২৭ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩১

মগবাজার-মৌচাক ফাইওভারওঠার সময় ফাঁকা নামতে যানজট

যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে রাজধানীবাসীর বহু দিনের প্রতীক্ষিত মগবাজার-মৌচাক ফাইওভার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ফাইওভারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যদিও এর কিছু অংশ আগেই খুলে দেয়া হয়। উদ্বোধনের পর থেকে উৎসুক নগরবাসী ভিড় করছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ফাইওভারে। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফাইওভারে ওঠার র্যা ম্পগুলো যথেষ্ট ফাঁকা হলেও যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে নামার সময়। তারপরও নগরীর বৃহত্তর অংশের জনগণ মনে করছেন দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি থেকে আপাতত নিষ্কৃতি পেয়েছেন।

ফাইওভার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার প্রতি অনুরোধ, এর ব্যবহারে যতœবান হবেন। ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। জাতীয় সম্পদ মনে রেখে এটা ব্যবহার করবেন। উদ্বোধনের সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর মৌচাক মার্কেটের সামনে বানানো অনুষ্ঠানমঞ্চে ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো: ওসমান গণিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উদ্বোধনের পরপরই ব্যস্ত নগরবাসীর পাশাপাশি ফাইওভারে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। সন্ধ্যার পর হাজার হাজার মানুষ প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সাইকেল এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে উঠে পড়েন ফাইওভারের বিভিন্ন অংশ দিয়ে। আলোকোজ্জ্বল ফাইওভারে চলে জম্পেশ আড্ডা, সেলফি তোলা এবং ঘোরাঘুরি। এ সময় অনেককেই বিতর্কে জড়াতে দেখা যায় এ ফাইওভারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কেউ বলছেন, এর ফলে রাজধানীর যানজট কমবে। আবার কেউ বলছেন বাড়বে। যারা বলছেন কমবে তাদের যুক্তি, গাড়িগুলো ওপর এবং নিচে বিভক্ত হয়ে যাবে। আর অন্যদের দাবি, টোল-ফ্রি হওয়ায় নিচে দিয়ে না গিয়ে সবাই ওপর দিয়ে যাবে। কিন্তু নামার পথগুলো সরু হওয়ায় ফাইওভার থেকে নামার পর বড় ধরনের যানজট হবে।
তবে গতকাল উদ্বোধনের পর থেকে যানজট চোখে পড়ে নামার পথগুলোয়। দুপুরের পর থেকে বেশির ভাগ নামার পথে যানজট ছিল ৫ থেকে ১০ মিনিটের। সন্ধ্যার পর এ জট বেড়ে দাঁড়ায় ২০ মিনিট পর্যন্ত। বাংলামোটরে কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্ট দাবি করেন, এ এলাকায় যানজট নতুন কিছু নয়, উড়াল সেতু থেকে নামার পর যানজট হলেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হবে না। তবে যানজট কমাতে হলে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ দিকে ফাইওভারের মৌচাক পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এ সিগন্যালে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৯ কিলোমিটার দীর্ঘ তিন তলাবিশিষ্ট চার লেনের এই ফাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। এর বিভিন্ন জায়গায় ৮টি বড় মোড় ও তিনটি রেলক্রসিং রয়েছে। এর প্রতিটি পিলার ১৫০ মিটার পর্যন্ত গভীর করা হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ফাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফাইওভারটি দৈর্ঘ্য দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফাইওভার (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)। মৌচাক-মালিবাগ চার লেনের এ ফাইওভারে ওঠানামার জন্য রয়েছে ১৫টি র্যা ম্প। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যা রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্পও সহ্য করতে পারবে। এর বিভিন্ন জায়গায় ৮টি বড় মোড় ও তিনটি রেলক্রসিং রয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে মালিবাগ-মগবাজার ফাইওভারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর শুরু হওয়া ফাইওভারটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। তবে নকশায় ত্রুটি, সঠিক নকশা পেতে দেরি, ড্রয়িং-ডিজাইনসহ বিভিন্ন জটিলতায় বেশ কয়েকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। উদ্বোধন উপলে রঙিন সাজে সেজেছে পুরো ফাইওভার। ফাইওভারটি নির্মাণে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দিয়েছে ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

দীর্ঘদিন দুর্ভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের পর উদ্বোধনের খবরে ফাইওভারটির আশপাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। জানতে চাইলে মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘গত চার বছরে এই সড়কটিতে কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তা বলার মতো নয়। যেমন হাঁটু পানি, তেমনি কাদামাটি। এর মধ্যে যানজট। আমরা আশপাশের মানুষ হেঁটে চলা ছাড়া যানবাহনের কথা চিন্তাও করতাম না। এখন ফাইওভারটি উদ্বোধন করা হচ্ছে শুনে খুব ভালো লাগছে। চার লেনের ফাইওভারটি ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলোÑ সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। তিন ভাগে বিভক্ত ফাইওভারটির একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশ নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন।

গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। আরেক অংশ গেছে মৌচাক থেকে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এই অংশের এক দিক খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। অন্য দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কাওরানবাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় চলতি বছর ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। সর্বশেষ গতকাল খুলে দেয়া হয় উড়াল সড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশটিও। এ অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/263327