২৬ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৫২

মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ ডিবির ৭ সদস্য আটক, বরখাস্ত

টেকনাফের ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় * পালিয়ে গেছেন এক এসআই

টেকনাফে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ আটক পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাত সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের মহেষখালীয়াপাড়া এলাকায় বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তারা আটক হন। পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। বরখাস্তদের মধ্যে দু’জন এসআই, তিনজন এএসআই ও দু’জন কনস্টেবল রয়েছেন। আটকের সময় মনিরুজ্জামান নামে এক উপপরিদর্শক (এসআই) পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে মঙ্গলবার সকালে অপহরণ করে ডিবির একটি দল। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। কিন্তু দরকষাকষির পর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পাওয়ার পর তাকে ভোরে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে একটি বাহিনীর সদস্যরা ডিবির সদস্যবাহী গাড়িটি থামিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার ও সাতজনকে আটক করে। এ সময় মনিরুজ্জামান নামে একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পালিয়ে যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, আটক সাত ডিবি সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- এসআই মনিরুজ্জামান, এসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই যথাক্রমে মো. গোলাম মোস্তাফা, ফিরোজ আহম্মদ ও আলাউদ্দিন এবং কনস্টেবল মোস্তফা আজম ও মো. আল আমিন। তিনি বলেন, তাদের কক্সবাজার পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন বলেন, কোনো অপকর্মকারীকে ছাড় দেয়া হবে না। সে পুলিশ হোন বা অন্য কেউ হোন। টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উদ্ধার করা টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা থানায় জমা নেয়া হয়েছে। পরে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে মালিককে টাকা ফেরত দেয়া হবে।

ব্যবসায়ী গফুরের বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, তার ভাইকে কক্সবাজার থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও সাংবাদিকদের স্বাক্ষরে ১৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা টেকনাফ থানায় জমা রাখা হয়েছে। বাকি দুই লাখ টাকা (ধার করা হয়েছিল) এক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ী গফুর যুগান্তরকে জানান, মঙ্গলবার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য তিনি কক্সবাজার যান। কক্সবাজারের হোটেল আল গনিতে দুপুরের খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। কলাতলী এলাকায় একটি নির্জন বাউন্ডারি ঘেরা জায়গায় আটকে রেখে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় ক্রসফায়ার অথবা ইয়াবা দিয়ে চালান দেবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ১৭ লাখ টাকায় দফারফা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, গফুর ও তার পরিবারের তিন সদস্য টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী।

https://www.jugantor.com/first-page/2017/10/26/166398