৩০ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ১০:২৭

সংলাপ-উত্তর রাজনীতি

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সংলাপের পর এখন অপেক্ষার পালাÑ ইসি কী পদক্ষেপ নেয় এবং সংলাপে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো তাতে কতটা আস্থাশীল হতে পারে। ইসি ২৪ আগস্ট থেকে এযাবৎ যে সংলাপ চালিয়েছে, তার একটা সফল পরিণতি দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে। তা সংলাপ-উত্তর রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেটার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। ইসি কতটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে? রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সাথে সংলাপে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার আলোকে ইসি কি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের প্রতিফলন ঘটাতে পারবে? নাকি সরকারি দলের পরামর্শগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়বে? এর ওপর নির্ভর করছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি জনগণের আস্থা কতটা অর্জনে সক্ষম হয়। আমরা যদি বিগত ইসির অবস্থা পর্যালোচনা করি, তবে দেখব পাঁচ বছরের মেয়াদকালে তারা কোনো সফলতা পায়নি। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচনই কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এতে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইসির ভাবমর্যাদা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সে যাই হোক, বর্তমান ইসির দেয়া সিদ্ধান্ত সংলাপ-উত্তর রাজনীতিকে কোন পথে নিয়ে যায়, সেটাই দেখার বিষয়। দেশ ও বিদেশের পর্যবেক্ষকেরা স্বস্তিবোধ করবেন, নাকি অতীতের মতো ব্যর্থতার গ্লানি ইসিকে বহন করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি বলেছেন, তারা রাজনৈতিক দলের সাথে সমঝোতা করতে বসবেন না। তবে সমঝোতা হোক, এর আকাক্সা তো করতে পারেন। এই সমঝোতা অবশ্যই হওয়া উচিত এবং ক্ষমতাসীন দলের এতে ভূমিকা বেশি। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বলেছেন, সবার সাথে আলোচনা করে তারা একটি ভালো ও সুন্দর নির্বাচন করতে চান। এটা তো সমঝোতারই ইঙ্গিত। এতে সবাই আশাবাদী হতে পারেন।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ইসিকে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, এর আলোকে তারা কর্তব্য নির্ধারণ করে সে অনুসারে এখনই পথচলা শুরু করা সঙ্গত। দলগুলো সংলাপে প্রায় ৫০০ প্রস্তাব দিয়েছে। তবে মৌলিক বিষয়ে দেয়া প্রস্তাবের সংখ্যা হাতেগোনা। সে কয়টি প্রস্তাবের সমাধান দু-একটি ছাড়া সবই ইসি নিজেই দিতে পারে। ইসিকে এখন সব বিতর্ক এড়িয়ে দৃঢ়তার সাথে তার ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব সম্পাদন করতে হবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রশ্নমুক্তভাবে করার বিষয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে অত্যন্ত জোরালো ও স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, তারা প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চান। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্যান্য দলও বরাবর ভালো মানের নির্বাচনের কথা বলে আসছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার পেছনে এই যে জাতীয় ঐক্য, সেটাই তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বড় শক্তি ও সহায়। তা ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আরো যেসব বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলোও ইসিকে তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট শক্তি আর স্বাধীনতা জোগাবে। এসব কিছুই একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে দাঁড় করাতে পারে। ইসির আরো একটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে, শুধু দেশের ভেতর থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় মত তৈরি হয়েছে। বর্তমান ইসি কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, এর আগেও কয়েকবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিবেচনায় না নিয়ে ভালো নির্বাচন এ দেশে হয়েছে। তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো দিকে তাকিয়ে থাকেননি। ভালো উদাহরণ অনুসরণ করতে কোনো দ্বিধায় ভোগা উচিত নয়। ইসির আরো উপলব্ধি করা উচিত, ভারতের নির্বাচন কমিশন আইনকানুনের বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে নেই। কিন্তু সে কমিশন তার ভেতরের শক্তি নিয়ে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে প্রশ্নহীন নির্বাচন করে থাকে। ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থা ও জন-আচরণ বাংলাদেশ থেকে কোনো দিকেই ভিন্ন নয়; কিন্তু সে দেশে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সুচারুভাবে ও দক্ষতার সাথে নির্বাচন করে আসছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বা নির্বাচনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠে না।
সংলাপ এবং তাতে যোগ দেয়ার পর নির্বাচনের প্রধান পাত্রমিত্র, রাজনৈতিক দলগুলো এখন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠবে বলে মনে হয়। নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি বড় দলগুলো নিয়ে রেখেছে। প্রার্থীদের একটি ‘ছায়া তালিকা’ও হয়তো তৈরি হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো তুলে ধরে তারা জনগণের ভোট প্রার্থনা করবেন, এর খসড়াও তৈরি হওয়ার কথা। বিশেষ করে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো কোন পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতা করবে, এরও একটি খসড়া তৈরি করে ফেলার কথা। বিরোধী দলগুলো আগামী নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তার জন্য সতর্ক রয়েছে। আর নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসি এবং সরকারের ভূমিকাও তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে যারা সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ, তাদের বেশ কিছু সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাদের বহু নেতাকর্মী অসংখ্য মামলার জালে আটকা পড়েছেন। তাদের অনেকেই আজো কারা অন্তরালে। এসব মামলার জট এখনো বাড়ছে। চরম হয়রানি ও মানসিক চাপে রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ছুতায় অসংখ্য মামলা দায়ের করা আছে। এসব মামলায় কোর্টে হাজিরা দিতে দিতেই তাদের সময় চলে যাচ্ছে। বিরোধী দল বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। তাদের পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া দেশের প্রায় সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কব্জা করে আছে। ফলে বিরোধী দলের সাংগঠনিক তৎপরতা নানামুখী চাপে প্রায় বন্ধ। এই প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে আগামী নির্বাচন মোকাবেলা করা কঠিন। তবে বিরোধী দলের আশার কথা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে বহু অনিয়ম ও ত্রুটির কারণে জনভোগান্তি বেড়েছে। আর তাতে এ সরকারের জনপ্রিয়তা বিপুলভাবে হ্রাস পেয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর, শহর-বন্দর ও গ্রামগঞ্জে সুশাসনের অভাবে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্ষমতাসীনদের যে দুর্বলতা, তা জনগণকে হতাশ করেছে। খুন, জখম, গুম, হত্যাকাণ্ড ও নারী নির্যাতন অতীতের সব মাত্রা অতিক্রম করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাতে দুর্ভোগ সীমাহীন হয়ে পড়েছে।

