২৯ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১২:৩৫

তিন লুপ ঘিরে যানজট

মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ছিল আলোচনা-সমালোচনা। রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি-খানাখন্দে ভোগান্তিও ছিল চরমে। অনেকটা প্রাণহীন হয়ে পড়ে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৈনন্দিন জীবন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলে একটানা নির্মাণকাজ। তারপর গত সপ্তাহে খুলে দেয়া হয়েছে যান চলাচলের জন্য।

আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ ফ্লাইওভার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর এলাকার মানুষদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু পুরনো যানজটের শঙ্কা কাটছে না মানুষের। উদ্বোধনের পর প্রথম দুইদিন সরকারি ছুটি থাকায় যানবাহনের চাপ ছিল কম। তারপরও ফ্লাইভারের তিনটি লুপ ঘিরে ছিল দীর্ঘ যানজট। কর্মদিবসে এ পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা। উদ্বোধনের দিন বিকাল থেকেই বাংলামোটর ও সোনারগাঁও হোটেল অংশের লুপ ঘিরে যানজট দেখা দেয়। ফ্লাইওভার থেকে নেমে প্রধান সড়কে যেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় যানবাহনকে। এছাড়া বাড়তি যানবাহনের চাপে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে দিনের বেশিরভাগ সময় এই সড়কে যানজট লেগে থাকছে। বাংলামোটর সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল রহিম জানান, আগেই ভালো ছিল। শুধু নিচ দিয়ে গাড়ি আসতো। এখন অনেকেই শখের বসে উপর দিয়ে আসছে। তাই এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল ছুটির দিন শনিবার দুপুর পৌনে ২টায় মালিবাগ থেকে ৬ নম্বর বাসে উঠেন গণমাধ্যমকর্মী শিশির। জরুরি কাজে তিনি যাবেন ফার্মগেট। শুধুমাত্র মালিবাগ থেকে বাংলামোটর, অল্প এই জায়গাটুকু আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ভেবেছিলাম ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর অনেক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি আরো বেশি সময় লাগছে। আগে শুধু নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতো। এখন ফ্লাইওভারের উপর-নিচ সবদিক দিয়ে যানবাহন চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সরজমিন গতকাল শান্তিনগর ও রাজারবাগ থেকে আসা ফ্লাইওভারের ইস্কাটন-বাংলামোটর অংশে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ যানজটের চিত্র। বাংলামোটর সিগন্যাল থেকে গাড়ির লম্বা লাইন ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে মগবাজার চৌরাস্তা পার হয়ে গিয়ে পৌঁছায় মৌচাক পর্যন্ত। নিচের অংশের গাড়ির চাপও গিয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় পৌঁছায়। মগবাজার চৌরাস্তার উপরে প্রাইভেটকার চালক হুমায়ুন মিয়া জানান, সময় বাঁচানোর জন্য শান্তিনগর দিয়ে উঠে এদিকে আসলাম। সদরঘাট থেকে শান্তিনগর আসতে যত সময় লেগেছে এখন বাংলামোটর সিগন্যাল পার হতে প্রায় ৪২ মিনিট শেষ হয়েছে। আদৌ কখন এই সিগন্যাল পার হবো তা জানি না। একই স্থানে মাইক্রো বাসের আরেক যাত্রী বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা সুমন বলেন, যানজট নিরসনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। এখন দেখি আরো যানজট বেড়ে গেছে। আমি প্রতিদিনই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। আগে নিচ দিয়ে যেতে এত সময় লাগতো না। এদিকে হলি ফ্যামিলির সামনে থেকে সোনারগাঁও হোটেলের সামনের ফ্লাইওভারের লুপে ছিল গাড়ির চাপ। ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলামোটর ও কাওরানবাজার সিগন্যাল এমনিতেই খুব কাছাকাছি। তাছাড়া এই দুটি সিগন্যালে গাড়ির চাপ সব সময়ই বেশি থাকে। তার উপর আবার দুটি ফ্লাইওভারের লুপ এই সিগন্যালে এসে নেমেছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সিএনজি চালক ছমির মিয়া জানান, হলি ফ্যামিলির মোড় থেকে এই সিগন্যাল পর্যন্ত সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। ছুটির দিনে যদি এরকম হয় তবে অন্যান্য দিনে কি অবস্থা হবে? বাংলামোটর সিগন্যালে যানজট নিরসনে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাহেদুল মানবজমিনকে বলেন, আগে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর দিয়ে বাংলামোটর আসতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে চলে আসেন। উপর এবং নিচ উভয়দিক দিয়ে যানবাহনের চাপের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বাংলামোটর সিগন্যালে এমনিতে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তার উপর ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর চাপ আরো বেড়েছে। কারণ অনেকে আবার শখ করে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে আসছেন। এদিকে মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের পুরো অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এখনো ফ্লাইওভারের একাধিক স্থানে রঙের কাজ চলছে। রং মিস্ত্রি মোমেন জানান, এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের মৌচাক-মালিবাগ অংশে ট্রাফিক সিগন্যালও দেখা যায়। এই দুই সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ও তমা গ্রুপের কয়েকজন কর্মীকে যানজট নিরসন করতে দেখা যায়। উদ্বোধনের পর থেকেই ফ্লাইওভারে উৎসুক জনতাও ভিড় করছেন। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসুক মানুষ ফ্লাইওভারের ওপর ভিড় করছেন। এতেও যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যরা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=89628