৭ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩২

আরাকানের বাপ দাদার ভিটেমাটিই আমাদের ঠিকানা -রোহিঙ্গা

মিয়ানমার কেন আশ্রয় দিবে? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে নাগরিকত্ব অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে আকুতি জানিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। অমানুষিক নির্যাতনের মুখে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছি। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যে আমাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার পরিকল্পনা এটেছে বর্মী প্রশাসন। স্ব-দেশে তো বাপ-দাদার ভিটে মাটি রয়েছে। ওখানেই আমরা আমাদের প্রয়োজনমত নতুন করে বসতবাড়ি তৈরি করে থাকতে পারবো। আমাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার জন্যই আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বর্মী সরকার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অস্বীকরা করার জন্য বর্মী সরকারের তেলেসমাতি। আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার মাধ্যমে তাদেরকে পুনরায় বাঙ্গালি তখমা লাগিয়ে ফের নির্যাতনের পুরানো কৌশলে ফিরার অপচেষ্টা মাত্র।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে (আরাকান আশ্রয় কেন্দ্রে) রাখার বিষয়ে বার্মার প্রস্তাবনাকে প্রত্যাখ্যান করছে রোহিঙ্গারা। আশ্রয়কেন্দ্রে নয়, বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে চান রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। রোববার সকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে, এমনটি জানান রোহিঙ্গারা মুসলমানরা।
বালুখালি ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ রশিদ বলেন, “আমরা সেখানে (বার্মায়) কিছুতেই ফিরে যাবনা যদি আমাদের ক্যাম্পে পাঠানো হয়। বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফিরে পেলে আমরা রাজি আছি বার্মায় ফিরে যেতে।”
একই ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ ছৈয়দ বলেন, “ক্যাম্পে থাকার জন্য আমাদের ওখানে (বার্মায়) কেন যেতে হচ্ছে, ক্যাম্পে আমরা এখানেও (বাংলাদেশে) থাকতে পারছি। আমাদের দেশে কেন আমরা ক্যাম্পে থাকব? ওখানে (বার্মায়) আমাদের বাপ-দাদার বসতভিটা রয়েছে আমরা ওখানেই থাকব। আমরা ওখানে (বার্মায়) যেতে রাজি নয় যদি না আমাদের সব রকমের নাগরিক অধিকার এবং নিজ গৃহে ফিরে যেতে দেয়া না হয়।”
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী লায়লা বেগম বলেন, “বার্মায় কেন আমরা ক্যাম্পে থাকব? আমার দেশে আমাকে শরণার্থী কেন হতে হবে? আমরা নাগরিক অধিকার দিলে ফিরে যাবো। নয়তো যাবোনা।”

গত মাসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্মা সফরকালে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বার্মা সরকারের প্রতি দশ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যার মধ্যে ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিক অদিকার দিয়ে ফিরিয়ে নেয়া, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং প্রত্যাবাসন চুক্তিতে জাতিসংঘকে সাথে রাখা।
যার উত্তরে বার্মা প্রায় সকল প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করে এবং নতুন করে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশকে। বার্মা চায়, ১৯৯২ সালে করা চুক্তির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখা হবে এবং চুক্তির মধ্যে জাতিসংঘকে রাখতে চাইছেনা বার্মা।
এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কিভাবে হবে তার ফাইনাল প্রস্তাব ঠিক হয়নি। দুই দেশ এখনো এ ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। রোহিঙ্গারা আশা করছেন তাদের জন্য সহায়ক একটি প্রস্তাব যেন হয়।

http://www.dailysangram.com/post/306682