মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের বাংলামোটর অংশে নামতেই যানজটে পড়তে হয়। ইস্কাটন, ঢাকা, ২৭ অক্টোবর।
২৮ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৯:০৭

উড়ালসড়কের সুফল নিয়ে সংশয়

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃহস্পতিবার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক। এতে ওই এলাকায় যানজট কমবে বলে প্রত্যাশা যাত্রীদের। উড়ালসড়কের কাজ শেষ হওয়ায় ওই পথে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তির অবসান হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি রয়েই গেছে। বিশেষ করে শুরু থেকেই যানজটের কারণে অনেকেই এর সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, শান্তিনগর এলাকার যানজট নিরসনের জন্য এই উড়ালসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণকালেই নকশা নিয়ে বিতর্ক ওঠায় কিছু ক্ষেত্রে নকশা পরিবর্তন করা হয়। তারপরও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পরপরই উড়ালসড়ক থেকে নামার মুখে কয়েকটি জায়গায় যানজটের কবলে পড়তে হয়। শুক্রবার ছুটির দিনেও বাংলামোটর ও শান্তিনগর এলাকায় সেই একই দৃশ্য দেখা গেছে।


ছুটির দিনে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নতুন উড়ালসড়কে ঘুরতে আসেন। মালিবাগ, ঢাকা, ২৭ অক্টোবর। ছবি: সঞ্জয় অধিকারী
আজ শুক্রবার বিকেলে ওই উড়ালসড়কের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, বাংলামোটর থেকে উড়ালসড়কে ওঠার রাস্তা ফাঁকা থাকলেও নামার অংশ পুরো যানজটে স্থবির। বিকেল সাড়ে চারটায় যানজট বাংলামোটর মোড় থেকে উড়ালসড়কের ওপর দিয়ে মগবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ওপর-নিচে দুই দিকে থেকেই আসা যানবাহনের চাপে অনেকটা স্থবির হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আটকে পড়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. বশির উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার এত টাকা খরচ করে যানজট কমাতে এই উড়ালসড়ক নির্মাণ করল। কিন্তু বাস্তবে তো তার ফল মিলছে না। আজ ছুটির দিনেই যদি আধা ঘণ্টা বসে থাকতে হয়, তবে অন্যদিন কী হবে ভেবে দেখেন!’ একই চিত্র দেখা যায় শান্তিনগর অংশেও। তবে খিলগাঁও ও রাজারবাগ অংশে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল।


উড়ালসড়কের ওপরেই ঝাল-মুড়ির দোকান। মালিবাগ, ঢাকা, ২৭ অক্টোবর। ছবি: সঞ্জয় অধিকারী
আজ ছুটির দিনে অনেকেই সদ্য খুলে দেওয়া উড়ালসড়কে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তুলতে। কথা হয় রাজধানীর বাড্ডা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিনে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে যাই। কিন্তু আজ এখানে এসেছি। নতুন উড়ালসড়ক কেমন হলো, সেটা ওদের দেখাতে নিয়ে এসেছি।’ পাশেই দেখা গেল কয়েকজন কিশোরকে মুঠোফোনে ছবি তুলতে। তারা জানায়, গতকাল স্কুল খোলা থাকায় আসতে পারেনি। তাই আজ বন্ধুরা মিলে দেখেতে এসেছে। নতুন উড়ালসড়কের একেবারে ওপরের অংশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পেরে তারা খুব খুশি বলে জানায়।


উড়ালসড়কের ওপরে ট্রাফিক সিগন্যালে পুলিশের পাশাপাশি তমা গ্রুপের নিজস্ব কর্মীরাও দায়িত্ব পালন করছেন। মৌচাক, ঢাকা, ২৭ অক্টোবর। ছবি: সঞ্জয় অধিকারী
ছুটির দিনে দর্শনার্থী বেশি আসবে—এমন আশায় কয়েকজন হকারকে উড়ালসড়কের ওপরে দোকান নিয়ে বসতে দেখা যায়। ঝাল-মুড়ির বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছিল। নাজিম নামে এক বিক্রেতার কাছে সেখানে বসেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক লোক আসছে তাই বসেছেন। সেখানে বসতে পুলিশ বা অন্য কেউ নিষেধ করেনি বলেও জানান তিনি। তবে উড়ালসড়কের ওপর দিয়ে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের পথে দোকান নিয়ে বসায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।


মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক খুলে দেওয়ার পরও চলছে রং করার কাজ। মগবাজার, ঢাকা, ২৭ অক্টোবর। ছবি: সঞ্জয় অধিকারী
এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো উড়ালসড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল রাখা হয়েছে। মৌচাক ও মালিবাগ অংশে দুই জায়গায় এ সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে পুলিশের পাশাপাশি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের নিজস্ব কয়েকজন কর্মীকেও ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। মৌচাক অংশের সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মো. আমিন বলেন, আজ প্রথম তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। উড়ালসড়কে নতুন এ অভিজ্ঞতা ভালোই লাগছে। তবে উড়ালসড়কের ওপরে তাদের বিশ্রাম নেওয়া বা টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রয়োজনের তাগিদে সেখান থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে যেতে হলেও ওয়্যারলেস গেটে আসতে হবে।

উড়ালসড়কটি চালু হওয়ার পরও এখনো বিভিন্ন অংশে কিছু কাজ চলছে। নির্মাণের পর প্রথম দফায় একবার রং করা হয়েছিল। এখন আবার অনেক অংশে রং করার কাজ চলছে। মৌচাক থেকে মালিবাগ ও খিলগাঁও অংশে যেতে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে রঙের কাজ করতে দেখা যায়।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1352811