৭ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৮

মিয়ানমারের সাথে দৃঢ় আচরণের এটাই সময়

প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ অসংখ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু। গত ২৭ আগস্ট থেকে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত নৃশংসতার ফলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোই আমাদের চূড়ান্ত করণীয়। সেই লক্ষ্যে কার্যকর নীতিমালা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। মিয়ানমার নগণ্যসংখ্যক রোহিঙ্গা ছাড়া তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। এটাই রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ। মিয়ানমার সরকার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছে, রোহিঙ্গারা দেশটির জাতীয় জনগোষ্ঠীগুলোর (national races) অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের গণ্য করা হয় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বেআইনি অভিবাসী হিসেবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে মিয়ানমার ইতিহাসকেই অস্বীকার করছে এবং ইতিহাসের পুনর্লিখন করে নিজের দাবিটি প্রমাণের প্রয়াস পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক এর বিপরীত এবং বাংলাদেশ প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরছে। ইতিহাসে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা আরাকানে বাস করছে শত শত বছর ধরে এবং আরাকান অতীতে ছিল স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। বার্মার রাজা ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল এবং বার্মার সাথে যুক্ত করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্কটের শুরু।

সঙ্কটের উৎপত্তি
১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতা অর্জনের পর রোহিঙ্গারা বার্মার নাগরিক হিসেবে গণ্য হয়েছিল; কিন্তু সামরিক জান্তা ক্ষমতায় এসে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার জঘন্য পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করে ১৯৬৬ সালে। এর অভ্যন্তরীণ নীতির আওতায় অব্যাহত নি¤œমাত্রার সহিংসতা, মাঝে মাঝে নারকীয় বর্বরতার বহিঃপ্রকাশ এবং ১৯৮২ সালের ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ ও ১৯৯৩ সালের জনগোষ্ঠী ও ধর্মসংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত করা হয়েছে নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার এবং মিয়ানমারে অন্যতম ‘জাতীয় জনগোষ্ঠী’ হিসেবে গণ্য হওয়া থেকে। এর পরিণতিতে ২০১৪ সালে তারা উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের দাবি অনুযায়ী নিজেদের ‘রোহিঙ্গা’ পরিচিতি পর্যন্ত হারিয়েছে। এসব ঘটনার ফল হচ্ছে, রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমির ওপর ঐতিহাসিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০১৫ সালে মিয়ানমারের সাথে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে আনাড়ির মতো স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিরাট ভুল করেছে। কারণ এতে এ মর্মে সম্মতি দেয়া হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ কিংবা ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে অভিহিত করবে না। এই নতুন উদ্যোগ তাদের চিহ্নিত করেছে ‘মুসলিম’ হিসেবে। এতে একটি ‘ধূসর এলাকা’ রয়ে গেছে। এটা হলো এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করা খুব কঠিন হয়ে যাবে। স্টেট কাউন্সিলর সু চি এই পরিস্থিতিতে চাতুর্যের সাথে জোর দিয়ে বলেছেন, কফি আনান তার রিপোর্টে ‘রোহিঙ্গা’দের শুধু ‘মুসলিম’ হিসেবে উল্লেখ করা উচিত। যদিও এটা ক্ষতিকর নয় বলে প্রতীয়মান হয়, এর নেপথ্যে যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা হলো যথাসময়ে এই ‘মুসলিম’ পরিচিতিকে ব্যবহার করা হবে মিয়ানমারের ‘ইতিহাসের অসমাপ্ত কাজ’ সম্পন্ন করার জন্য। তা হচ্ছে বাংলা থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের উৎখাত করা। এভাবে তাদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ ও ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ উভয় অভিধায় চিহ্নিত করা হতে পারে। বাংলাদেশের উচিত তাদের কেবল ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে অভিহিত করা, যাতে তাদের ঐতিহাসিক দাবি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু ঢাকা তা করেনি। তাদের ‘পরিচিতি’র সংজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয়। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল।

