৬ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১৫

মগসেনাদের খাদ্য অবরোধে ভয়াবহ দুর্বিষহ অবস্থায় অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা

আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা জাতিগত নির্যাতনের কবল থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছেনা। মুসলমানদের ওপর রাখাইন সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থীদের হিংসাত্মক মনোভাব চলেছেই রীতিমতো। জীবন বিনাশে উপবাসে মারতে এবার প্রয়োগ হচ্ছে নির্যাতনের নুতন কৌশল। গ্রামগুলোর এমন কোন অলিগলি বাদ যাচ্ছেনা; যেখানে সশস্ত্র নাডালার সদস্য নেই। ওই সশস্ত্র সংগঠন নাডালার সহযোগিতায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বহনকারীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে মগসেনা ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ধর্মানুসারিরা। প্রতিনিয়ত ওৎপেতে থাকে বাজারগামী রোহিঙ্গাদের বাধাগ্রস্ত করতে। শুধু বাধা দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেনা, মারধর করে প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী ওই গোষ্ঠি।
সূত্রে প্রকাশ, রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা তুলনামূলক কমে আসলেও নির্যাতনের মাত্রা পাল্টায়নি। রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন চালাচ্ছে মগ বাহিনী। সহিংস আক্রমণের পরিবর্তে এখন খাদ্য অবরোধ করে রাখছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে বেপারি, খরিদদার ও হকার আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা দোকানিদেরও মালামাল কিনতে বাহিরে যেতে দেওয়া হচ্ছেনা। এমনকি সাধারণ রোহিঙ্গাদের হাটবাজারে যেতেও বারণ করা হচ্ছে। ফলে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে আরাকান ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা। গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কড়াকড়ির কারণে রোহিঙ্গারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারলেও উখিয়ার আন্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে চলছেন। কিছু রোহিঙ্গা সাঁতরে নাফ নদী পার হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৯জনসহ এ পর্যন্ত ৩৯জন রোহিঙ্গা নদী পথে শেষ অবলম্বন প্লাষ্টিকের গ্যালন বুকে বেঁধে সাঁতরে নাফ নদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছেন।
রোহিঙ্গারা সেদেশের স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের জানিয়েছে, গোলাগুলী ও জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করলেও বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে ঘৃণ্য কৌশল প্রয়োগ করে।
সূত্র আরো জানায়, যারা এখনো প্রাণে বেঁচে আছেন তাদের ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে সেনারা। তারা বাজারে কোনো দোকানপাট খুলে বসা কিংবা অন্য কোথাও থেকে খাবার যোগাড় করতে না দেয়ায় শারীরিক নির্যাতন করলেও করেও ক্ষুধার তাড়নায় বাপ-দাদার ভিটেমাটিকে আর আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হচ্ছেনা আরাকানে অবস্থানরতদের। এখন বাংলাদেশের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেছেন বার্মার বুচিদং ও রাচিদং এলাকার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়া এলাকার রোহিঙ্গারা।

http://www.dailysangram.com/post/306482