২ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৫

গ্র্যাচুইটি ও পেনশনের টাকা সঞ্চয়পত্রে নয়

পরিপত্র জারি শিগগির * আয়কর ও সঞ্চয়পত্র বিধিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই

গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে, শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে। যে সব প্রতিষ্ঠান গ্র্যাচুইটির টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে সে সব প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র বিধিমালা অনুযায়ী শুধু মূল টাকা ফেরত পাবে। মুনাফা পাবে না। ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সব বিনিয়োগকারীকে সঞ্চয় বিধিমালা মেনে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে শিগগিরই পরিপত্র জারি করা হবে। এ জন্য আয়কর বিধিমালা ও সঞ্চয়পত্র বিধিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক, আর্থিক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে আসছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আইআরডি হঠাৎ করে গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকা বিনিয়োগের সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আইআরডি জানায়, এ ধরনের সুবিধা আর দেয়া হবে না। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়ে। মুনাফা ফেরত চেয়ে তারা আইআরডি সচিবের কাছে চিঠি দেয়।

আয়কর বিধিমালা ও সঞ্চয়পত্র বিধিমালায় গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বৈধতা নিয়ে মূলত সমস্যার সৃষ্টির হয়। আয়কর বিধিমালায় বলা হয়, ৫৮ডি বিধি অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকা ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ৪৯ বিধি মোতাবেক বিনিয়োগ করতে হবে। ৪৯ বিধিতে বলা হয়, ট্রাস্ট অ্যাক্ট-১৮৮২ ও কোম্পানিজ অ্যাক্ট-১৯১৩ বা কোম্পানি আইন-১৯৯৪ এ অনুমোদিত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। ট্রাস্ট অ্যাক্টে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের কথা বলা আছে। অর্থাৎ অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আয়কর আইনে বাধা নেই। ২০০৭ সালে বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট কোম্পানিকে এমন নির্দেশনা দেন এনবিআর। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিধিমালা-১৯৭৭ অনুযায়ী, বিধি-৫ অনুযায়ী গ্র্যাচুইটির অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

দুই আইনের বিধিগত বিভ্রান্তির কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে আয়কর বিধিমালায় বৈধতা থাকায় ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ফান্ডের অর্থ ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য মতে, গ্র্যাচুইটির টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইম ব্যাংকের ৪৫ কোটি ১০ লাখ, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৪ কোটি ৬০ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১৪ কোটি ১ লাখ, বার্জার পেইন্টসের ১১ কোটি ৮০ লাখ, ঢাকা ব্যাংকের ৬ কোটি ৪০ লাখ ও ইউনাইটেড লিজিংয়ের ৪৮ লাখ টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) তথ্য মতে, ব্যাংক ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর গ্র্যাচুইটি ফান্ডের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে।

বিধিগত অস্পষ্টতা দূর করতে ৯ আগস্ট সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহাকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে আইআরডি। কমিটির কাজ ছিল সঞ্চয়পত্র বিধিমালা ও আয়কর বিধিমালায় অসামঞ্জস্য থাকলে তা দূর করা। আইআরডি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাক অধিদফতর ও সঞ্চয় অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। ১০ অক্টোবর কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না। ভবিষ্যতে যাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর ভুল না করেন সে জন্য শিগগিরই আইআরডি থেকে পরিপত্র জারি করা হবে। আর যারা ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছেন তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু মুনাফা দেয়া হবে না। তবে, এ জন্য আয়কর বিধিমালা ও সঞ্চয়পত্র বিধিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কারণ প্রতিটি আইনের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা আলাদা। এনবিআর গ্র্যাচুইটি ফান্ড অনুমোদনের জন্য আয়কর আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে। আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সঞ্চয়পত্রের বিধিমালা অনুসরণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে সঞ্চয়পত্র বিধিমালা মানতে হবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু সাহা যুগান্তরকে বলেন, অন্য আইন-বিধিমালায় যাই থাকুক না কেন, সঞ্চয় বিধিমালা মেনেই সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। এ ব্যাপারে আইআরডিতে কমিটির সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অসুবিধায় পড়তে না হয় সে জন্য শিগগিরই আইআরডি থেকে ‘স্পষ্টীকরণ’ পরিপত্র জারি করা হবে। তিনি আরও বলেন, যারা ইতিমধ্যেই গ্র্যাচুইটি ফান্ডের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তাদের সমস্যা সুরাহায় আইআরডি কাজ করছে।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/11/02/168320