১ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৫২

এ বছর ফোর-জি চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে টেলিকম অপারেটরদের দরকষাকষিতে এ বছরের মধ্যে ফোর-জি চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে চতুর্থ প্রজন্মের এ সেবা চালু করতে অপারেটরদের ২৪টি দাবির মধ্যে ২২টিরই সমাধান হয়ে গেছে- সরকারের এমন দাবির পরও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে সেবাটি চালু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফোর-জি চালু নিয়ে সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সাথে টেলিকম অপারেটর নির্বাহীদের সর্বশেষ বৈঠক এক রকম সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে দেশে থ্রি-জি সেবা চালু করতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অপারেটরগুলো। এখন পর্যন্ত লাভ তো দূরে থাক সেই বিনিয়োগের মধ্যে মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা মূলধন ফেরত পেয়েছে তারা। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে আবার ফোর-জি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। থ্রি-জি সেবা চালু করে মোবাইল অপারেটরগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য ২৪টি বিষয়ে দাবি তুলেছে অপারেটররা। এসব ইস্যুর সমাধান না করে আগের পথে হাঁটলে টেলিযোগাযোগ খাত একই ধরনের জটিলতায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। সেজন্য ফোর-জি নিলামের আগেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান চাইছে তারা।

জানা গেছে, মোবাইল অপারেটররা ১২ বছর ভয়েস কলের রেকর্ড সংরণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (সিএসআর) খরচ করার আগে অনুমতি নেয়া, উচ্চ তরঙ্গমূল্য, প্রযুক্তি নিরপেতা, কনটেন্ট ফিল্টারিং, লোকেশন পিন পয়েন্ট ইত্যাদি বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা বারবার জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে।
অন্য দিকে সরকার বলছে, অপারেটরগুলোর উত্থাপিত ২৪টি দাবির মধ্যে ২২টির সমাধান এরই মধ্যে হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, যে দুটো অবশিষ্ট রয়েছে, তারও সমাধান শিগগিরই হয়ে যাবে এবং আমরা এ বছরের মধ্যেই ফোর-জি সেবা চালু করব।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার অপারেটরদের সাথে বৈঠক করে বিটিআরসি। এতে বিটিআরসি চেয়ারম্যান, বিটিআরসি সচিব, তিনজন কমিশনার, চারজন ডিজি এবং টেলিকম অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, একটিভ শেয়ারিং গাইডলাইন, ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন, টাওয়ার নির্মাণ, ডাটা সংরক্ষণ এবং তরঙ্গ নিরপেক্ষতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিটিআরসির সাথে অপারেটরদের মতদ্বৈধতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত কোনোরকম সমঝোতা ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল অপারেটরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘চার মাস আগে তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বললেও এখনো পর্যন্ত অজানা কারণে একটিভ শেয়ারিং গাইডলাইন হচ্ছে না। টেলিযোগাযোগ বিভাগ এখনো ‘ভিএটি’ রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নেয়নি। ফাইবার বিল্ডিং এবং টাওয়ার নির্মাণ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হলেও এখন আবার অস্বীকার করা হচ্ছে। তরঙ্গ নিরপেক্ষতাও মানছে না। এসব বিষয়ের সমাধান না হওয়ায় নিলামও হচ্ছে না। ফলে আগামী দুই মাসের মধ্যে ফোর-জি সেবা চালু আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।’
অন্য অপারেটরের এক কর্মকর্তা বলেন, ১২ বছর ডাটা সংরক্ষণে করা আমাদের জন্য কঠিন। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরাও তাদের কাজের সুবিধার জন্য এক বছর ডাটা সংরক্ষণ করার পক্ষে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, তাদের অডিটের স্বার্থে ১২ বছর সংরক্ষণ করা জরুরি। বিষয়টি আমাদের জন্য কঠিন। আর সিএসআর ফান্ড ব্যয়ের ব্যাপারে তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টাও অনেকটা নমনীয়। তবে বাকি বিষয়গুলো সমাধান না হলে এ বছরের বাকি দুই মাসের মধ্যে তরঙ্গ নিলাম করে ফোর-জি চালু সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬৫ শতাংশ এরিয়া থ্রি-জি কভারেজের মধ্যে আছে। তার মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ থ্রি-জি সেট ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে ফোর-জি এলে তার কতটুকু ব্যবহার হবে জানি না। এ ছাড়া থ্রি-জিতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও তার মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা উঠেছে। তবুও সরকারের ফোর-জি চালুর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এটির সুরাহা না হওয়ায় আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত আটকে আছে। আমরা চাই সরকার টেলিকম শিল্পের স্বার্থে দ্রুত এসব বিষয় সমাধান করবে।
বিটিআরসির একাধিক সূত্র জানায়, সরকার ২৪টির মধ্যে ২২টি সমাধান হয়েছে দাবি করলেও অনেক বিষয়ে আবার নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিটিআরসিও তাদের অবস্থান খানিকটা পরিবর্তন করছে। ফলে এসব বিষয়ে আবারো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ নেয়া হতে পারে। এতে ফোর-জি চালুর প্রক্রিয়া আরো বিলম্বিত হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/264559