৮ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩১

চাল পেঁয়াজ সবজিতে নাভিশ্বাস

বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ * দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬১ শতাংশ * দরজায় শীত কড়া নাড়লেও সবজির দামে আগুন

কয়েক মাস ধরে চালের বাজার চড়া। সম্প্রতি দাম কমতে শুরু করলেও গতি খুবই ধীর। পেঁয়াজের ঝাঁজ আর মরিচের ঝালে তো এখন শ্বাস নেয়াই দায়। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। তবুও দামে আগুন। রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামে সবজি কিনতেও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যেও লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। চালের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝে গুজব ছড়িয়ে আরও কিছুটা বেড়েছিল মোটা চালের দাম। এ সময় অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে সরু চালেও। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যে চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, ছয় মাসের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। সরকারের কড়া নজরদারি আর মজুদবিরোধী অভিযানে চালের দাম কিছুটা কমলেও স্বল্প এবং সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

কমছে না। মঙ্গলবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজারদরের মূল্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবদুল মাবুদ যুগান্তরকে বলেন, খুচরা বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে যেমন করে এক লাফে দাম বেড়েছিল তেমন করে একবারে দাম কমছে না। ধীর গতিতে দাম কমছে।

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে ৩০ টাকা। ছয় মাস পর মঙ্গলবার পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। কোথাও ১০০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ১৮ থেকে ২০ টাকা দরের ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। টিসিবির মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের মূল্য এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হোসাইন আলী যুগান্তরকে বলেন, কোরবানির ঈদ থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। আর মাঝে দাম একটু কমলেও বর্তমানে আবার বাড়তে শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। বৃষ্টি এবং বন্যার অজুহাতে কয়েক মাস ধরেই সবজির দামে চড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে ও সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে যে করলা প্রতি কেজির দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। ধনেপাতা ১৪০ টাকা। কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা। চিচিঙ্গা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। নতুন আলু ৮০ টাকা। বরবটি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। গাজর, ঝিঙ্গা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

একই বাজারে খাদ্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে এতে করে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কিনতে টাকা থাকছে না। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসারের জরুরি খরচ বাদ দিয়ে খাবারের জন্য যে টাকা রাখা হয়, তা দিয়ে পুরো মাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যদি প্রতিদিন রাজধানীর সব বাজারে মনিটরিং করত তাহলে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসত। আর আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের নিজ দেশে বাস করে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা টানতে হতো না। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তারা একবার দাম বাড়ালে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবি’র মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল- এ তিন পণ্য নিয়েই মূলত টিসিবি সারা বছর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাজারে এ তিন পণ্যের দাম এখন স্থিতিশীল। পেঁয়াজ নিয়ে বিভিন্ন সময় টিসিবি কাজ করলেও সামনে এর ফলন মৌসুম থাকায় আপাতত টিসিবি কিছু করছে না।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/11/08/169853/