৬ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১২

এ কোন পূর্বাভাস

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেই প্রথম থেকেই গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুস্থ নিঃস্ব এই জনগোষ্ঠীর জন্য সাধ্যমতো ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের সাধ্য সীমিত, কিন্তু তাদের হৃদয়টি সুবিস্তৃত। সরকারের পক্ষ থেকে এদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কোনো কিছু করা হয়নি। এমনকি এই দুস্থ মানবগোষ্ঠীর জন্য তেমন সহায়তাও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আসেনি। দেশের সাধারণ মানুষ যা কিছু করছে, তা দিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে। কেউ বলতে পারে না এই অসহায় মানুষগুলোর এমন উদ্বাস্তুর জীবন কত দীর্ঘ হবে। কবে তারা তাদের নিজ দেশে সম্মানের সাথে ফিরে যেতে পারবে। এ সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজ কিছুটা সোচ্চার হলেও মিয়ানমারের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেনি, যাতে দেশটি তাদের মানুষকে ফিরিয়ে নিতে দায় বোধ করে। এমন একটি অবস্থায় বাংলাদেশের সরকারকে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশের মানুষের ঐক্যের কোনো ফাটল সৃষ্টি হয় এবং জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা গিয়ে না পৌঁছায়। এ জন্য এই বিষয়টিকে যাতে কোনোভাবে রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলা না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ইতোমধ্যে এ কাজটি হয়ে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ এই দলের নেতাদের ত্রাণকার্যক্রম নিয়ে সরকারি দলের নেতারা কটাক্ষ করেছেন এবং তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। এটা শুধু দুঃখজনক নয়, অমানবিকও বটে। যেখানে আমাদের জাতীয় ঐক্যের যে দৈন্যদশা তাতে এমন কটাক্ষ করা, কারো সদিচ্ছা নিয়ে উপহাস করা ও প্রশ্ন তোলা শুভ হওয়ার নয়।

সম্প্রতি অসহায় রোহিঙ্গাদের দেখতে এবং ত্রাণ বণ্টনের জন্য কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে। গণমাধ্যমের আটটিসহ ২০টির মতো গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শুধু ফেনীতে নয়, এর আগে আরো অনেক স্থানে গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়েছে। যদি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, তবে বেরিয়ে আসবে কারা এই হামলার সাথে জড়িত। তবে এটা স্পষ্ট, এ হামলা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে হয়নি, এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন যেমন রয়েছে তেমনি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরাই জড়িত; যাদের এই প্রভাব ও মদদ রয়েছে যে, তারা এমন অঘটন ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে। আইনকানুন তাদের স্পর্শ করবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, বেগম খালেদা জিয়ার এই সফর পূর্বঘোষিত এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিরূপ বক্তব্য ও কটূক্তি করা হয়েছে। তার পরই এমন অঘটন ঘটল।

এসবের কোনো সংযোগ রয়েছে কি না, তা আমরা জানি না। এখন সরকারের দায়িত্ব তদন্ত করে এই হামলার প্রকৃত হোতাদের প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। তা না হলে সন্দেহের যে তীর তাদের দিকে তাক করা রয়েছে, তা অপদমন হবে না। তবে এটা সবার জানা, দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেতা তার ঘোষিত সফরে এই পথ দিয়ে যাবেন, সে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে থাকা তাদের সাধারণ রুটিন কাজ। তার নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নেয়া ছিল তাদের দায়িত্ব। আমরা শুনিনি হামলার স্থানে কোনো বাহিনী ছিল কি না? যদি না থেকে থাকে, তবে তা একটা বড় প্রশ্ন। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যে পথে যাবে, সেই পথে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছিল। পুলিশ এই অপকর্মে বাধা দেয়নি কেন। এসব স্থানে তাদের উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়নি। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা এ ঘটনার পর বলেছেন, বেগম জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছে ছাত্রদল ও যুবদল! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ এসব সংগঠনের কর্মীদের কখনো তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডই করতে দেয় না, বাধা দেয়, আটক করে। কিন্তু তারা যখন কথিত হামলা চালাল, তখন তাদের দু-চারজনকে আটক করা সম্ভব হলো না কেন। আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। অতীতেও বিভিন্ন সময় এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দেশের মানুষ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এ ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রকৃত বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। তাই লুকোচুরি করে কোনো ফায়দা হবে না।

বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত বিধানগুলোর ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে রয়েছেÑ ‘বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা’ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। নাগরিকের এই অধিকারের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। তারা দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে যে শপথ গ্রহণ করেনÑ তারা সংবিধান সংরক্ষণ করবেন। খালেদা জিয়ার সফরকালে পথে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ায় তার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়েছে। অথচ এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। দেশের একজন বিশিষ্ট নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার যদি রাজপথে ভূলুণ্ঠিত হয়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা ভাবাই যায় না। একটি রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিÑ নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, সুনীতি প্রতিষ্ঠা। যদি কোনো শাসক তাতে সফল না হয়, তবে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বহু আগে থেকেই এসব বিষয় প্রতিষ্ঠিত থাকা উচিত ছিল। এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি বড় ব্যর্থতার দিক। এই ব্যর্থতা এখনো বয়ে বেড়ানো জাতীয় লজ্জার বিষয়।

ফেনীতে এই হামলার ঘটনা কয়েকটি আলোচিত বিষয়কে পুনরায় আলোচনার জন্য সামনে নিয়ে এসেছে। ফেনীর ঘটনা প্রমাণ করেছে, দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচনের সময় যদি এমন ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ ভোগ করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে এই বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো তুলেছে। এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। ক্ষমতাসীনেরা অবাধে প্রচার চালাবে, পক্ষান্তরে সরকারি দলের প্রতিপক্ষরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হবে দাঁড়াবে। ক্ষমতাসীনেরা তাদের বক্তব্য জনসম্মুখে তুলে ধরার সুযোগ পাবে আর প্রতিপক্ষরা পাবে না। এর ফলে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া সমান। নির্বাচনের লক্ষ্য এতে ব্যাহত হবে। এমন নির্বাচন অর্থবহ হবে না। দেশে ও দেশের বাইরে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন কমিশনকে ফেনীর ঘটনা নিয়ে ভাবতে হবে। এর প্রতিবিধান করা তাদের জন্য জরুরি। তা ছাড়া দেশে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠার দাবি বিএনপি করছে, তাও এখন যুক্তিযুক্ত হয়ে উঠেছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেশের ভেতর যেমন আগ্রহ, তেমনি বাইরের দুনিয়া থেকে বারবার বলা হচ্ছে বাংলাদেশে তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করে। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান তখনই সফল হবে, যখন সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। ফেনীর মতো ঘটনা ঘটলে যে কেউই নিরাপত্তাহীনতার জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করবে। শুধু দলগুলোই নয়, নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটলে ভোটদাতারাও নির্বাচনকেন্দ্রে উপস্থিত হতে দ্বিধাবোধ করবে। আর এ কারণেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেনা মোতায়েনের দাবি তোলা হয়েছে। এ দাবি সবার, কিন্তু তা যদি গৃহীত না হয় তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। সে ক্ষেত্রে আগের মতো একদলীয় সংসদ হবে। সেই সাথে জনগণের ভোট ছাড়াই একটি সিভিল গভর্নমেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এখনকার মতো একটি সরকার মানুষের সম্মতি ব্যতিরেকেই দেশ পরিচালনা করবে।

এসব অনিশ্চয়তা দূর করতে একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে বহু দল এই দাবি তুলেছে। এমন সরকারের ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে নেই, কিন্তু দেশের বৃহত্তর প্রয়োজনে এবং জনচাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যবস্থা করা উচিত। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। পরে এর সুফল পাওয়া গেছে। এখন দেশের আইনবিশারদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে, এমন সরকারের একটি রূপরেখা তৈরির জন্য। সরকারি দলসহ সবাই যখন সুষ্ঠু ও প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চায়, তখন এ প্রশ্নের সুরাহা করা কঠিন কোনো কাজ নয়। সরকার একাই এটার সমাধান দিতে পারে। সরকারের এই সদিচ্ছা দেখানো উচিত। দেশের মানুষ এমন একটি সমাধান আশা করে।
ফেনীর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরো একটি বিষয় লক্ষ করা গেছে, সেটি হলো অন্যান্য দলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। বিএনপি কী আশা করেছিল জানা নেই, তবে কোনো দলই ফেনীর হামলার বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। এটা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দৈন্যচিত্র। সবার জন্যই সুসময় দুঃসময় আসে। কারো দুঃসময়ে কেউ যদি জানালা বন্ধ করে রাখে, তবে তার অসময়েও কেউ এগিয়ে আসবে না। দেবে আর নেবে, এই পরিবেশ থাকবে না। এটা কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। রাজনীতিকে শুধু রাজনীতি হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়, বরং জনকল্যাণ করার একটা শিল্প। এখানে বেদনা-সমবেদনা. প্রীতি-সম্প্রীতিতে ভরা থাকবে এই শিল্পীদের হৃদয়মন। রাজনীতি অবশ্যই এ ধরনের প্রতিযোগিতা, এই প্রতিযোগিতার বিচারক জনগণ। ফেনীর ঘটনাগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই সন্ত্রাসের নিন্দা তো করা যেত। কিন্তু সবাই নীরব। অথচ সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য হয়েছে। তারপর এই নীরবতা তো প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।

