৫ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:৪২

দায়িত্ব নিতে দুই সিটির অনীহা

মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার

মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিতে অনীহা দুই সিটি করপোরেশনের। এটির অবস্থান দুই সিটিতে পড়লেও ফ্লাইওভারের বড় অংশই পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্বোধনের পর কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় তা কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে তারা দায়িত্ব নিতে চান। তারা বলছেন, উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটিতে যান চলাচল করায় সবক’টি লুপ দিয়ে সমান সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি লুপে বরং উল্টো যানজট বেড়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এর একটি সমাধান বের করতে হবে।

কারণ সিটি করপোরেশন নাগরিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে আগে। উদ্বোধনের পর নির্মাণ সংশ্লিষ্টরাই তদারকি করছেন। তারাও ফ্লাইওভারের কিছু ত্রুটি দেখতে পাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশের পর্যবেক্ষণেও ত্রুটি ধরা পড়েছে। এগুলো সমন্বয় করে সমাধান করার পরই সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নিতে চায়। সরজমিন কয়েক দিন ঘুরে দেখা গেছে ফ্লাইওভারটিতে উঠা-নামার জন্য ১৫টি লুপ আছে। এর মধ্যে অন্তত তিনটিতে নামা- উঠার সময় যানজট লেগে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সড়কের আগের অবস্থার চেয়ে এখন পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের কাজও শেষ হয়ে এসেছে। এখন ফুটপাথের কাজ চলছে। এই অবস্থায় ফ্লাইওভারটির দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পটির পরিচালক ও এলজিইডি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার পাল জানিয়েছেন, অল্প যে কাজ বাকি আছে তা সম্পন্ন করেই শিগগিরই ফ্লাইওভারটি আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেব। তিনি জানান, ফ্লাইওভারটি দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছে। তাই দুই সিটিকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, এখন শুধু ফ্লাইওভার ব্যবহারের ম্যানুয়েল তৈরির কাজ চলছে। এরপর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এলাকা অনুযায়ী দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ফ্লাইওভারের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র বলছে, ফ্লাইওভারের খুব কম অংশই তাদের এলাকায় পড়েছে। এতে দায়িত্ব নেয়ার কিছু নেই। উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারের সম্পূর্ণ তদারকির একটি বিষয় থাকে। কোনো ফ্লাইওভারের ১০ ভাগের আট ভাগ যদি এক এক সংস্থার অধীনে থাকে আর বাকি দুই ভাগ যদি অন্য অংশে থাকে তাহলে তদারকির ভালোমন্দ বিচার করা যাবে না। দায়িত্ব নেব কি নেব না- এখনই বলা যাচ্ছে না। আলোচনা করে সিটি করপোরেশন পরে এ সিদ্ধান্ত নেবে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ফ্লাইওভারটি চালু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে এর সার্বিক অবস্থা। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের বিভিন্ন ত্রুটি ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে। দক্ষিণ সিটি আপাতত ফ্লাইওভারটি নজরদারিতে রেখেছে। এলজিইডি ফ্লাইওভারের দায়িত্ব খুব শিগগিরই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে চায়- এমন প্রশ্নে উত্তম কুমার রায় বলেন, সময় আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এখনই সিটি করপোরেশন কি করবে বলা যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কাছে এখন পর্যন্ত এরকম কোনো তথ্য আসেনি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী শাহাবউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমরা আরো কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে চাই। তখন এর গতি-বিধি বোঝা যাবে। এলজিইডি থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব আসার পর একটি কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, যানজটের যে সমস্যা হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্যানেলের সদস্য ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল মোস্তাফা মানবজমিনকে বলেন, ফ্লাইওভারটি কিছুদিন হলো চালু হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেয় তবে তার তদারকি আমরা করবো। তবে উত্তর সিটির আওতাধীনে ফ্লাইওভারের যে অংশ পড়েছে সেটুকুই করবো।

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান মানবজমিনকে বলেন, জনঘনত্বের শহরে ফ্লাইওভার আসলে কোনো কাজে আসে না। এগুলো আমরা বহু আগ থেকে বলে আসছি। কারণ এই শহরটা পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা হয়নি। এমনকি এই শহরের রাস্তাঘাটও পরিকল্পনামাফিক না। তিনি বলেন, শহরের ভেতর যদি কোনো রাস্তা বা ফ্লাইওভার তৈরি করা হয় তবে এর দায়িত্ব সাধারণত সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়। সেজন্য মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। যেহেতু কিছুদিন আগে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হয়েছে। কিছু কাজকর্ম সেরেই এই দায়িত্ব হয়তো বুঝিয়ে দেয়া হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=90628