৩০ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪০

বেসামাল পেঁয়াজের বাজার সরকার উদ্বিগ্ন

জরুরি ভিত্তিতে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে


পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের এই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০ থেকে ৩৫ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজই বর্তমানে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮৫ টাকায়; অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বাজারে এ পণ্যটির কোনো অভাব নেই। বিভিন্ন গুদামে বস্তার পর বস্তা পেঁয়াজের মজুদ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু দাম কমছে না, ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন, ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। ফলে এখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামে অনেক দিন পর হলেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সরকার। পেঁয়াজের দাম কিভাবে বাগে আনা যায় তার জন্য আজ জরুরি ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এ বৈঠকে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। এর মধ্যে একটি বাজার মনিটরিং জোরদার করা, যে গুদামে পেঁয়াজ মজুদ করে রাখা হয়, তা পরিদর্শন করা এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অন্যতম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসুর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা লোকমান হোসেন, উপ-ঊর্ধ্ব কার্যনির্বাহী মো: আবুল হাসনাত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: কামাল উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক অঞ্জন কুমার বড়ুয়া, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: শফিউল হক, ড. অনিমা রানী নাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: ইসমাইল, যুগ্ম পরিচালক প্রমুখ।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা, যা গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়; অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এ েেত্র এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।
জানা গেছে, আর দেড় মাস পর নতুন পেঁয়াজ উঠবে বাজারে। নতুন পেঁয়াজ আসার আগ মুহূর্তে এ পণ্যটির দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত মওসুম সামনে রেখে এই সময়টাতে দেশীয় মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হয়ে থাকে। এবার বাজারে দেশীয় ভালোমানের পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। সরবরাহ ভালো থাকার পরও দাম বাড়ছে হু হু করে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে এ পণ্যটির মজুদকারী, আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট রয়েছে, তাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। শিগগিরই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদপে নেয়া হলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি বলেন, দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের অপকৌশলের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। ব্যবসায়ীদের এসব অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং হওয়া উচিত।

জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে পেঁয়াজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে দুই লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট চক্র।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়ার তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশে চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/264033