রিমান্ডের নামে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর বিক্ষোভ মিছিল করে
৭ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫৬

সরকার বারবার রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নাজেহাল করছে

* মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ॥ আটক ৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদকে মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় বার বার রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর সায়েদাবাদে অনুষ্ঠিত মিছিল শেষে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতেই আমীরে জামায়াত ও বয়োবৃদ্ধ জাতীয় নেতা মকবুল আহমাদকে বারবার রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নাজেহাল করছে। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের ওপর জুলুম-নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নেবে না। তারা অবিলম্বে মকবুল আহমাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ: গতকাল দুপুর ১টায় রাজধানীতে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। মিছিলটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে পুলিশ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর অতর্কিত হামলা ও লাঠিচার্জ করে এবং ৫ জন নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে। এসময় ১০ জন নেতা কর্মী আহত হয়।
বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ জননেতা মকবুল আহমাদ ডায়াবেটিক, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত অথচ সরকার শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর আমীর হওয়ার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অসুস্থ মকবুল আহমাদকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বার বার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছে। সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবাও প্রদান করছে না। নেতৃবৃন্দ সরকারের এই হীন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে জামায়াতের আমীর মকবুল আহমদের মুক্তি দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় জামায়াত আমীরের রিমান্ড বাতিল ও সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি অথচ সরকার কর্ণপাত করছে না। জনাব মকবুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে এর চরম মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য শামসুর রহমান, কামাল হোসেন, মহানগরী শূরা সদস্য নিজামুল হক নাঈম, ফতেহ আলী, হাফিজুর রহমান, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ আলী হোসেন, এমদাদ আলী, নুরুদ্দিন, সাদেক বিল্লাহ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি সোহেল রানা মিঠু, ছাত্রনেতা যোবায়ের আহমদ, আহমাদ হোসেন রাসেল, শরিয়ত উল্লাহ, নুরুজ্জামান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশী হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর (ভারপ্রাপ্ত) ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, পুলিশ আজ বাকশালী আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা অন্যায়ভাবে জনগণের সাংবিধানিক অধিকারসমূহকে পদদলিত করছে। সরকার দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নসাৎ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করার যে হীন ষড়যন্ত্র করছে তাতে পুলিশ সক্রিয় সহযোগিতার ভূমিকা পালন করছে। তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের অধিকার রক্ষায় আপনারা ভূমিকা পালন করেন কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন আপনাদের কাজ নয়। তিনি সরকার ও পুলিশকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী উত্তর: জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান বলেছেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতেই আমীরে জামায়াত ও বয়োবৃদ্ধ জাতীয় নেতা মকবুল আহমাদকে বারবার রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নাজেহাল করছে। কিন্তু দেশপ্রেমী জনতা এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের ওপর জুলুম-নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নেবে না। তিনি আমীরে জামায়াতের রিমান্ড বাতিল করে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

গতকাল রাজধানীতে আমীরে জামায়াত ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক মকবুল আহমাদকে বারবার পুলিশী রিমান্ডের নেয়ার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে রিমান্ড বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১নং গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাইনিজ মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, নাসির উদ্দীন, আলাউদ্দীন মোল্লা, আবুল হাসান, আশরাফুল আলম ও আব্দুস সাকী, শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সেক্রেটারি জোবায়ের প্রমুখ।

মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকার দেশকে বিরোধী দলমুক্ত ও একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করতেই ফরমায়েসী বাদী, সাজানো সাক্ষী, দলীয় প্রসিকিউশন ও কাল্পনিক অভিযোগে সাবেক আমীরে জামায়াত ও বিশ^বরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। সরকারের বিরাজনীতিকরণের অংশ হিসেবেই জনপ্রিয় বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মিথ্যা, বানোয়াট ও যোগসাজসী মামলা দিয়ে তাদেরকে বছরের পর বছর ধরে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রিমান্ডের নামে এসব নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে লোমহর্ষক ও অবর্ণনীয় নির্যাতন। কিন্তু সরকার বিরোধী দল নির্মূলের জন্য যতই জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, জনতার প্রতিরোধও ততই শানিত হচ্ছে। তাই জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র সফল হবে না বরং তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে-ইনশা আল্লাহ।

তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের জুলম-নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অবৈধ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা হারানোর প্রহর গুণছে। তারা জনগণের শক্তির ওপর আস্থা হারিয়ে দেশকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে নিজেরাই জননিরাপত্তায় বিঘœ সৃষ্টি করছে। তারা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতেই রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। ধ্বংস করা হয়েছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। দেশের বিচারবিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির সাথে সরকারের ঘৃণ্য আচরণ সে কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু এসব করে জুলুমবাজ ও স্বৈরাচারী সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সরকারকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।

 

 

 

 

http://www.dailysangram.com/post/306676