৪ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:০৯

ফুঁসে উঠছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো

জনশক্তি রফতানির অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া এখনো সিন্ডিকেটমুক্ত হওয়ার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় গলাকাটা হারে অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১০ সিন্ডিকেট চক্রের কবলে পড়ে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু জি টু জি প্রক্রিয়ার কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নির্বিকার। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ না পেয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। অনতিবিলম্বে সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া না হলে গণবিস্ফোরণের হুঁমকি দিয়েছেন জনশক্তি রফতানিকারকরা। তারা মালয়েশিয়ার সিনার ফ্লাক্স নামের অনলাইন কোম্পানিকে সার্ভিস চার্জের নামে হুন্ডির মাধ্যমে পাঁচ হাজার রিংগিট (প্রায় এক লাখ টাকা) ঘুষ দিতেও রাজি হননি। মধ্যস্বত্বভোগী দালালচক্রের হাতবদল হয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু একেকজন কর্মীর অভিবাসন ব্যয় দফায় দফায় বাড়ছে। সর্বশেষ গত ১৪ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়ায় নির্মাণ ও কারখানা কর্মীর সার্ভিস চার্জ ও অভিবাসন ব্যয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চাইতে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কর্মী পাঠাচ্ছে না। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১০ সিন্ডিকেট জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চাইতে কয়েকগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে বায়রার সাধারণ সদস্যদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া হলে অভিবাসন ব্যয় প্রায় অর্ধেক কমে যেত। বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। সিন্ডিকেটকে একচেটিয়া কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া না হলে সরকার নির্ধারিত এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়েই জি টু জি প্লাসে কর্মী পাঠানো সম্ভব। জি টু জি প্লাসে প্রথমে কর্মী প্রতি ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একজন কর্মী প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের জনশক্তি রফতানিকারকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে ১০ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ও বায়রার সাবেক এক শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন। এতে বঞ্চিত শত শত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ১০ সিন্ডিকেটের ওই অন্যতম সদস্যের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে অবিলম্বে সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। জি টু জি প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠাতে ধীরগতির দরুণ ইতোমধ্যেই শত শত কর্মীর মেডিক্যাল পরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা। ১০ সিন্ডিকেট ১২টি মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা করে তাদের পাসপোর্ট মাসের পর মাস ধরে রেখেছে। কেউ অন্য দেশে যেতে চাইলে তাদের পাসপোর্টও ফেরত দেয়া হচ্ছে না। একাধিক ভুক্তভোগী এ তথ্য জানিয়েছেন। বিএমইটির সূত্র জানায়, বিগত ৮ মার্চ থেকে গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় ৫৭ হাজার ৫০৬ জন কর্মী ছাড়পত্র নিয়ে মালয়েশিয়া চাকরি নিয়ে গেছে।

ভিটেমাটি ও গবাদিপশু বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণ করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসী কর্মীরা। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে, এসব দেখার যেন কেউ নেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিও এ ব্যাপারে অসহায়। প্রবাসী মন্ত্রী বিদেশে কর্মী পাঠানোর অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য অনেকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু সুবিধাবাদী জনশক্তি রফতানিকারকরা এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করছে না। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লক্ষাধিক কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছেন। জনশক্তি রফতানি বাড়লেও প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান শুরু হয়েছে। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উপস্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিট্যান্স কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আট লাখ ৯৪ হাজার ৫৪ জন চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের থেকে ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম এসেছে। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব না হলে জনশক্তি রফতানিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অতি সম্প্রতি গুলশানের একটি বিলাশবহুল হোটেলে বায়রার এজিএমে শত শত রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ১০ সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানান। