৩০ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ১০:৩১

উদ্বোধনের আগেই নদীগর্ভে বিলীন

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি উদ্বোধনের আগেই গত শুক্রবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় l ছবি: সাইয়ানবরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবন ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটির বেশির ভাগ অংশ উদ্বোধনের আগেই তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ভাঙন এগিয়ে আসায় এই বিদ্যালয়ের পুরোনো দোতলা ভবনটিও হুমকির মধ্যে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ওই ভবনটিও নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ২৪ অক্টোবর ভবনটির ভিতের নিচের মাটি ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। এরপর তিন দিনে ভবনটির বিশাল অংশজুড়ে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পুরো ভবনটি মুখ থুবড়ে পড়ে। নদীর ভাঙন এখন এতটাই তীব্র হয়েছে যে তা আরও এগিয়ে এসে বিদ্যালয়ের পুরোনো দোতলা ভবনটির ১০ ফুটের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন ভাঙনের হুমকিতে আছে শ্রীপুর বাজার, শ্রীপুর জামে মসজিদ, বাহেরচর কওমি মাদ্রাসাসহ আরও বেশ কিছু স্থাপনা ও ফসলি জমি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাহেরচর স্কুল কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নামে দোতলা ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় গত জুনের মাঝামাঝি। ২৮ জুন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। তবে ভবনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। এরই মধ্যে নবনির্মিত ভবনটি নদীভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে চলে যাওয়ায় উদ্বোধন না করে গত সপ্তাহে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু নিলামের আগেই সেটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মালেক খান জানান, কয়েক বছর ধরে কালাবদর ও তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে নবগঠিত শ্রীপুর ইউনিয়নের বিপুল ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। বিশেষ করে কাজিরদোয়ানি মোহনার কারণে শ্রীপুর বাজারসংলগ্ন এলাকাটি বেশি ভাঙছে। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার বাহেরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি ভাঙনের কবলে পড়ে। তিন দিনের মধ্যে ভবনটির অধিকাংশ নদীগর্ভে চলে যায়। বাকি অংশ ধসে পড়ে আছে। এখন পুরোনো ভবনটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ মোল্লা জানান, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এ বছরের শুরুর দিকে। শুরুর দিকে নদী অনেকটাই দূরে ছিল এবং নদীসংলগ্ন বাজারের পর স্কুল ছিল। আর এখন নদীসংলগ্ন স্কুল আর তার পেছনে বাজার চলে গেছে।
বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাহমুদ হোসেন জানান, অনেক দিন ধরেই ভবনটি হুমকির মুখে ছিল। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ। তাই বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য নির্মিত নতুন এই ভবন উদ্বোধনের আগেই নদীভাঙনের শিকার হলো। ভাঙন ধেয়ে আসায় এখন বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনটিও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। এতে এই বিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
জানতে চাইলে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী বোরহানউদ্দিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি নির্মাণের যখন সিদ্ধান্ত হয়, তখন সেখান থেকে নদীর দূরত্ব ছিল দেড় কিলোমিটার। নদীর আকস্মিক তীব্র ভাঙন শুরু হলে তা তীব্রতর হয়ে খুব অল্প দিনের মধ্যেই ভবনটির কাছাকাছি চলে আসে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ২৮ জুন ভবনটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। নদীভাঙনের কবল থেকে ভবনটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাঙনরোধকল্পে আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। এ জন্য সেটা সম্ভব হয়নি।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1354386