢাকার পক্ষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাবে। ঢাকার নীতি নির্ধারকদের মনোভাব ছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদির বার্মা সফর থেকে নিশ্চিতভাবে ভালো খবর পাওয়া যাবে। কিন্তু ঢাকা বৈদেশিক সম্পর্কের মূলনীতি ভুলে গিয়েছিল- “প্রত্যেক জাতি সবার আগে নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়।”
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশ ও বার্মার যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, হতে পারে তা একেবারেই ক্ষমতাহীন, কার্যকারিতাবিহীন। কেননা তারা কিভাবে কাজ করবে, কখন কাজ করবে এবং কাদের জন্য কাজ করবে- সে বিষয় কেউ জানে না। অনেকে মনে করেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ হলো সময়ক্ষেপণের জন্য একটি বর্মি কৌশল এবং চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোকা বানানো এর মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুক্তি স্বাক্ষরের আশায় একটি খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে বার্মায় গিয়েছিলেন। যা হোক, উভয়পক্ষ ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। ২৫শে অক্টোবর মিয়ানমার টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘এখনো তাদেরকে গ্রহণ করার (বাঙালিদেরকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেয়ার) সময় হয়নি’। বহুজাতিক অপরাধ বিভাগের প্রধান কর্নেল অং হতে মিন্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত মেনে চলবেন। অং সান সুচি ও তার দপ্তর বারবার বলছে, ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতির ভিত্তিতে সবকিছু হবে।
মজার বিষয় হলো, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ঘোষণা দেয়ার পরই মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর এই বিষয়টি প্রকাশ করে যে, ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী সব ব্যবস্থাপনা করা হবে। বাংলাদেশের কেউ তাদের বিরোধিতা করেনি। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বিষয়ে জাতিসংঘকে কিছু জানানো হয় নি। সংস্থাটিকে কমিটির পর্যবেক্ষকও করা হয় নি। জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে অগ্রাহ্য করার বিষয়ে বার্মার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তাই অনেকে মনে করছেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বর্মী প্রস্তবনাটি ধাপ্পাবাজি ছাড়া কিছু না।
তাহলে এখন কি হবে? বার্মার সুপরিকল্পিত চোরাবালির ফাঁদে পড়া ছাড়া আমাদের কি কিছুই করার নেই? রোহিঙ্গারা কোনো জাতির মর্যাদা না পেয়ে এভাবেই কি চিরতরে হারিয়ে যাবে? যেকেউ শুধু এক্ষেত্রে ধারণা করতে পারেন- ‘দিস ইজ নট দ্য কেস’।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=91035&cat=2