৩ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫৭

খুনিরা পূর্বপরিচিত

সন্দেহের তীর স্বামী ও নায়িকা মুক্তার দিকে

রাজধানীর কাকরাইলে চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পূর্ব পরিচিত। খুনিদের টার্গেট ছিলেন শামসুন্নাহার কিন্তু ছেলে শাওন ঘটনাক্রমে মায়ের হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় তাকেও খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্বজনদের দাবি, আবদুল করিম এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া একাধিক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে শামসুন্নাহারের সাথে তার স্বামীর বিরোধ চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। সেই বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা।
আবদুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা বেশ কিছু দিন আগে কাকরাইলের ওই বাসায় গিয়ে শামসুন্নাহারের ওপর হামলা চালায় এবং বাসায় ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ হত্যাকাণ্ডে স্বজনদের সন্দেহের তীর এখন নিহতের স্বামী আবদুল করিম ও অভিনেত্রী মুক্তার দিকে। এ দিকে মা-ছেলে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক কলহ ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তবে তদন্তে বারবার সামনে আসছে পারিবারিক কলহের বিষয়টি।

হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ এ পর্যন্ত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ঘটনার রাতেই নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম, ওই বাড়ির দারোয়ান ও গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিনেত্রী শারমিন আক্তার মুক্তাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, মুক্তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে। তবে কী কারণে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ দিকে গতকাল সন্ধ্যার মা-ছেলের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা: সোহেল মাহমুদ বলেন, মা-ছেলের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে মায়ের বুকে একটি গভীর আঘাত রয়েছে। যেটি তার লান্সকে ছিদ্র করে ফেলেছে। আর শাওনের দুইটি আঘাত লান্স ও হার্টকে ছিদ্র করে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, আবদুল করিম ব্যবসার পাশাপাশি কাকরাইলে তার অফিস রয়েছে। তিনি বেশ কিছু বাংলা ছবির পরিচালক ও প্রযোজক। সেই সূত্র ধরে তার কাছে ছবির নায়িকা হতে মুক্তা এসেছিল নরসিংদী থেকে। মুক্তা এক পুলিশ কনস্টেবলের মেয়ে। সেখান থেকেই আবদুল করিমের সাথে মুক্তার পরিচয়। এরপর থেকে ভালোলাগা আর ভলোবাসা। একপর্যায়ে ২০১৫ সালে তাদের বিয়ে হয়। প্রায় বছর খানেক এ বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের কাছে গোপন ছিল। এরপর বিষয়টি পরিবারে জানাজানি হলেই শুরু হয় বিপত্তি। এ নিয়ে প্রায়ই ওই বাসায় শামসুন্নাহারের সাথে স্বামীর ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত বলে জানিয়েছেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা। অনেক সময় তাদের ঝগড়াঝাটি মিটমাট করতেন আশপাশের ফ্যাটের ভাড়াটিয়ারা। এ কলহ নিয়ে বিভিন্ন সময় শামসুন্নাহারকে হত্যার হুমকিও দিতেন আবদুল করিম ও ছোট স্ত্রী মুক্তা।

অন্য একটি সূত্র জানায়, গত ৮-৯ মাস আগে অভিনেত্রী মুক্তা ও তার ভাই এবং আরো দুইজন নিয়ে উইলস লিটল ফাওয়ার স্কুলের বিপরীত দিকে তমা সেন্টারের পাশের গলির ৭৯/১ নম্বর বাড়ির ৫ তলার ওই বাসায় হামলা ভাঙচুর চালায়। এতে আহত হয়েছিলেন শামসুন্নাহার। পরে থানায় জিডি করার কথা থাকলেও কোনো কারণে সে জিডি আর করা হয়নি।
জানা গেছে, শামসুন্নাহারের কাছে মুক্তার বিয়ের কাবিননামা আসার পর থেকেই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু হয়। এ ছাড়া প্রায়ই আবদুল করিম বাসার বাইরে রাত কাটাতেন। ফলে শামসুন্নাহার ও আবদুল করিমের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এক প্রতিবেশী জানান, শামসুন্নাহার তার কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তার সামনে বসে আবদুল করিম মুক্তার সাথে মোবাইল ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন, যা নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। একপর্যায়ে আবদুল করিম মুক্তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে, একটি নকল ডিভোর্স লেটার দেখিয়েছিল শামসুন্নাহারকে, যা নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে।
সাত বছর ধরে আবদুল করিমের ওই বাড়ির ছয় তলায় ভাড়া থাকেন ঠিকাদার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমি গত সাত বছর থেকে এ বাড়ির ছয়তলায় ভাড়া থাকি। এ পরিবারটির সাথে আমরা কানেকটেড। করিম সাহেবের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার গত বছরের শেষের দিকে তার স্বামীর বিয়ের বিষয়টি জানেন এবং আমাদের জানান। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ আর করিম সাহেবের তৃতীয় স্ত্রীর বাড়িও একই জেলায়। তাই টাকা-পয়সা দিয়ে স্ত্রীকে করিমের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলাম আমরা। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, এরপর একদিন ভাবীকে (শামসুন্নাহার) বলেছিলাম, ভাবী আপনি ভাইকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। নইলে কিন্তু ভাইকে বাগে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। এর কয়েক দিন পরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রী করিমের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন। পরে করিম বাড়ি থেকে বের হয়ে যান, মুক্তাকে নিয়ে পল্টনের একটি ফ্যাটেও ওঠেন। তিনি আরো বলেন, গত পাঁচ মাস আগে শামসুন্নাহারের মেজো ছেলে অনিক বিদেশে যায়। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, বাবা তুমি বিদেশে যেও না। বিদেশ গেলে তোমার মাকে পাবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর ধরে এ ঝগড়ার কারণে আমরা প্রতিবেশীরা বিরক্ত। আমাদের আশঙ্কা ছিল এমন ঘটনা ঘটবে। তিনি বলেন, খুন হওয়ার কথা ছিল একজন। ছেলেটা আসলে পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। আমার ধারণা, ছেলে হয়তো মায়ের চিৎকার শুনে বাঁচাতে গেছে। যখন দুর্বৃত্তরা তাকে স্টেপ করেছে তখন হয়তো ছেলে শাওন বাসা থেকে প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেয়ায় সাড়ে ৪ তলার সিঁড়িতে তাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি দাবি করেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং খুনিরা পরিচিত।

বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার কাকরাইলের ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন আবদুল করিম।
এ দিকে তদন্তের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ঘটনার পরপরই স্বামী আবদুল করিম, নিহত মা-ছেলেসহ তাদের আত্মীয়স্বজনদের মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও র্যা ব। এ দুই বাহিনীর ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। এখন চলছে আলামতের পরীা-নিরীা।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত মা-ছেলের লাশের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা: সোহেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, সামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওনের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে মায়ের বুকে একটি গভীর আঘাত রয়েছে। যেটি তার লান্সকে ছিদ্র করে ফেলেছে। আর শাওনের দুইটি আঘাত লান্স ও হার্টকে ছিদ্র করে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে রমনা থানার এসআই আতোয়ার হোসেন কাকরাইলে নিহত মা-ছেলের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। সুরতহালে তিনি উল্লেখ করেন, সামসুন্নাহারের গলার নিচে থেকে থুতনি পর্যন্ত কাটা যখম, পেটের ডান ও বাম পাশে, ডান কাঁধে ও বগলে, ডান হাতের কনুইর ওপরে ও বাম হাত কাটা যখম রয়েছে। আর শাওনের গলার ডান পাশ থেকে বাম পাশ পর্যন্ত কাটা, বুকের ওপরে, দুই হাতের কনুইয়ে কাটা যখম রয়েছে।
নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে তার বোনের সাথে আবদুল করিমের বিয়ে হয়। আমাদের পরিবার ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত। আমরা সবাই পর্দা মেনে চলি। বিয়ের পর বোনের সংসারে কোনো ক্রোন্দল ছিল না। অবশ্য দুলাভাই তখন খুব দরিদ্র ছিলেন। পরে টাকা পয়সা হওয়া শুরু করে। আর তিনিও বেপরোয়া বনে যান। একপর্যায়ে তিনি ফিল্ম ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন ধরনের নায়িকাদের নিয়ে তিনি ইনজয় করা শুরু করেন, যা আমার বোন মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়েই মূলত বিরোধ শুরু হয়। দুলাভাই প্রায়ই বোনকে মারধর করত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুলাভাই ও মুক্তা ভাড়াটে খুনি দিয়ে আমার বোন ও ভাগনেকে হত্যা করে পথের কাঁটা সরিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, মা-ছেলের হত্যাকাণ্ডটি আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেই অনুসন্ধান করছি। আশ করছি, দ্রুতই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশ কিছু বিষয়কে মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ােভ কিংবা কলহ কিংবা পারিবারিকভাবে কাউকে বঞ্চিত করা, কিংবা লাভবান হওয়া কিংবা সম্পর্কের টানপড়নের কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া আবদুল করিমের সাথে কারো ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ হত্যাকাণ্ডে ঠিক কতজন অংশ নিয়েছেÑ তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের ধারণা দুর্বৃত্তের সংখ্যা ছয়-সাতজনের কম নয়। কারণ ধারালো অস্ত্রের আঘাতের পর যে কেউ শরীরের সর্বশক্তি নিয়োগ করে বাঁচার চেষ্টা করেন। তাই তাদের সামলাতে কমপে পাঁচ-ছয়জন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নিহতের প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সামনে রেখে তদন্তকাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে আবদুল করিমের পারিবারিক কলহ অন্যতম। এ ছাড়া তদন্তে পরিবারটির ধর্মীয় মতাদর্শের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, পেশায় আবদুল করিম আদা-রসুন-পেঁয়াজ আমদানিকারক। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং নিজেও অভিনয় করেছেন। পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর কারণ নিজের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বও হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। হয়তো আবদুল করিমকে হত্যার জন্য বাড়িতে এসে, তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরাÑ এমন ধারণা নিয়েও কাজ করছে পুলিশ।

গত ১ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে নিজ ঘরে মা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন মা শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছোট ছেলে সাজ্জাদুর করিম শাওন (১৭)। খবর পেয়ে উইলস লিটল ফাওয়ার স্কুলের বিপরীত দিকে তমা সেন্টারের পাশের গলির ৭৯/১ নম্বর বাড়ির পাঁচ তলায় বাসা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি ও র্যা বের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, শাওন ঢাকার একটি ইংলিশ মিডিয়ামের এ লেভেলের ছাত্র। তারা তিন ভাই। দুই ভাই মুন্না ও অনিক থাকেন বিদেশে। নিহত শাওনের বাবা আবদুল করিমের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। ছয়তলা ওই বাড়িসহ পাশের একটি বাড়ির মালিক আবদুল করিম। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। রাতে এ খবর লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছিল।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/265146