১ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৫২

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা

চার দিনেও কেউ গ্রেফতার হয়নি

ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার চার দিনেও জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পরস্পর দোষারোপ করা হলেও ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগ-যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী। ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীর সর্বত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে গাড়িবহর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশের মোহাম্মদ আলী বাজার অতিক্রমকালে সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের ইট ও লাঠির আঘাতে সেখানে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এ হামলার ঘটনায় জড়িত যাদের ছবি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হয়েছে তাদের মধ্যে শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর শর্শদী গ্রামের মো: ছোলেমানের ছেলে ওসমান গনি রিয়েল, ছাত্রলীগ নেতা আবুপুর গ্রামের সবুজ ভূঞাসহ কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার সময়ের কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে ধারণ করা ছবির সূত্র ধরে স্থানীয়রা বলেছেন, সাংবাদিকদের গাড়িতে লাঠি নিয়ে হামলাকারীর নাম সবুজ ভূঞা। তিনি স্থানীয় শর্শদী ইউনিয়ন এক নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই গাড়িতে পাথর দিয়ে হামলা করা ব্যক্তি একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েল। সাদা পাঞ্জাবি পরা আরেক হামলাকারী ফরহাদ, সে শর্শদীর জামায়েতুল মিল্লিয়া মাদরাসা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নুর হোসেন, যুবলীগ সভাপতি ফারুক মজুমদারসহ ধর্মপুর ইউনিয়নের কয়েকজনের নামও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, শর্শদীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সাবেক বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন সিকদার এ হামলার পরিকল্পনাকারী। তিনি আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিয়ে এ হামলার ছক কষেছেন। তবে দোষারোপ এড়াতে ঘটনার আগেই তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞাকে সাথে নিয়ে শহরে অবস্থান নেন। এ হামলায় সক্রিয় সহযোগী ছিল ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকাও।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামলায় জড়িতদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও পুলিশ তাদের ধরছে না।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা জানানো হবে।
তবে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলা না হওয়ায় ঘটনাটি নিয়ে তারা বেশি দূর এগোতে পারছেন না। তা ছাড়া হামলাকারীরা সরকারদলীয় হওয়ায় নানামুখী চাপ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারাও মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা নিজের আধিপত্য জানান দিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইতোমধ্যে মোবাইল ফোনে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে তার ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী অতিক্রমের পর ওই দিন ফেনী পৌরসভা চত্বরে আলোচিত ওই আওয়ামী লীগ নেতা ঘটনা ঘটানোর জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়া ফেরার দিনও সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/264560