২৬ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:১৬

চালের দাম আর কমছে না

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মন্ত্রীদের বৈঠক এবং গুদামে প্রশাসনের অভিযানের পর চালের কেজিতে ৫-৭ টাকা কমে এখন বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের চাপে চালের দাম একধাপ কমিয়ে থেমে গেছেন দেশীয় মিল মালিকরা। তবে আমদানি করা চালের দাম তুলনামূলক কম থাকায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তাদের আশা, খুব শিগগিরিই চালের দাম আরো কমবে। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে চালের আমদানি ক্রমেই বাড়ছে।

নতুন ধানের মৌসুমও কাছাকাছি। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তিনটি দেশ থেকে আমদানি করা মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। কাওরান বাজারের চালের পাইকার বাদশা রাইস এজেন্সির মালিক বাদশা মিয়া বলেন, একটা সময় টাকা ছিল টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যায়নি। এখন চালের অভাব নেই। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর চাল আসছে। সরবরাহও ভালো। তবে খুচরা বাজারে কেনো কমছে না তা বলতে পারেননি তিনি। বাদশা বলেন, মানভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) গুটি বা স্বর্ণা চাল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। অর্থাৎ পাইকারিতে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। অন্যদিকে খুচরা বাজারে এই মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। বিআর-২৮ চাল পাইকারি বাজারে প্রায় ছয় টাকা পর্যন্ত দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা বিআর-২৮ চালের দাম আরো কম। পাইকারি বাজারে এই চাল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৮-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজারের চাল বিক্রেতা কাওসার আলী বলেন, দোকানে দুই ধরনের বিআর-২৮ চাল বিক্রি করছি। একটা দেশি, আরেকটা ভারতীয়। কেজিতে দামের পার্থক্য ছয় থেকে সাত টাকা।
বাজারে পাইকারিতে বিভিন্ন ধরনের মিনিকেট চালের দাম বস্তায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সে হিসাবে কেজিতে ছয় থেকে সাত টাকা করে পড়ছে। তবে যে হারে পাইকারিতে কমেছে সে হারে খুচরা বাজারে কমেনি। এখন ৫৮ থেকে ৬২ টাকার মধ্যেই মাঝারি মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভালোটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। এদিকে সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমলেও নাজিরশাইল খুচরা বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৬ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬২ টাকা, নাজির শাইল ৬২-৬৬ টাকা, মাঝারি সরু চাল ৪৮-৫০ টাকা আর মোটা চাল ৪৪-৪৮ টাকা দরে।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি, কোনো কোনো জায়গায় তারও একটু আগে নতুন ধান কাটা শুরু হবে। নতুন ধান বাজারে এলে চালের দাম আরো কমবে।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা গোলজার হোসেন বললেন, নতুন ধান বাজারে না এলে নাজিরশাইল চালের দাম কমবে না।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। গত বোরো মৌসুমে ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য থাকলেও বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় ২০ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে করে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়। একই সঙ্গে সরকারের গুদামে চালের মজুদ আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। আর এই সংকটের সুযোগ নেয় ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের আমদানি শুল্কে ছাড়সহ নানা সুবিধা সরকারের কাছ থেকে আদায় করলেও নানা কারণ দেখিয়ে তারা চালের বাজারে অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর চালের পাইকারি মার্কেট বাবুবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকরা চালের দাম কমাচ্ছেন না, ফলে আমরাও কমাতে পারছি না।
ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম তেমন কমেনি। হাতিরপুল বাজারের বাসিন্দা জাহিদ বলেন, ব্যবসায়ীরা বলেন চালের দাম কমেছে, আরো কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা না। সরু চাল আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। বাজারে কোনো জিনিসের দামই কম না। সীমিত আয় দিয়ে চলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=89192