৩১ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৭:৫৬

মিয়ানমার সফর নিয়ে হচ্ছে সারসংক্ষেপ

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো সুখবর নেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে সে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আপাতত কোনো সুখবর নেই। কবে নাগাদ তাদের ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে সে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট ধারণা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সম্প্রতি মিয়ানমার ঘুরে আসা প্রতিনিধি দলের। সমঝোতার পরিবর্তে এ সমস্যা দিনে দিনে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তিন দিনের মিয়ানমার সফরকালে একাধিক বৈঠকে আলোচনা ছাড়াও সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মিয়ানমার সফরের সময় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা সফল না হওয়ার বিষয়টিও রিপোর্টে (সারসংক্ষেপ) উল্লেখ করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, সারসংক্ষেপে লাখ লাখ রোহিঙ্গার নিজ দেশে ফেরত সহসাই শুরু হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত থাকছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলেছে, সারসংক্ষেপে বলা হচ্ছে- পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যা বাংলাদেশ থেকে বলা হয়েছে তা মিয়ানমার কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না। আর এ সংখ্যা নিয়ে বিতর্কেই আটকে যায় সমঝোতায় আসার চেষ্টা। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে কৌশলগত কারণে মিয়ানমার নানাভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রায় অসম্ভব বলে সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি মিয়ারমার থেকে ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের সফর সফল হয়েছে বলে দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ সারসংক্ষেপ তৈরি হবে। পরে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এতে বেশকিছু সুপারিশও থাকবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যা ঢাকা উল্লেখ করেছে তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছে দেশটি।

বিভিন্ন কারণে কিছু রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হলেও মিয়ানমার সরকার তাদের পরিচয় ও যাচাই-বাছাই করতে সময় নিতে চায়। একই সঙ্গে শরণার্থী প্রত্যাবাসনে দু’দেশের মধ্যে যতক্ষণ চুক্তি না হচ্ছে, ততক্ষণ এ ইস্যুতে তাদের কিছুই করার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার।

সারসংক্ষেপে বলা হচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতিসংঘ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যা উল্লেখ করছে সেটিও মিয়ানমারের কাছে থাকা হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। আর সংখ্যাগত এ পার্থক্য প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর প্রধান বাধা বলে মনে করেন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে মিয়ানমার ঘুরে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রকাশিত ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’তে মিথ্যাচারের বিষয়টিও থাকছে সারসংক্ষেপে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সফরের দ্বিতীয় দিনে (২৪ অক্টোবর) মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পেজে একটি ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে। সেখানে উভয় দেশের সম্মতিতে ১০টি বিষয়ে একমত পোষণের তথ্যটিও বিকৃত করা হয়েছে। সারসংক্ষেপে দেশটির বিরুদ্ধে এসব মিথ্যাচার ও ছলচাতুরীর বিষয়টি উল্লেখ করা হচ্ছে।

সূত্র বলেছে, ২৪ অক্টোবর সকালের বৈঠকে দুই পক্ষ আলোচনার পর ১০ দফা প্রস্তাবসংবলিত একটি সমঝোতা পাঠালে সেটি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত হয়। এরপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ২৬ অক্টোবর বিকালে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ নামে যে সংবাদ প্রকাশ করে, সেটি বাংলাদেশ অনুমোদন করেনি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমার ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের কাছে একটি যৌথ বিবৃতির খসড়া দেয়। সেটি সংশোধন করে ফের মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের কাছে দেয়া হয়। ওই খসড়ায় কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি ছিল। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সেটি গ্রহণ করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ২৪ অক্টোবর ১০টি বিষয়ে উভয় দেশ একমত হওয়ার পর তা মন্ত্রিপর্যায়ে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের প্রকাশিত ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে’ সেটিকে বিকৃত করা হয়েছে। সেখানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ-বিষয়ক পয়েন্টটি উল্লেখই করা হয়নি।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/10/31/167751