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। দেশী-বিদেশী মিডিয়া কর্মীদের ব্যাপক লেখালেখির ফলে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজ জেগেছে বটে; কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশের পাশে নেই। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। সচেতন নাগরিকদের এসব বিষয় খুবই ভাবিয়ে তুলেছে।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সজাগ ও তৎপর। রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলটির পারঙ্গমতা লক্ষণীয়।
জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের প্রস্তুতি বহু আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ জন্য তাদের গবেষণা সেল নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আগামী নির্বাচনে তাদের কৌশল ও প্রচারণার তথ্য-উপাত্তগুলো তারা তৈরি করে নিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ব্যাপারে সমস্যা হচ্ছেÑ দলের ভেতর নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত। এর ফলে মাঝে মধ্যেই তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ প্রবণতা যেকোনো দলের সংহতির জন্য ক্ষতিকর। ক্ষমতায় রয়েছে বলে সহজে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে মনে করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা প্রবল। এ কারণে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কের যেমন অবনতি ঘটছে, তেমনি দলের হাইকমান্ডের পক্ষে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া জটিল হয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার জন্য তেমন কোনো তুরুপের তাস নেই। তারা এখন কেবলই বলছে, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য তাদের পুনরায় ভোট দেয়ার কথা। কিন্তু তারা দেশের কী উন্নয়ন করেছে, সেটা বলছে না। এ দিকে জনগণ কিন্তু তাদের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যা ছাড়া আর কিছু উপলব্ধি করছে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে আরো একটি বিষয় বহুলপ্রচলিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে গণতন্ত্রের বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। গণতন্ত্রের প্রাণ হচ্ছে নির্বাচন, কিন্তু এ দেশে নির্বাচন এখন কলুষিত। জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না। অর্থাৎ, জন-আকাক্সা পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে গেছে। আর যে দু-চার জায়গায় সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেখানে ক্ষমতাসীনেরা পরাজিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের একটি নির্যাস হচ্ছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়, নীতি, নৈতিকতা ও বিদ্যমান আইনকানুন, বিধিবিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসনের প্রধান বিষয়। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করাই হলো সুশাসনের লক্ষ্য। এখন বরং উল্টো ব্যবস্থা জারি রয়েছে। দুষ্টের পালনই যেন রেওয়াজ হয়ে গেছে। সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম দিক হচ্ছে, একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। আর সমাজ ও রাষ্ট্রে জবাবদিহিতার জন্য যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছেÑ জাতীয় সংসদ; তা হাল আমলে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই সংসদের সব আসনে বসে আছেন মূলত সরকারি দলেরই লোকজন। তাই তারা সরকারের জবাবদিহি করবেন কিভাবে? ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চরম জবাবদিহিহীনতা বিরাজ করছে। আইন বিভাগ যেমন সমস্যায় জর্জরিত, তেমনি বিচার বিভাগের সাথেও চলছিল মারাত্মক ঠোকাঠুকি। এসব কিছু রাষ্ট্রের অসুস্থ অবস্থাই তুলে ধরে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। হত্যা, গুম ও অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে গিয়ে জননিরাপত্তা নাজুক করে তুলেছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অবাধে ঘটছে। এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে কিভাবে ভোট চাইবেন ক্ষমতাসীনেরা?

