রাখাইনের মংডুতে পুড়িয়ে দেওয়া একটি গ্রাম
৩১ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:১০

রোহিঙ্গা মুসলমাদের গ্রামছাড়া করতে উগ্র রাখাইনদের গুপ্ত হামলা শুরু

আরাকানের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করতে গুপ্ত হামলার মিশন শুরু করে দিয়েছে উগ্রপন্থীরা। লুটপাটে কোন অংশে পিছিয়ে থাকছে না মুসলমান বিরোধী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী ভিক্ষুরা।

এসব ভিক্ষুরা সশস্ত্র সংগঠন নাডালাকে রীতিমতো উসকানি দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের মারধর করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে গ্রামচ্যুত করার। বর্মী প্রশাসন এভাবে গুপ্ত হামলাসহ নানাবিধ পরিকল্পনা প্রয়োগ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর। এমনকি হামলার পর ধারালো কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ন্যক্কারজনক ঘটনাও সংঘটিত করে চলেছে তারা।
সূত্রে প্রকাশ, আরাকানের পেরুল্লাতে লুটতরাজ রাখাইনের হামলায় ২ রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। বুথিদং উপজেলার ইয়াংশং ইউনিয়নের পেরুল্লা গ্রামে উগ্রপন্থী রাখাইনরা গুপ্ত হামলা করে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটায়।
সুত্র জানিয়েছে, সিন্দিপ্রাং প্রামের ৪ রোহিঙ্গা কৃষক পেরুল্লা এলাকায় পাহাড়ি খামার বাড়িতে মহিষের পাল পাহারা দিতে গিয়েছিল। রাতে ২জন রাত জেগে এবং ২জন ঘুমিয়ে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছিল মহিষের পালটি। রাত বারোটার দিকে একদল সশস্ত্র রাখাইন মহিষ লুট করতে তাদের উপর হামলা করে। এসময় জাগ্রত ২ রোহিঙ্গা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ঘুমন্ত ২জনকে এলোপাতাড়ি পিঠিয়েছে রাখাইনরা।
ধারালো কিরিছ দিয়ে বেপরোয়া কুপিয়েছে তাদের। পরে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে মহিষ লুট করে নিয়ে চলে যায় রাখাইনরা। রাতেই পার্শ¦বর্তী গ্রাম থেকে লোকজন গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ২জনকে উদ্ধার করে। আহতরা আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ।
রাখাইনের ৭০০০ মানুষকে ভেরিফিকেশন কার্ড দিয়েছে মিয়ানমার
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া জাতীয় যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি মানুষকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হয়েছে। গত রোববার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ খবরটি নিশ্চিত করেছে।
সিনহুয়া নিউজ এজেন্সিকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাখাইনের অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক বিভাগের পরিচালক উ অং মিন জানান, প্রদেশটির যেসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এ যাচাইকরণের কাজ চলছে।

১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের এবং পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।
২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সে সময় প্রেসিডেন্ট দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই কার্ড মার্চ থেকে আপনা আপনিই বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই কার্ড ছিল।

সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেওয়া হয় মাত্র সাত হাজার ৫৪৮ জনকে।
শরণার্থী রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে হাসি ফোটালো ক্লাউন
আরব নিউজ : মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হাসি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই মানসিক আঘাতে বিপর্যস্থ শরণার্থী রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে কৌতুক অভিনয়ের মাধ্যমে হাসি ফুটিয়েছে একদল ক্লাউন। সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক ক্ষত দূর করতে ড্রামা থেরাপির অংশ হিসেবে ওই ক্লাউনরাও অংশ নেয়। দুই পর্বে চারদিনে ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে মোট দশ হাজার রোহিঙ্গা শিশু থেরাপিতে অংশ নেয়। শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ড্রামা থেরাপি কার্যক্রম শুরু হয়।
কক্সবাজারের অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ে অনুষ্ঠিত ড্রামা থেরাপিতে মোট পনের জন শিল্পী অংশ নেন। ড্রামা থেরাপিতে কৌতুক অভিনয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোহম্মদ নূর নামে এক রোহিঙ্গা শিশু আরব নিউজের সাংবাদিকদের বলে, ‘এা ছিলো দারুণ হাসির। এমন আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমি আর আমার বন্ধুরা হাসতে হাসতে প্রায় মরেই গেছিলাম।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হাজারও রোহিঙ্গা শিশুর বাবা-মাকে মিয়ানমারে হত্যা করা হয়েছে। অনেক শিশু তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা একা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। শরণার্থী শিবিরে কৌতুক অভিনয় ভীত-সন্ত্রস্থ শিশুদের মন থেকে ক্ষনিকের জন্য ভীতির কালো সরিয়ে দেয়। বহুদিন পর প্রাণ খুলে হেসেছে তারা। এ হাসি সঞ্চারিত হয়েছে বড়দের মাঝেও।
ড্রামা থেরাপিতে কৌতুক অভিনয়ের পাশাপাশি মুখোশ নির্মাণ, থিয়েটার গেম, সার্কাস প্রদর্শন করা হয়। কুতুপালং সহ বালুখালী, ঘুমধুম, পালং খালী, থ্যাংখালী, টেকনাফের উনছিপ্রাংসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

http://www.dailysangram.com/post/305682