৫ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:৩৭

স্কুলের সামনে ফেরি করে বিক্রি

ঝালমুড়ি ফুসকা আচারে টাইফয়েডের জীবাণু

৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া * জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্কুলের সামনে ফেরি করে ঝালমুড়ি, ফুসকা, ভেলপুরি, আচারসহ নানা খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হয়। এসব খাবারে পাওয়া গেছে মারাত্মক রোগ টাইফয়েডের জীবাণু। এছাড়া ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ঝালমুড়ি, ফুসকা, ভেলপুরিতে ই-কোলাই ব্যক্টেরিয়ার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়ার কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এসব খাবার খাওয়ায় তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সার্ভে রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
শনিবার সকালে ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন অব হর্টিকালচার প্রোডাক্টস অ্যান্ড আদার ফুড কমোডিটিজ ফর কেমিক্যাল কন্টামিনেশন অ্যান্ড মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল অ্যাট এনএফএসএল : এন অ্যাপ্রাইজাল অব ফুড সেফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ-সেকেন্ড রাউন্ড’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনস্থ জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য জরিপের আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন থানার ৪৬টি স্কুলের সামনের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুসকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনার ইস্ট-মোল্ড, কলিফর্ম, সালমোনিলা, ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পাঁচটি ভেলপুরি ও তিনটি ঝালমুড়ির নমুনায় টাইফয়েডের জীবাণু সালমোনিলা পাওয়া গেছে। ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ঝালমুড়ি, ফুসকা, ভেলপুরিতে ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়ার পাওয়া গেছে। এছাড়া ৭৫ ভাগ ভেলপুরি, শতভাগ ফুসকায় মাত্রতিরিক্ত ইস্ট-মোল্ড পাওয়া গেছে। এছাড়া মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল পরীক্ষায় অন্যসব জীবাণুর মাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেখা যায়।
এছাড়া এ জরিপের আওতায় ২০১৬-১৭ সালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫৫টি নুডুলস পরীক্ষা করা হয়। এর ১৪টিতে প্রোটিনের মাত্রা কম পাওয়া গেছে। ১৫টি সাধারণ ও ১৫টি লাচ্ছা সেমাই পরীক্ষা করা হয়। একটি সাধারণ সেমাই ও ১০টি লাচ্ছা সেমাইয়ে মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে আর্দ্রতা পাওয়া গেছে। তিনটি সাধারণ সেমাই, ১০টি লাচ্ছা সেমাইয়ে মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি সাধারণ সেমাইয়ে ও আটটি লাচ্ছা সেমাইয়ে ইস্ট-মোল্ডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

১৮টি খোলা ও ২০টি ব্র্যান্ডের ঘি, ১৮টি খোলা ও ১৩টি ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, ১৮টি খোলা ও ৯টি ব্রান্ডের সয়াবিন তেল পরীক্ষা করা হয়। এতে মানসম্পন্ন সরিষার তেল ও ঘি পাওয়া যায়নি। মাত্র একটি ব্র্যান্ড ও দুটি খোলা সয়াবিন তেল মানোত্তীর্ণ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় ৩৮টি ঘির ২৭টিতে বিআর ও সাবানীমান, ১৭টিতে মুক্ত এসিডমান এবং ২০টিতে আর্দ্রতার মানে তারতম্য পাওয়া যায়। ৩১টি সরিষা তেল পরীক্ষায় ১৮টিতে সাবানীমান, ২৭টিতে মুক্ত এসিডমান, ১২টিতে আয়োডিনের মান এবং ৮টিতে আয়রনের মানে তারতম্য পাওয়া যায়। ২৭টি সয়াবিন তেলের মধ্যে ১৭টিতে বিআর, ১৩টিতে সাবানীমান এবং ১২টিতে আয়োডিনের মানের তারতম্য পাওয়া যায়।
১৫০টি বিভিন্ন সবজির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ের বাজার থেকে সংগৃহীত ৩০টি টমেটো নমুনার মধ্যে দুটিতে ক্লোরোপাইরিফস পেস্টিসাইড (কীটনাশক) পাওয়া যায়। গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১০ পিপিবি (প্রতি কেজিতে ১ মাইক্রোগ্রাম) হলেও দুটিতে ২০ ও ২২ মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ঢাকার বাজার থেকে সংগৃহীত ৩০টি বেগুনের নমুনার মধ্যে একটিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার সামান্য বেশি পরিমাণে ডাইমেথয়েট পেস্টিসাইড পাওয়া যায়। ৩০টি ফুলকপি নমুনার মধ্যে জেলা পর্যায়ের বাজার থেকে সাতটি ও ঢাকার বাজার থেকে সংগৃহীত পাঁচটিতে ক্লোরোপাইরিফস পেস্টিসাইড পাওয়া যায়। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ের দুটি নমুনায় গ্রহণযোগ্য (৫০ পিপিবি) মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। ৩০টি কাঁচা মরিচের নমুনার মধ্যে জেলা পর্যায়ের ৭টি এবং ঢাকার বাজারের ১৫টি নমুনায় ক্লোরোপাইরিফস পেস্টিসাইড পাওয়া যায়। গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১০ পিপিবি-এর বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়।

কীটনাশকের (পেস্টিসাইড) মাত্রা কমাতে ধৌতকরণ প্রক্রিয়া : ১৫০টি বিভিন্ন সবজি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতে বিভিন্ন রকমের কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পানিতে ৫ মিনিট করে রাখার পর দু’বার কীটনাশকের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। প্রথমবারের পর ২৯টি নমুনায় কোনো কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়বার ধুয়ার পর ১০টিতে কোনো কীটনাশক পাওয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয়বার ধুয়ার পরও ৬টি নমুনায় কীটনাশকের উপস্থিতি থেকে যায়।
জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে জরিপ প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী। বক্তব্য রাখেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স বিভাগের ডিন অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান, এফএও-এর ফুড সেফটি প্রোগ্রামের সিনিয়র ন্যাশনাল এডভাইজার অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন, ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এসকে রায় প্রমুখ।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/11/05/169026