৪ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:২০

সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা স্রোত

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের দু’মাস পরও বন্ধ হচ্ছে না রোহিঙ্গাদের স্রোত। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ৩০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আসার পক্ষকালের মাথায় গতকাল আবারো সীমান্ত অতিক্রম করছে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা। রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া এবং টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে এরা বাংলাদেশে ঢুকে। স্থল সীমান্ত আঞ্জুমানপাড়া দিয়ে প্রবেশ করা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে শূন্যরেখায় আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। তবে সেখানে ৩ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট সীমান্তে দায়িত্বরত কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি উপ-অধিনায়ক ইকবাল আহমদ।

কিন্তু শূন্য রেখায় অবস্থানরত মংডু বুচিদং এলাকার আলী আকবর (৫৪) ও আফজল হোসেন (৩৬)সহ অন্যদের দাবি আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে আরো প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পথে রয়েছে।
শীতের তীব্রতা ও খাদ্যভাবে তারা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।
আবার শাহপরীরদ্বীপ দিয়ে ভোর থেকে সারাদিনে প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষ জলসীমা পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ১৬ই অক্টোবরের পর ২রা নভেম্বর আবারো রোহিঙ্গা স্‌্েরাত আসার খবরে স্থানীয়দের ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এর আগে ১৬ই অক্টোবর আসা প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষকে চারদিন পর ১৯শে অক্টোবর কুতুপালং-বালুখালী ক্যাম্প এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এতে করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার অবস্থান কেবল বাড়ছে। ২রা নভেম্বর আসা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত আসছে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সীমান্ত সংশ্লিষ্টরা।
রোহিঙ্গা আসার সত্যতা নিশ্চিত করে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান বলেন, আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সীমান্তের নাফনদীর পাড়ে জড়ো করে রাখা হয়েছে। জেনেছি বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সময়ে তারা উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে এখানে এসে জড়ো হয়।
তিনি আরো জানান, নতুন আসা এসব রোহিঙ্গার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ৫-৬ হাজার রোহিঙ্গা আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে বসিয়ে রেখেছে বিজিবি। জড়ো করে রাখা এসব রোহিঙ্গাদের শুকনো খাবার ও স্বাস্থ্যগত সহায়তা দিচ্ছে এনজিও সংস্থা লোকজন।
এদিকে, গত কয়েকদিন থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু রোহিঙ্গা পরিবার সীমান্ত প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সহযোগীতায় কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় দায়িত্বশীলরা।
এদিকে ৩০ ও ৩১শে অক্টোবর পুরো কক্সবাজার জুড়ে ভারি বর্ষণ হয়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর প্রকৃতিতে এখন তীব্র শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। এতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা চরম বিপর্যয়ে পড়ছে। শিশুদের নিউমোনিয়া ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট বাড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন রয়েছে শূন্য রেখায় ও ক্যাম্পে অবস্থানরত আশ্রিতরা।

 

কুতুপালংয়ে শূন্য রেখায় আটকা ৫০০০ রোহিঙ্গারা
সীমান্তের শূন্য রেখাস্থলে দু’দিন বিজিবির প্রতিরোধের মুখে আটকা পড়া প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে অবশেষে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির সহায়তায় তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যা ৬টা (এ রিপোর্ট লেখাকালীন) পর্যন্ত তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, শূন্য রেখায় আটকে দেয়াদের দুদিন পর ক্যাম্পে নেয়ার খবর পেয়ে ওপারে আরো হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে সীমান্ত পারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।

সূত্র মতে, গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে নতুন করে উখিয়ার পালংখালি আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সীমান্তে পাহারারত বিজিবি সদস্যরা তাদের শূন্য রেখায় আটকে দেয়। গত দু’দিন তারা সেখাইে ছিল। ওখানে বিজিবি, আইএনজিও এবং বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা স্বজনরা তাদের খাদ্য সরবরাহ করেন। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ চলায় সীমান্তে খোলা আকাশে তারা চরম বিপর্যস্ত সময় পার করে। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে খুব বেকায়দায় পড়ে অনেক পরিবার।
বিজিবি কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর নিয়মতান্ত্রিকভাবে তল্লাশি করে শুক্রবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের কড়া পাহারায় কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসা শুরু হয়। এ কার্যক্রমে আরআরসি, ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ সহযোগিতা করছে বলে জানান মেজর ইকবাল। এক প্রশ্নের জবাবে, উপ-অধিনায়ত আরো বলেন, ওপারে আরো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ঢুকার অপেক্ষায় রয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত নতুন কোন রোহিঙ্গাকে শূন্য রেখায় দেখা যায়নি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=90415