৩০ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ১০:২৮

উৎপাদন খাতের ঋণের অর্থ চলে যাচ্ছে ব্যবসা ও সেবা খাতে

এসএমই বা উৎপাদন খাত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও সেই অর্থ উৎপাদন খাতে ব্যয় হচ্ছে না। বড় অংকের এই অর্থ চলে যাচ্ছে অন্য খাতে। বিশেষ করে উৎপাদন খাতের অর্থ এখন ব্যয় হচ্ছে ব্যবসা ও সেবা খাতে। এর ফলে সামাজিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র তথ্য মতেই গত চার বছরে দেশে এসইমই খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ৬৩ ভাগ। কিন্তু সেই অনুপাতে দেশে নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অংকের হিসাবে প্রতি বছরই উচ্চপ্রবৃদ্ধি হচ্ছে এসএমই ঋণ বিতরণে। ২০১৩ সালে ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ করেছিল মোট ৮৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়ে ২০১৬ সালে খাতটিতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে গত চার বছরে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। এসএমই ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত আছে চলতি বছরও।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত চার বছরে এসএমই ঋণ বিতরণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও জিডিপিতে খাতটির অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়েনি। এসএমই ঋণ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ার কথা থাকলেও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য তা বলছে না। মূলত বাণিজ্যনির্ভর এসএমই ঋণ বিতরণ ও ব্যক্তিখাতের ভোক্তাঋণকে এসএমই খাতে দেখানোর কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা কিছু ব্যাংককেও এর জন্য দায়ী করেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর মিস রিপোটিং। তারা এক খাতের ঋণকে অন্যখাতে দেখিয়ে মিস রিপোর্টিং করছে। বেশ কিছু ব্যাংক অনেক নন-এসএমই বা করপোরেট কমার্শিয়াল ঋণকে এসএমই খাতে দেখাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতের বিষয়ে সম্প্রতি আরো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এসএমই ঋণ নিয়ে অনুসন্ধান বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামীতে এসএমই ঋণের প্রতিবেদন আরো নির্ভুল ও যথার্থ করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে এসএমই খাতে ব্যাংকগুলো ৮৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করলেও পরের বছর তা বেড়ে হয় ৯৮ হাজার ৩৩ কোটি। ২০১৫ সালে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় এসএমই ঋণ বিতরণ। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করে ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। চলতি বছর খাতটিতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে জুন পর্যন্ত ছয় মাসেই ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৭৯ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা।
বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা শতভাগের বেশি অর্জিত হলেও এসএমই খাতে কাঙিক্ষত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। মূলত এসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের সিংহভাগই যাচ্ছে ব্যবসা ও সেবা খাতে। এসএমই উৎপাদন খাতে ঋণ বিতরণে অপ্রতুলতার কারণেই প্রত্যাশিত ফল আসছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেকোনো পরিসংখ্যানের যথার্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃত অর্থে কোন কোন খাতে এসএমই ঋণ যাচ্ছে, সেটি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা দরকার। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য উৎপাদনমুখী শিল্পে এসএমই ঋণ বেশি দেয়া দরকার বলেও মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে এসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের মাত্র ২৩ শতাংশ গেছে উৎপাদনে। বাকি ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ এসএমই ব্যবসা ও ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ এসএমই সেবা খাতে বিতরণ করা হয়েছে। যদিও এক বছর ধরেই এসএমই উৎপাদন খাতে বেশি ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

http://www.dailysangram.com/post/305550