মিয়ানমারে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের মুসলিম বিরোধী বিক্ষোভ
২৮ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৮:৫৩

উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু ও রাখাইনদের বাধায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ত্রাণ দিতে পারছে না কোনো সেবা সংস্থা

আরাকানে মগসেনা ও উগ্রপন্থীদের ২মাসেরও বেশি চলা খুন, ধর্ষণসহ তা-ব এখনও অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক নিরস্ত্র নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে বহু মানুষ হত্যা করার পরও ক্ষান্ত হচ্ছেনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উগ্র রাখাইনরা। কোনভাবেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের আরাকানে ঠাঁই হবেনা এমন হুমকি প্রদান করে চলেছে রীতিমতো তারা।

সপ্তাহের কোনদিনও বাদ যাচ্ছেনা মুসলমানদের ওপর চালানো জঘণ্যতম কর্মজজ্ঞের নিকৃষ্ট মাত্রা। সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের পরও অনেকে লুকিয়ে থেকে গেলেও তাদেরকেও খুঁজে বের করে চালানো হচ্ছে নৃসংশতা। এবার থেকে যাওয়া ওইসব বাস্তুচ্যুত মুসলমানদের ত্রাণদানে বিক্ষোভ করে বাধাগ্রস্ত করছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু ও রাখাইনরা। যাদের বাধার মুখে ইতোমধ্যে বেশ’কটি আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। বর্মী প্রশাসনের নির্লজ্জ নিশ্চুপের মুখে আরও বেপরোয়া উগ্রপন্থীরা।

আর এসব উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মগসেনারা ইন্দন যোগাচ্ছে। উগ্রতায় বিশ্বাসী বৌদ্ধ ও রাখাইন তরুণ-যুবকদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক গঠিত সশস্ত্র সংগঠন নাডালা বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের গায়ে পড়ে সংঘর্ষে জড়ানোর উসকানি দিচ্ছে। কঠিন বাস্তবতার আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমান পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের জীবন চলছে উৎকণ্ঠায় ও উদ্বেগে।

সূত্রে প্রকাশ, মিয়ানমারের উগ্রপন্থী রাখাইন বৌদ্ধদের বাধার মুখে পড়ে আন্তর্জাতিক একটি দাতা সংস্থা। আরাকানের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের দূরাবস্থাও দেখতে যেতে পারেনি ওই সংস্থার কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার ২৬অক্টোবর এমন ঘটনা ঘটেছে সেদেশের এক রোহিঙ্গা পল্লীতে।

সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনালে (আরআই) কাজ করেন এমন প্রায় ১০জনের একটি দল মেব্রুন শহরের আইডিপি ক্যাম্প বন্দী রোহিঙ্গাদের দূরাবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তাদের জন্য কিছু ত্রাণ নিয়ে গেলে বাধা দেয় স্থানীয় রাখাইনরা। এসময় বর্মী প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থাকলেও তারা কোনরূপ হস্তক্ষেপ করেনি। বরং উসকে দেয়ায় উগ্রপন্থীদের বাধার তোপে পড়ে মুখে রোহিঙ্গাদের জন্য আনা ওই ত্রাণ না দিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হতে হয় এনজিও কর্মী।

সূত্র আরো জানিয়েছে, উগ্র বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। অবরুদ্ধ করে রেখেছে রোহিঙ্গা পল্লীগুলো। যেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানের যাতায়াতে রাখা হয়েছে কড়া নজরদারি। পথচারিকে দেখামাত্র মুসলমান সনাক্তের ন্যাক্কারজনক অপচেষ্টা চালাচ্ছে উগ্রপন্থীরা। সেখানে তাদের ওপর মারধরের ঘটনাও ঘটে চলেছে। রোহিঙ্গা পল্লীতে খাদ্য-দ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেঁচা কেনা অঘোষিতভাবে বন্ধ করে রেখেছে।

এদিকে বৌদ্ধদের প্রতিবাদের মুখে মেব্রুনে খাদ্য সহায়তা স্থগিত করেছে আরআই। এ প্রসঙ্গে মেব্রুন শহরের প্রশাসক থিন’শোয়ে বলেন, আরআই’র ত্রাণকর্মীরা মেব্রুনের আশ্রয় শিবিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে স্থানীয়রা তাদেরকে সেখানে যেতে বাধা দিয়েছে। বৌদ্ধদের বাধার মুখে ত্রাণ কর্মীরা অফিসে ফিরে গেছেন।

এব্যাপারে দাতা সংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল (আরআই)’র মিয়ানমার পরিচালক সামির মালেহ মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

http://www.dailysangram.com/post/305290