২৮ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৯:০০

তদন্ত শেষ করেছে জাতিসঙ্ঘের মিশনগুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ

জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিশনটি কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও এনজিওগুলোর সাথে মতবিনিময় করে মাঠপর্যায়ে তদন্ত শেষে এ অভিমত ব্যক্ত করেছে। তথ্যানুসন্ধান মিশন তাদের প্রতিবেদন জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল ও জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করবে।

রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে গত ২৪ মার্চ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক মারজুকি দারুসম্যানকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ মিশন গঠন করা হয়। মিশনের অন্য দুইজন সদস্য হলেন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রাধিকা কুমরাস্বামী ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ক্রিস্টোফার ডোমিনিক সিডোটি। মিশনের সব সদস্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
মিশনের সদস্যরা গত রোববার ঢাকা পৌঁছে পর দিন থেকে কাজ শুরু করে। এর বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই মিশনের অধীনে থাকা মানবাধিকার কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
এ ব্যাপারে মিশন প্রধান মারজুকি দারুসম্যান গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সফর শেষে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উত্তর রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা আমরা শুনেছি। এসব অভিজ্ঞতা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের একটি পরিকল্পিত নকশা বাস্তবায়নের প্রতিই দিক নির্দেশ করে।
রাধিকা কুমরাস্বামী বলেন, ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ আমাকে একইসাথে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। ভিকটিমদের ওপর যৌন নির্যাতনের যে বর্ণনা আমি শুনলাম তা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নজিরবিহীন। নারীদের চোখে এখনো ভীতির চিহ্ন রয়ে গেছে। এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে না।
ক্রিস্টোফার ডোমিনিক সিডোটি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের সফরে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যতের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এবং বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছায় হওয়া উচিত। এ জন্য রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন।

ঘটনা সম্পর্কে মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর মতামত জানা এবং মাঠ পর্যায়ে তদন্তের জন্য রাখাইন রাজ্যে যেতে চেয়েছিল তথ্যানুসন্ধান মিশন। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের ভিসা অনুমোদন করেনি। মিশনটির মতে, এর ফলে রাখাইন রাজ্যে কী ঘটছে তা বের করা কঠিন হবে, তবে অসম্ভব হবে না। মিয়ানমার সরকারের দাবি অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর আদৌ কোনো আক্রমণ চালানো হয়েছিল কি না সে ব্যাপারে উপসংহার টানতে দেশটির সরকারের দেয়া তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে।
সংগ্রহ করা তথ্যউপাত্ত যাচাই-বাছাই এবং আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তথ্যানুসন্ধান মিশন আগামী মার্চে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে অন্তর্বর্তী এবং সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/263618