৩ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫২

আরাকানে আর কত এ নিষ্ঠুর তাণ্ডব?

নিজাম উদ্দীন

ভয়াল নিষ্ঠুর নির্যাতনের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত জীবনে বেঁচে যাওয়া আরাকানি মুসলিম নারী-শিশুরা আজ আমাদের দেশে শরণার্থী। আতঙ্ক আর আতঙ্কে নিজ দেশটি হয়ে গেছে বিদেশ। স্বদেশে এরা ছিল সুখী, নানা বঞ্চনার মাঝেও, এরপরও স্বপ্ন ছিল অনেক। একদিন নাগরিকত্ব পাবে। পরিবারের সন্তানসন্তুতি ছিল তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের স্বপ্ন। কিন্তু আগুন সন্ত্রাস, রাইফেল সন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও তলোয়ার সন্ত্রাসসহ নানা সন্ত্রাসের শিকার হয়ে তাদের অনেকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে নিজ দেশ মিয়ানমারে। নারী ও শিশুরা এবং ৬৫-৭০ বছরের মহিলারাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাননি। সেনাদের অপদস্থের পরিত্রাণে মুসলিম নারী কত শতবার বাবা ডেকেছে; কিন্তু ধর্ষণ নির্মমতার হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাদের বাবা ও ভাই তাদের মেয়ে বা বোনকে মিয়ানমারের নাডালা বাহিনী ও সেনাদের ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। আরাকানের মাটি সাক্ষী আছে এ নির্যাতনের। মুসলমানের নিথর দেহ নিয়ে তামাশা করেছিল জান্তা ও সু চি সরকারের সেনাবাহিনী ও নাডালা বাহিনী। বৌদ্ধরা এত নির্মম, এত পাষণ্ড হয় তা আগেকার কোনো বই পুস্তুকে পাইনি।

কান্না শুনেছি টিভি পর্দায় আরাকানি নির্যাতিত মহিলার। প্রতিদিন বুঝি এ তাণ্ডব চলছে, চলবে। পৃথিবীর প্রতিবাদী সৈনিক পেশার লোকেরা এখন কোথায়? যুদ্ধ কেন হয়? নিশ্চয় অত্যাচার চিরতরে নির্মূল করার জন্য। আরাকানে তা হলে কী হচ্ছে? অত্যাচার, অনাচার এবং অনাচার। এ কোন সভ্যতা আজ মানুষের চরম সত্তাকে করে পরিহাস!
গত সপ্তাহের পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে পালাবার অপেক্ষায় আছে আরো লাখো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। মিয়ানমারের পিশাচদের কে ঠেকিয়ে দেবে এমন মায়ের সন্তানরা বুঝি এ পৃথিবীতে নেই। মিয়ানমারের এ একগুঁয়েমি নীতির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে তারা একসময় উত্তর কোরিয়ার মতো হবে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল না থাকলে উপমহাদেশে নতুন দাঙ্গা-হাঙ্গামার সূত্রপাত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। জাতিসঙ্ঘ বলে যাচ্ছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমার থেকে এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারেই। অং সান সু চিকে নিরীহ মুসলিমদের গণ-হত্যার অনুমতি কে দিলো? কুয়ালালামপুর গণআদালত সু চি সরকারকে গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তারা বলেছেন সুু চি রাখাইনে গণহত্যার পক্ষে ওকালতি করেছেন।

আন্তর্জাতিক মহলের উচিত জাতিগত নিধনের জন্য জান্তা সরকার ও সু চিকে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আদালত কর্তৃক হেনস্তা করা। যুদ্ধাপরাধীর মামলায় ফেলে সুচির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা। মনীষীরা বলছেন, মিয়ানমারের নির্যাতন বন্ধে এবং প্রচণ্ড চাপ দিতে চীন ও রাশিয়াকে কনভিনস করতে হবে। বিশ্বকে মনে রাখতে হবে মিয়ানমারের মুসলমানরা ছিন্নমূল নয়। জীব হত্যা মহাপাপ, এখন কি বৌদ্ধ ধর্মে এ নীতি কার্যকর নেই? অহিংসার পরিবর্তে কি সহিংসতাকে বরণ করে নিয়েছে? যদি মনে করেন সব বৌদ্ধ এটার জন্য দায়ী নয়, তাহলে প্রমাণ করুন। সু চির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধী হয়ে মাঠে নামুন। সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করুন। প্রতিবাদ প্রতিরোধে পিছিয়ে থাকা যাবে না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/265017