সংলাপ-পরবর্তী সময়ে কয়েকটি বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যাওয়া আবশ্যক। একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে এ শর্তগুলো পূরণ করা উচিত। তার মধ্যে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করা একটি বড় বিষয়। ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে বলতে গেলে কোনো দলই অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই কেবল সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আরো অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে, সেই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০টির বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় সব দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপির দাবি ছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নয়, বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু সরকার এ দাবি অগ্রাহ্য করলে বিএনপি ও অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি এখনো এই দাবিতে অনড়। আরো অনেক দল বিএনপির অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছে; কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনো নির্বাচনসহায়ক সরকারের প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের এই অবস্থানের ফলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে জন-আকাক্সা তা ব্যাহত হবে। আর তাতে জাতীয় রাজনীতিতে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনসহায়ক সরকারের প্রশ্নে এই অবস্থান গোটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যই ক্ষতিকর। কেননা ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রায় সব দলই এ ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। এখন আওয়ামী লীগকেই বিবেচনা করতে হবে তারা গণতন্ত্রকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে চায় কি না।
সংলাপ-উত্তর ও নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সুষ্ঠু সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া উচিত। এ জন্য দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ সরকারি দলকে দায়িত্ব নিতে হবে। একটি ভালো মানের নির্বাচনের জন্য সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া অপরিহার্য; কিন্তু এখন আমাদের রাজনীতিতে চরম বৈরী অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নের বিষয়ই রাজনীতির লক্ষ্য। দলের সাথে নীতি ও আদর্শের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। সেই আদর্শ ও নীতি বাস্তবায়নে মত ও পথও ভিন্ন হবে। এই মত ও পথের পার্থক্য নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হবে। এই আলোচনায় যুক্তিতর্ক আসবে, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য অবশ্যই থাকবে; কিন্তু সে আলোচনা বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়ার পাশাপাশি সৌজন্য ও শালীনতাকে অতিক্রম করবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের রাজনীতিতে এখন যে অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে তা সৌহার্দ্য সম্প্রীতির ধারেকাছেও নেই। বিশেষ করে যে ভাষা তারা ব্যবহার করে থাকেন তা খুবই আক্রমণাত্মক। এমন বাক্যবিনিময়ের ফলে আন্তঃদলীয় সম্পর্ক অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। নির্বাচনের প্রচারকালে সবাই যখন ময়দানে থাকবে তখন সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারোই ইট মেরে পাটকেল খাওয়ার মতো অবস্থানে যাওয়া উচিত নয়।
এখন সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় নেই। এই অসমতা ত্বরিত দূর করতে হবে। কোনো কোনো দলকে মজলুম রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

নির্বাচনে যারা এর শুদ্ধতা নস্যাৎ করে, সেই প্রভাবশালী মহল ও তাদের দুর্বৃত্তদের এখনই পাকড়াও করা সঙ্গত। সমাজবিরোধীরা নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য তাদের মদদদাতাদের ইঙ্গিতের অপেক্ষায়। এদের থাকে বহু বেআইনি অস্ত্র। সাধারণ মানুষকে এরা ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় মোটেও। প্রতিদিন এদের মাধ্যমে নানা অঘটন ঘটছে। সেজন্য এখনই এসব মাস্তানের হাতের অস্ত্র উদ্ধার এবং তাদের আটক করা উচিত। এদের অপকর্মের জন্য ইসির সাথে সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো বেশির ভাগই নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছে। সব দিক থেকে এসব দাবি খুবই যৌক্তিক। নিশ্চয়ই ইসি এটাকে বিশেষ বিবেচনায় নেবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/264158