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই এজিএমে তুমুল হইচইয়ের মধ্যদিয়ে ১০ সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, ঢাকায় বায়রার কার্যালয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে দু’টি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। ১০ সিন্ডিকেটের অনাপত্তি সার্টিফিকেট ইস্যুর মাধ্যমে সব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। ১০ সিন্ডিকেটের অধীনেই সার্ভিস চার্জ পরিশোধের মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। আজ শনিবার গুলশানের একই হোটেলের বায়রার উদ্যোগে ১০ সিন্ডিকেটের সাথে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দর কষাকষির অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সবার কর্মী পাঠানোর ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে বলে একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক জানিয়েছেন। বায়রার ওই এজিএমে ১০ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ও বায়রার সাবেক সভাপতি গোলাম মুস্তাফা বায়রার এক হাজার ৪০০ সাধারণ সদস্যের ক্ষোভের কথা উপলব্ধি করে বলেন, মালয়েশিয়ার ১০ সিন্ডিকেটের সাথে আমি সম্পৃক্ত হয়ে জীবনে একটি বড় ভুল করেছি। মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসের সিন্ডিকেটে প্রবেশ করে আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। এই সিন্ডিকেটে যুক্ত না হলে আমি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে আরো বেশি ভালো থাকতাম। তিনি সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে জি টু জি প্লাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জোর দাবি জানান। এদিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রের সত্যায়নের জন্য ফ্যাক্টরি বা কর্মস্থল পরিদর্শনের নামে চলছে রমরমা ঘুষ-বাণিজ্য। হাইকমিশন এখন দালালচক্রের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। ঘুষ না দিলে হাইকমিশনে কর্মী নিয়োগের কোনো ফাইল একটুও নড়ে না বলে জানা গেছে। একটি অসমর্থিত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সিন্ডিকেটের অধীনে কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ায় সিনার ফ্লাক্সের অনলাইন কার্যক্রমের জন্য দাতো আমিনকে প্রত্যেক কর্মী প্রতি পাঁচ হাজার রিংগিট দেয়ার প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। বায়রার একাধিক সদস্য এ অভিযোগ তুলেছেন। এ ধরনের প্রস্তাব কেউ মেনে নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বায়রা সদস্যরা। বায়রার সাবেক মহাসচিব ও আটাব গণতান্ত্রিক সচেতন পরিষদের প্যানেল প্রধান মনছুর আহামেদ কালাম বলেছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ১০ সিন্ডিকেট কুক্ষিগত করে রেখেছে। ১০ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া কর্মী পাঠিয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এক হাজার ৩০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। অচিরেই সিন্ডিকেট বন্ধ এবং সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া না হলে বিস্ফোরণ ঘটবে। যা বায়রার পক্ষে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার ১০ সিন্ডিকেটের মতো আর যাতে অন্য কোনো দেশে কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বায়রার সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আকবর হোসেন মঞ্জু বলেন, ১০ সিন্ডিকেটের জিম্মিদশা থেকে এক হাজার ৪০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক-প্রতিনিধি মুক্তি চান। চিহ্নিত ১০ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœœ হচ্ছে এবং মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন। বোয়েসেলের আদলে জি টু জি প্লাসে সিন্ডিকেটের একচেটিয়া ব্যবসা দীর্ঘস্থায়ী করতে দেয়া ঠিক হবে না। বায়রার ওই সাবেক নেতা বলেন, ১০ সিন্ডিকেটের মূল হোতা সিনার ফ্লাক্সকে কর্মী প্রতি পাঁচ হাজার রিংগিট সার্ভিস চার্জের নামে ঘুষ নেয়ার দাবি কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মেনে নেবে না। এই প্রথা চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তিনি জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় যোগ্য সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গত ১ নভেম্বর রাজধানীর হোটেল লালুনায় সিন্ডিকেটবিরোধী বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এক জরুরি সভায় জনশক্তি রফতানিকারকরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো মালয়েশিয়ার কথিত সিনার ফ্লাক্স অনলাইন কোম্পানিকে জনপ্রতি পাঁচ হাজার রিংগিট দেয়া হবে না। বায়রার সাবেক সভাপতি আলহাজ আবুল বাসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জরুরি সভায় সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে অলিখিতভাবে সিনার ফ্লাক্স কোম্পানিকে প্রত্যেক কর্মীর জন্য পাঁচ হাজার রিংগিট পরিশোধের প্রস্তাব উঠায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। সভায় আবুল বারাকাত ভ‚ঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোকাব্বের হোসেন, বায়রার সাবেক যুগ্মসচিব-১ আলহাজ আবুল বাশার, আনোয়ার হোসেন, ফরিদ আহম্মদ, খাদেম দুলাল ও মো. শহীদ বক্তব্য রাখেন। বায়রার সাবেক মালয়েশিয়া সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির আহŸায়ক ও ইস্টার্ন বে বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো. গিয়াস উদ্দিন বাবুল (পাটওয়ারী) ইনকিলাবকে বলেন, গত দু’মাস ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের চাহিদাও কমে গেছে। সিন্ডিকেটের অধীনে সব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেলে কর্মী প্রতি পাঁচ হাজার টাকা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চার্জ দেয়া যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বাবুল বলেন, কথিত সিন্ডিকেটের অধীনে কর্মী প্রেরণ দীর্ঘায়িত হলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সিন্ডিকেটের জিম্মিদশা থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে মুক্ত করার জোর দাবি জানান।

১৯৮৭ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রাথমিকভাবে উন্মোচিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধশালী এই দেশটিতে প্রায় পাঁচশত রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়। ২০০৯ সালে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৎকালীন শ্রম সচিবের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের কারণে এবং অতিরিক্ত কর্মী পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করে। এতে প্রায় ৫৫ হাজার কলিং ভিসা বাতিল হয়ে যায়। এতে বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার পর জি টু জি প্লাসে ১০ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী নেয়া শুরু হয়। শ্রমবাজার শুধু ১০ সিন্ডিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় বায়রার বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বায়রার সব সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুককে আহŸায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কমিটির কার্যক্রম আরো গতিশীল করার জন্য আরো ১২ বায়রা সদস্যকে কমিটিতে সম্পৃক্ত করা হয়। গঠিত কমিটি এ যাবত ১১টি সভা করেছে। গত ৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ১০ সিন্ডিকেটকে নেতৃত্বদানকারী সিনার ফ্লাক্স কোম্পানির মালিক দাতো শ্রী মোহাম্মদ আমিন বিন আব্দুল নূরের সাথে বৈঠকে ড. মোহাম্মদ ফারুক দ্ব্যার্থহীন ভাষায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্তকরণের আহŸান জানান। ওই সভায় বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সবার জন্য উন্মুক্ত না হওয়ায় বায়রা সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। দাতো শ্রী মোহাম্মদ আমিন বলেন, সব সদস্যের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের চাবিকাঠি তার হাতে না। কারণ দুই দেশের কেবিনেট পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের আলোকে ১০ এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে। শ্রমবাজার সবার জন্য উন্মুক্তকরণ অথবা আরো কিছু এজেন্সিকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তকরণের কোনোটাই স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় বলেও দাতো আমিন উল্লেখ করেছেন। ড. মোহাম্মদ ফারুক গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলেছেন, ১০ সিন্ডিকেট এক লাখ ২০ হাজার চাহিদাপত্র আনলেও এক বছরে ৪৫ হাজার কর্মী পাঠাতে পেরেছে। সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পেলে কর্মী প্রেরণের হার বহুগণ বাড়ত। ১০ সিন্ডিকেটের কারণে জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্সের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছে না। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বায়রার সব সদস্যের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস কিভাবে পরিচালিত হবে তা স্পষ্টকরণ এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সদস্যদের আরো আন্তরিক ও সক্রিয় ভ‚মিকারও গুরুত্বারোপ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। বায়রার সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে (৩৩-চ) উল্লেখ রয়েছেÑ কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্যের পদ ছয়টি কারণে আপনা আপনিই শূন্য হয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছেÑ বায়রার সদস্যদের স্বার্থপরিপন্থী কাজে কাউকে জড়িত থাকতে দেখা গেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনশক্তি রফতানিকারক গতকাল শুক্রবার বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ১০ সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিয়ে বায়রার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মিন্টু বায়রার সব সদস্যের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এতেই বায়রার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তিনি আপনা আপনিই অযোগ্য হয়ে গেছেন। ওই পদে থাকার তার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। আজ শনিবার গুলশানের দি ওয়েস্টিন হোটেলে বায়রার পূর্বঘোষিত ১০ সিন্ডিকেটের সাথে সাধারণ সদস্যদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে উল্লিখিত বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ তথ্য জানিয়েছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/102715/