ঢাকার দোদুল্যমানতা
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে ঢাকার প্রতিক্রিয়া অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক। প্রচণ্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নেই; ইসলামপন্থীদের উদ্যোগ ছাড়া বিশাল কোনো বিক্ষোভ হয়নি এবং রাষ্ট্র ও সুশীলসমাজ মিয়ানমারের নারকীয় পন্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দায় নৈতিকভাবে উন্নত অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকার ম্রিয়মাণ ভূমিকা এবং দোদুল্যমানতা মিয়ানমারকে উৎসাহ জুগিয়েছে ভয়াবহ বর্বরতা চালিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশের দিকে শরণার্থী স্রোত অব্যাহত রাখতে। এই নয় লাখ শরণার্থীর আশ্রয় দান এবং তাদের প্রত্যাবাসনের দায় মিয়ানমার ত্যাগ করেছে। পলিসির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিকল্পের কথা বলতে গেলে উল্লেখ করতে হয়, মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় আলোচনা প্রয়োজন, তা না জেনে ঢাকার দোদুল্যমান ভূমিকা পালনের ব্যাপারটি স্পষ্ট। কার্যকর নীতি দুটোই হওয়া উচিত ছিল। ঢাকা সে পথই অবলম্বন করছে, মনে হয়। তবে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের দৃষ্টান্ত অনেক। যা হোক, দক্ষ কূটনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া দ্বিপক্ষীয় আলোচনা কিংবা জাতিসঙ্ঘের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি।
প্রথমত, মিয়ানমার বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী; কিন্তু দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে মিয়ানমারের এই উদ্দেশ্য অনুধাবনে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা ইস্যুর সুরাহার নামে মিয়ানমারের মন্ত্রীর ঢাকা সফর আইওয়াশের বেশি কিছু ছিল না। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর (২৩-২৫ অক্টোবর) একই ধরনের হতাশাব্যঞ্জক। দু’টি রাষ্ট্র রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো জরুরি সমস্যা নিয়ে কার্যকর আলোচনার পরিবর্তে এই সফর পর্যবসিত হলো দুই দেশের আন্তঃক্রিয়ার রুটিন ওয়ার্কে। দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের প্রতিক্রিয়াও ছিল মিয়ানমারের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি। উভয় রাষ্ট্রই যে কারণেই হোক নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থ কিংবা ইসলাম আতঙ্ক অথবা দুটোই। তারা ঢাকাকে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা ইস্যু মোকাবেলা করা হয়।

দ্বিতীয়ত, ঢাকার বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা এ যাবৎ জাতিসঙ্ঘের পরিধিতে সীমাবদ্ধ। সেখানেও ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারেনি চীন-রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করার কারণে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করার প্রস্তাব এবং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব ও কফি আনানের বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বানসংবলিত প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদে। এগুলো পাস হয়ে যেতে পারে। তবে মিয়ানমারের একগুঁয়েমির রেকর্ডের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, এ সব প্রস্তাব গৃহীত হলে শুধু নৈতিক বিজয়ই হবে। তবু এটা আশাব্যঞ্জক, ঢাকা প্রো-অ্যাকটিভ কূটনীতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আরো জোরালো ও কার্যকর বহুপক্ষীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার।
মিয়ানমারকে দৃঢ়তা প্রদর্শনের সময়
সন্দেহ নেই, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তবে মিয়ানমারের মেকিয়াভেলির ধূর্ত কূটনীতি অনুসরণের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা অনতিক্রম্য চ্যালেঞ্জগুলোকেও অতিক্রম করতে হবে। মিয়ানমারের ব্যাপারে অটল ও দৃঢ় ভূমিকা রাখার এখনই সময়। মিয়ানমারসহ সারা দুনিয়ায় ঢাকাকে জবাব দিতে হবে স্পষ্টতা ও দৃঢ়তার সাথে। জানিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশ একটি সুসংহত জাতি। তারা শরণার্থীদের এই বিশাল বোঝা দীর্ঘ দিন একাকী বহন করতে পারে না এবং মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারের ওপর প্রকৃত চাপ প্রয়োগ করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা ও দাবির প্রশংসার পাশাপাশি বাংলাদেশকে তাদের নিরন্তর বোঝাতে হবে যে, মিয়ানমারের সামরিক গোষ্ঠীকে সত্যিকার আঘাত হানে, এমন পদক্ষেপ নিতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। মিয়ানমারে অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারাই মূল নিয়ন্ত্রণকারী। এ যাবৎ শুধু ইইউ এবং ব্রিটেন মিয়ানমার সশস্ত্রবাহিনীকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদেরও তা করতে হবে। যাতে দ্বিপক্ষীয় নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধে মিয়ানমারের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে জন্য এই পদক্ষেপ আসিয়ান এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা বাংলাদেশ চাইতে পারে। মিয়নামারের বৈদেশিক মুদ্রার বিরাট অংশই আসে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি করে। এটা বন্ধ করা গেলে তা হবে অন্যদের জন্য অনুসরণীয়। মিয়ানমারকে শাস্তি দিতে পরিকল্পিত নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা কঠোরতার সাথে আরোপের জন্য আসিয়ান, ওআইসি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থাকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এসব কিছুই নির্ভর করে আমাদের কূটনীতিকদের দক্ষতা আর আমাদের নেতৃত্বের বিচারবুদ্ধির ওপর।

