১ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৫৬

এবার ঢামেকের বহির্বিভাগে তালা, দুর্ভোগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের জিম্মি করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শত শত রোগী ও স্বজনরা। তাদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে ব্যাহত হয়েছে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত রোগীদের সেবা না দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন। রোগীরা সেবা না পেয়ে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বাধ্য হন। নরসিংদী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাসিমা আক্তার বলেন, সোমবার ডাক্তার দেখিয়ে গেছি। মঙ্গলবার রিপোর্ট দেখানোর কথা।

অসুস্থ শরীর নিয়ে খুব কষ্ট করে সকালে এসেছেন। কিন্তু আন্দোলনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় ডাক্তার দেখাতে পারেননি তিনি। কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন ফাতেমা বেগম। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বহির্বিভাগে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন তিনি। জানান, তার স্বামী আলম মিয়াকে এক মাস আগে এ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে গেছেন। আবার আসতে বলেছেন। কিন্তু গতকাল এসে দেখেন হাসপাতাল বন্ধ। তিনি বলেন, ডাক্তাররা আন্দোলন করায় তাদের কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। শুধু নাসিমা বা আলম মিয়া নন, গতকাল ঢামেকের বহির্বিভাগে শত শত রোগী আন্দোলনের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। রোগী নিয়ে সঙ্গে আসা স্বজনরাও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অসহায় অবস্থায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকাল ৮টা থেকে ৯টা ১০ মিনিট পর্যন্ত পুরাতন বহির্বিভাগ দিয়ে ৪৯২টি এবং নতুন ভবনের বহির্বিভাগে ১০০টি টিকিট বিক্রি করা হলেও দিনের শুরুতে অল্প কিছু রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা আর রোগী দেখেননি। এরপর বহির্বিভাগের বিভিন্ন গেটে তালা দেন আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন। আন্দোলনের কারণে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরেন অনেকে। কেউবা ক্ষোভ ও কষ্ট নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যান। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে আন্দোলন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা বহির্বিভাগের গেট বন্ধ রেখে অবস্থান নেয়ায় বিপাকে পড়েন রোগীরা। গত ২৯শে অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের হাতে ডাক্তারকে মারধরের প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। চিকিৎসকরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও চাকরিস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান তারা। এদিকে বিকালে তাদের দাবি পূরণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে দেখা করেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন পিজান। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, মন্ত্রী আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের সকল দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া, আজ বুধবার মন্ত্রী ঢামেক হাসপাতালে আসবেন বলে তাদের জানিয়েছেন। এ জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি ‘ভিজিটর কার্ড’ ছাড়া কোনো বহিরাগত হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে কর্মস্থলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। কর্মসূচিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসারসহ (এইচএমও) অন্য চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কর্মস্থলে ফিরবেন না চিকিৎসকরা। বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে নিজেদের দাবি-দাওয়া উল্লেখ করে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো- চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একজন রোগীর সঙ্গে দুইজনের বেশি স্বজন বা ভিজিটরকে প্রবেশ করতে না দেয়া; ঢামেকের প্রতিটি প্রবেশপথের নিরাপত্তা জোরদার করতে আনসার বাহিনীর পাশাপাশি অন্য কোনো দক্ষ বাহিনীকে নিয়োজিত করা; অবিলম্বে চিকিৎসা সুরক্ষা আইনের বাস্তবায়ন; রোববার চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা এবং আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া। চিকিৎসকরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে একজন রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন করে ভিজিটর থাকার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। একেকজন রোগীর সঙ্গে পাঁচ-সাত জনও ভিজিটর থাকেন। ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী থাকায় বাড়তি ভিজিটরদের উপস্থিতি চিকিৎসার পরিবেশ নষ্ট করে। আবার এসব কারণে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তার জন্য আবার আমাদেরই হেনস্তা হতে হয়। উল্লেখ্য, গত ২৮শে অক্টোবর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালের সিসিইউ-২-তে ভর্তি হন নওশাদ নামের এক রোগী। ২৯শে অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে তার মৃত্যু হলে এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের ওপর চড়াও হন। এসময় তাদের আঘাতে একজন ডাক্তার ও দুই আনসার সদস্য আহত হন। পরে হাসপাতালের ডাক্তার, স্টাফ ও আনসার সদস্যরা মিলে রোগীর স্বজনদেরও মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=90044