৩ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:০৯

সুখবর নেই পিয়াজে, আদার ঝাঁজ বেড়েছে

চাল, কাঁচামরিচ, সবজির পর বেড়েছে পিয়াজের দাম। বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। এবার এই পিয়াজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদার ঝাঁজ। পিয়াজের কেজি এক মাসে দ্বিগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার উপরে। আর গত সপ্তাহের তুলনায় আদার কেজি মানভেদে ১৫-২৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকা। এছাড়া মাসের ভিত্তিতে আদার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।

পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পিয়াজের দাম। ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে দেশি পিয়াজের কেজি এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পিয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে আদা। চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি আদার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স আলহাজ ভাণ্ডারের মালিক শহীদুল ইসলাম বলেন, আদার কৃত্রিম সংকট নেই। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণেই মূলত আদার দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত আদার সরবরাহ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় আদার উৎপাদন কম। চাহিদা মেটাতে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আদা আমদানি করতে হয়। আর এই আমদানি নির্ভরতাই এখন বাড়াচ্ছে আদার দাম।

শ্যামবাজারের পাইকারি দোকান ঘুরে আমদানি করা আদা প্রতি কেজি মানভেদে ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও পণ্যটি প্রতি কেজি ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। অন্যদিকে এদিন পাইকারি পর্যায়ে দেশে উৎপাদিত আদা মানভেদে কেজিপ্রতি ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দুই সপ্তাহ আগেও পণ্যটি কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় আদা প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা। আর ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা প্রতি কেজি আদা ১০০ টাকার নিচে কেনাবেচা হচ্ছে।
শ্যামবাজারের আরেক ব্যবসায়ী জানান, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। বৃষ্টির কারণে আদার ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাজারে আদার সংকট রয়েছে। এছাড়া ভারতে এবার দুই দফা বন্যায় আদার উৎপাদন মার খেয়েছে।
আদা আমদানিকারক আজিম জানান, সাধারণত গ্রাহক পর্যায়ে দেশে উৎপাদিত আদার চাহিদা বেশি। দেশের তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি আদা উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশের নানা প্রান্তে আদা আবাদ হয়। সব মিলে দেশের অভ্যন্তরে বছরে ৬০ হাজার টন আদা উৎপাদন হয়। এর পাশাপাশি পণ্যটির বাড়তি চাহিদা পূরণে আমদানি করা হয়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দর হিসেবে, বর্তমানে কেজিপ্রতি আদা ১০০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১৫০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে আদা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আর গত এক বছরের ব্যবধানে আদার দাম ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর অক্টোবরে আদার কেজি ছিল ৬০-১১০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে আদার চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন। বছরে গড়ে এক লাখ টন আদা আমদানি করতে হয় (চাহিদার ২৭ শতাংশ)। আমদানি করা আদার ৫০ শতাংশ ভারত, ৩০ শতাংশ চীন আর ২০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে। এ আমদানিনির্ভরতাই আদার দাম বাড়ানোর একটি বড় কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশে বছরের পিয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ১৬-১৭ লাখ টন। সে হিসাবে বছরে ঘাটতি থাকে ৮-৯ লাখ টন। এই ঘাটতি পূরণে দেশের বাইর থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। শ্যামবাজার পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ প্রতি কেজি ৫২-৫৫ টাকা। আর মিশর থেকে আনা প্রতি কেজি পিয়াজ ৪৪-৪৭ টাকা।
শ্যামবাজারের আরেক ব্যবসায়ী জানান, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। বৃষ্টির কারণে পিয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভারতে এবার দুই দফা বন্যায় পিয়াজের উৎপাদন মার খেয়েছে। বিপুল পরিমাণ পিয়াজ নষ্ট হয়েছে। এখন ভারতেই ৩৮ থেকে ৪০ রুপিতে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বুধবার সচিবালয়ে ‘কৃষি সমপ্রসারণ বাতায়ন’-এর পরীক্ষামূলক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাজারে অসহনীয় সবজির দাম নিয়ে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষকে শীতের সবজি আসা পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে বৃষ্টিতে সবজির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু অদম্য কৃষক আবার চাষ শুরু করেছে। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সবজি ও ফলের উৎপাদন তিনগুণ বেড়েছে। বৃষ্টিতে হয়তো বীজতলা নষ্ট হয়েছে কিন্তু আবার নতুন করে লাগানো হয়েছে।

ওদিকে হঠাৎ করে পিয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসায় মঙ্গলবার দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে পণ্যটির হঠাৎ করে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এছাড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি মনিটরিং টিম মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত হয়। টিমের সদস্যরা রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও কাওরান বাজার পরিদর্শন এবং পণ্যটির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে টনপ্রতি ৩০২ ডলার মূল্য ধরে ৫৯ হাজার ৭২২ টন পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ২৯০ ডলারে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৬২ টনের। অর্থাৎ ঋণপত্র খোলার সময়ে পিয়াজের কেজিপ্রতি মূল্য ধরা হয় ২৪ টাকা। শেষ পর্যন্ত তা নিষ্পত্তি হয় ২৩ টাকায়। এছাড়া চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে টনপ্রতি ৩৩০ ডলার মূল্য ধরে ৪৯ হাজার ৩২০ টন পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ২৮৭ ডলারে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৫৫ টন। এক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলায় পিয়াজের দাম ধরা হয় কেজিপ্রতি ২৬ টাকা। অন্যদিকে তা নিষ্পত্তি হয় প্রতি কেজি ২৩ টাকায়। আমদানিকারকরা জানান, বাজারে বড়জোর আগামী এক সপ্তাহ পিয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=90312