একই সাথে বিশেষ করে বাংলাদেশ সু চিকে না রাগানোর নীতি অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। তিনি তার সামরিক দোসরদের চেয়ে কম মুসলিমবিদ্বেষী এবং মা বা হারত্বের (সন্ত্রাসবাদী বৌদ্ধ মতবাদ) কম উৎসাহী সমর্থক নন। বিশেষত শিশু ও নারীসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পৈশাচিক বর্বরতার মদদদান এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি চরম নেতিবাচক মনোভাবের জন্যও অং সান সু চি দায়ী।
রোহিঙ্গারা সম্ভাব্য চরম প্রতিক্রিয়া প্রকাশে বাধ্য হলে তার সমূহ আশঙ্কা এবং এর ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রতি হুমকি এবং বাংলাদেশসমেত গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার বিপদ সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায় বিশেষত চীন ও ভারতকে সরবে ও স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (ARSA) কর্মকাণ্ডের অজুহাতে মিয়ানমার তার গণহত্যার তৎপরতাকে বৈধ প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে। অথচ এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বড়জোর ৫০০ এবং এর অস্ত্রশস্ত্র সেকেলে, আইএস কিংবা আলকায়েদার মতো গ্রুপগুলোর উন্মুক্ত ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের সাথে ARSA সংগঠনের সন্ত্রাসবাদকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। এরা নিজেদের জনগণের জন্য সুবিচার পাওয়ার জন্য তৎপর হয়েছে। রোহিঙ্গারা কোনো ন্যায়বিচার না পেলে উখিয়া আর কুতুপালংয়ের শরণার্থীশিবির বহুজাতিক ইসলামি জঙ্গিদের উর্বর রিক্রুটিং গ্রাউন্ডে পরিণত হতে পারে। জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের ‘বিশ্বের সর্বাধিক নির্যাতিত জনগোষ্ঠী যারা সর্বাধিক সংখ্যক রাষ্ট্রবিহীন মানুষের সমষ্টি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই পরিস্থিতিতেই কফি আনান, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব, জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের চেয়ারম্যান, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স হুঁশিয়ারি দিয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ানুগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের চরমপন্থা অবলম্বনের আশঙ্কা খুব বেশি। এমনটা ঘটলে দুর্বল ও মধ্যপন্থী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে না। এই আশঙ্কার বার্তা শুধু জোরালোভাবে পশ্চিমা জগৎকে নয়, মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বনকারী ভারত ও চীনের মতো আঞ্চলিক শক্তিকে জানানো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অবশ্যই বোঝাতে হবে যে, শুধু মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে তাদের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। বাংলাদেশে যাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করাও তাদের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রয়োজন। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে পুরো অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে, যা এই দুটি আঞ্চলিক শক্তির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

যদি কোনো পদক্ষেপেই কাজ না হয়, বাংলাদেশ ‘মানবতরঙ্গ’ কৌশল ব্যবহার করে মিয়ানমারকে যুদ্ধের হুমকি দেয়ার কথা ভাবতে পারে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেছেন যে, মিয়ানমার বাংলাদেশের ওপর একটি অপ্রত্যক্ষ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে যে বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে তার জন্য যা কিছু করা দরকার, তাই করা উচিত। বাংলাদেশ যদি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়; যাতে এ অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে তাহলে ভারত এবং চীন উভয়ই নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে। মিয়ানমারের ওপর সত্যিকারের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় শান্তির জন্যও যুদ্ধ করতে হয়। অতীতেও অনেক দেশ শান্তির জন্য যুদ্ধ করেছে এবং এখনো করছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমরা ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবতার জন্য আশ্রয় দিয়েছি, তাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানে যে নিরাপত্তা সঙ্কট দেখা দেবে তা আমাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হবে না।
লেখক : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/266134