২৯ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১২:০৫

মতবিনিময়ে পরিবেশবাদীরা

ভারতের নদী-সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য বিরাট হুমকি

নদী ও পরিবেশবিষয়ক কিছু সংগঠনের জোট ‘জাতিসঙ্ঘ পানি প্রবাহ কনভেনশন বাস্তবায়ন আন্দোলন’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, ভারতের নদী-সংযোগ প্রকল্প ইতোমধ্যে বিভিন্ন নামে ও অংশে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর পূর্ণ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জীবন ও জীবিকার জন্য বিরাট হুমকি সৃষ্টি করবে। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ভারতের নদী-সংযোগ প্রকল্প ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় পরিবেশবাদীরা এ কথা বলেন। জাতিসঙ্ঘ পানি প্রবাহ কনভেনশন বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ জলপরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ম. ইনামুল হক, পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: আব্দুল মতিন, হাওর অঞ্চলবাসীর সমন্বয়ক জাকিয়া শিশির, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, হাওর অঞ্চলবাসীর হালিমদাদ খান, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি বেলাল হোসেন ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হাছিবুর রহমান, নোঙরের চেয়ারম্যান সুমন শামস, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আনোয়ার সাদত।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রকৃতি আন্দোলনের মূল সূত্র নদী। আর নদী ঠিক থাকতে হলে উজান থেকে প্রবাহ সুষ্ঠু থাকতে হবে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তায়ন হলে বাংলাদেশের নদীগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
ম. ইনামুল হক বলেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর আওতাতেই তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি প্রত্যাহার করে মহানন্দা ও ডাহুক নদীতে নেয়া হচ্ছে। গজলডোবার সেচখালই আসলে নদী-সংযোগ প্রকল্পের এক নম্বর খাল। তিনি বলেন, ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বৃষ্টিপাতের হিসাব করে উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের যে ‘উদ্বৃত্ত পানি তত্ত্ব’ দিচ্ছেন তা ভুল। কারণ বাংলাদেশের প্রতিবেশ ঠিক রাখার জন্যই এই পানি জরুরি। উপকূলে মিঠা পানি কমে গেলে ইলিশের প্রজনন হ্রাস পাবে।

ডা: মো: আব্দুল মতিন বলেন, পরিবেশবাদীরা সরকারকে সহায়তা করতে চায়। তারা তথ্য-উপাত্ত, পরামর্শ দিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলকে শক্তিশালী করতে চায়। যাতে করে বাংলাদেশের পানির অধিকার রক্ষায় সরকার শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে। তিনি বলেন, নদী-সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতেরও ৯টি রাজ্যের প্রতিবেশ ও পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদের একযোগে কাজ করতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, নদী-সংযোগ ছাড়াও উজানে অন্যান্য স্থাপনার কারণে যেসব ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তো অবশ্যই, বরং গঙ্গায় মিঠা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/263875