২ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণের দাবি

বুয়েটে পঞ্চম দিনের মতো ক্লাস হয়নি

বহিরাগত ব্যক্তি, গাড়ির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য আট দফা দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার পঞ্চম দিনের মতো ক্লাস বর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ক্যাম্পাসকে বহিরাগত যানবাহনমুক্ত করার দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
এদিকে, দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত শুক্রবারের মারামারির ঘটনার সূত্রপাত কী নিয়ে, তা জানতে কাজ শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি।

এই কমিটি ও বুয়েটের একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনের পদচারী-সেতুর ওপর থেকে ১০-১২ জন বহিরাগত গাঁজা বিক্রেতা ও সেবনকারীকে আটক করেছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে মো. রাজু নামে বুয়েটের একজন কর্মচারীর ছেলেও ছিলেন। ওই ঘটনার জের ধরেই পরদিন শুক্রবার বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে। এখন রাজুর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের চকবাজার থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজুসহ ১০-১২ জনকে পদচারী-সেতুর ওপর গাঁজা সেবনরত অবস্থায় বুয়েটের ছাত্ররা নিষেধ করলে তাঁদের তিনজনকে মারধর করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজু তাঁর দলবল নিয়ে শেরেবাংলা হলের সামনে হামলা করেন।
শুক্রবার জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনায় গত সোমবার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বিনা উসকানিতে ৩০-৪০ জন ছাত্র পলাশী থেকে ঢুকে বুয়েটের ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আক্রমণকারীদের হাতে চাপাতি, হকিস্টিক, রড, স্টাম্প, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদি দেখা গেছে। তাঁদের আক্রমণে আটজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মারামারির আগে জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থীকে বুয়েটের সোহরাওয়ার্দী হলে আটকে রাখা হয়েছে বলে খবর আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ছাড়াতে হলের শিক্ষার্থীরা ছুটে যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

যাঁকে আটকে রাখা হয়েছে বলে খবর এসেছিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সেই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সেখানে গেলে তারা আমার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর আমাকে আটকে রাখে। পরে জানতে পারি, আগের দিন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আবাসিক এলাকার দুজনকে আটক করেছিল। জহুরুল হক হলের পরিচয় দেওয়াতেই আমার সমস্যা হয়েছে।’
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক মো. আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাচ্ছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁদের কোনো ব্যানার ছিল না। হলুদ রঙের কাগজে লিখে এনেছিলেন, ‘বহিরাগত যানবাহনমুক্ত ঢাবি চাই’। বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে তাঁরা কলাভবনে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশ করেন।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1356411