রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের পাশে সড়কে জমে থাকা ময়লার স্তূপ।
৭ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫৪

ভেঙে পড়েছে রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

রাজধানীর ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), ফেন্সিং, ওয়েস্টবিনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলেও তার সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। নগরীতে স্থাপিত বেশির ভাগ ওয়েস্টবিন চুরি হয়ে গেছে। ফেন্সিংয়ের অবস্থাও একই রকম। রাস্তার ওপর রাখা কনটেইনারের আশপাশেও পচা দুর্গন্ধময় ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। নাকে রুমাল চেপে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গত দুই বছরে শতাধিক এসটিএস, মিনি এসটিএস তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার ওপর স্টিলের ফেন্সিং (বেড়া) দিয়ে ময়লা ওঠানো-নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ কনটেইনার (ময়লা রাখার স্টিলের ডাস্টবিন) মূল সড়ক থেকে সরিয়ে অলিগলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার যেসব কনটেইনার সড়কে ছিল, সেগুলোর ব্যবস্থাপনায়ও পরিপাটি ভাব ফিরে আসে। এতে সুফল পেতে শুরু করেন নগরবাসী। কিন্তু সম্প্রতি আবারো ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয়ে যাচ্ছে রাজধানী। অনেক মূল সড়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ময়লার কনটেইনার। এসব কনটেইনারে সারা দিনই ময়লা-আবর্জনা ওঠানো-নামানোর কাজ করা হচ্ছে। সম্প্রতি আদালত রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার নির্দেশনা দিলেও তা মানা হচ্ছে না।

গত কয়েক দিনে উত্তর সিটির রামপুরা কাঁচাবাজার, উত্তর বাড্ডা, মহাখালী, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তার গ্রিন ভিউ হাইস্কুল, মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে এভাবে দিনের বেলায় মূল সড়কে ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক রাস্তার ওপর থাকা কনটেইনার থেকে সারা দিন ময়লা-আবর্জনা ওঠাতে-নামাতে দেখা যায়।
দক্ষিণ সিটির খিলগাঁও-মালিবাগ সড়ক, খিলগাঁও-তালতলা রোড, ফকিরাপুলের বক্সকালভার্ট রোড, কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা, বাসাবো সড়ক, ওয়াসা রোডসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব স্থানে দিন-রাতই ময়লা-আবর্জনা ওঠাতে-নামাতে দেখা যায়।

সড়কের ময়লা-আবর্জনা কমাতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়েস্টবিন স্থাপন করা হলেও তার বেশির ভাগই হয় চুরি নয়তো ভেঙে গেছে। কিন্তু এগুলো প্রতিস্থাপন বা নতুন করে আর স্থাপন করছে না সিটি করপোরেশন। সাধারণ মানুষ চলতি পথে এখন আর ময়লা ফেলার কোনো পাত্র খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে এসব ময়লা রাস্তা-ফুটপাথে ফেলা হচ্ছে।
সড়কের ওপর থাকা ময়লার কনটেইনার জনসম্মুখ থেকে আড়াল করতে কোনো কোনো জায়গায় ফেন্সিং (লোহার বেড়া) করা হলেও তার বেশির ভাগই এখন অকেজো হয়ে গেছে। অনেক স্থানের ফেন্সিং চুরি হয়ে গেছে। আবার অনেক স্থানের ফেন্সিং ভেঙে পড়ে রয়েছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মাটির তলে কনটেইনার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রাজধানীর রাস্তা, অলিগলি, বাসাবাড়ির আশপাশের এলাকা, বাজারসহ সর্বত্রই শুধু ময়লা আর ময়লা দেখা যায়। এসব ময়লার সাথে ধুলা মিলেমিশে একাকার হয়ে মানুষের চোখেমুখে গিয়ে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, আদালতের নির্দেশমতো এখন ক্লিনাররা সকাল ৬টার পর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেন না। কিন্তু জনগণের ময়লা ফেলার নির্ধারিত কোনো সময় নেই। এ কারণে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা চলে আসার পর তারা আবার রাস্তায় ময়লা ফেলে। এ ময়লা সারা দিন থাকলে তখন চোখে পড়ে বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে যে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা আনেন তারা দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে ময়লা এনে সিটি করপোরেশনের কনটেইনারে ফেলেন। তারা এসব আবর্জনা থেকে ভাঙ্গাড়ি খোঁজাখুঁজির কারণেই ময়লা ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা উত্তর সিটির স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশন ৫৯ বছরের দোহাই দিয়ে আড়াই শ’ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছাঁটাই করেছে; যার প্রভাব পড়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক নয়া দিগন্তকে বলেন, রামপুরা বাজারের ময়লা রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে। নির্ধারিত এসটিএসে এনে ময়লা ফেলার অনুরোধ জানালেও সংশ্লিষ্টরা তা শুনছে না। এ ছাড়া অন্য যেসব জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে, সেসব স্থান সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ময়লা ফেলার স্থান নয়। দুই শতাধিক কর্মচারী ছাঁটাইয়ে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম নয়াদিগন্তকে বলেন, দক্ষিণ সিটিতে ৯টি এসটিএস চালু করা হয়েছে। আরো ছয়-সাতটি শিগগিরই চালু হবে। এ ছাড়া ৩৩৪টি কনটেইনার রয়েছে। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ অনুসারে আমরা সকাল ৬টার মধ্যে ময়লা পরিষ্কার করছি। কিন্তু এরপর দোকান ঝাড়– দিয়ে ফুটপাথ-রাস্তায় ময়লা ফেলা হয়। বাসাবাড়ি থেকে রাস্তায় ময়লা ফেলা হয়। এ জন্য মনে হয় আমরা যেন কোনো কাজই করিনি। তিনি বলেন, মেয়র সাঈদ খোকন এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া লিফলেট বিলি করেও জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/266301