পরশ্রীকাতরা শব্দটি অন্যান্য ভাষায় এবং বাস্তবে কতটা বর্তমান তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে এ শব্দটি বহুলপ্রচারিত শব্দ এবং বাস্তবেও তার প্রমাণ রয়েছে। ফেনীর হামলার পেছনে এমন পরশ্রীকাতরতা কাজ করেছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খালেদা জিয়ার কক্সবাজারে যাওয়ার পথে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটেছে। তারা তাদের প্রিয় নেত্রীকে দেখার জন্য রাজপথে বহু সময় ধরে অপেক্ষা করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কেউ কেউ বলছে, এটা ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। তার বিপুল জনপ্রিয়তা জনসমাগমের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ক্ষমতাসীনেরা এই জনসমাগম দেখে উৎকণ্ঠিত হয়েছে। বিএনপিকে একটি প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে এখন চলতে হচ্ছে। তাদের কর্মী-সমর্থকেরা এ পরিস্থিতিতে ভীতসন্ত্রস্ত। এসব উপেক্ষা করে মানুষের এই সমবেত হওয়া অন্যান্য স্থানেও ঘটতে পারে, যা আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য শুভবার্তা দিচ্ছে, তাতেই ক্ষমতাসীন উদ্বিগ্ন। তাই জনস্রোত রোধের জন্য এসব ঘটনা ঘটছে।
ফেনীর ঘটনা নিয়ে এ কথা বলা যেতে পারে, এটি একটি মন্দ উদাহরণ হয়েই শুধু থাকবে না, তা একটি শঙ্কার পূর্বাভাস বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। নির্বাচনের আগে এমন দুর্ঘটনা কোনো অবস্থায়ই ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতকাল জনগণ এমন একটি হতাশাজনক অবস্থার বেদনা বয়ে বেড়াবে। শুভদিনের সূর্যোদয় কখন হবে, তার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিকদের অনেক কাজের একটি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তোলা। সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বিরাজমান পরিবেশ তেমন নয়। আর এ কথা বলতেই হবে, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে বস্তুত রাজনীতিকেরাই দায়ী। বর্তমানে এমন রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। যার ফলে আন্তঃদল সম্পর্ক অত্যন্ত নাজুক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবরই তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি তির্যক ভাষায় আক্রমণ করছেন। দলভেদে পরস্পর পরস্পরকে সমালোচনা করা দোষের ব্যাপার নয়। নীতি-আদর্শ নিয়ে তাদের মধ্যে ভিন্নতা অবশ্যই থাকবে। সবাই এক পথে চললে তো আর পৃথক দল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু এই ভিন্নতার জন্য পরস্পর বৈরী হয়ে থাকা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। গণতন্ত্রের মৌলিক দীক্ষা হচ্ছে সহিষ্ণুতা ও পরমতকে শ্রদ্ধা করা, কিন্তু আমরা তার চর্চা করি না। ভিন্নমতকে আমরা শত্রুজ্ঞান করি। ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এমন অঘটন যদি সংক্রামিত হয়, তবে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। প্রায় প্রতিটি দেশে একাধিক সর্বজনশ্রদ্ধেয় ও মান্য ব্যক্তি থাকেন, যারা জাতীয় দুর্যোগের সময় সামনে দাঁড়িয়ে বিভাজন দূর করে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করেন। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের এমন জাতীয় ব্যক্তিত্ব নেই, যিনি অভিভাবকের মতো সামনে এসে শান্তি-স্বস্তির বাঁশি বাজাবেন। এমনকি আমাদের যে জাতীয় নেতারা অতীতে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কার্পণ্য করা হয়। অকারণে কুৎসা রটনা করা হয়। সে যাই হোক, দেশ এখন একটি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় যে কারো জন্যই পানি ঘোলা করা, পরিবেশ অশান্ত করা উচিত হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/265922