২৬ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৫১

সিটিং সার্ভিসে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনেও নেই বাধা

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসে ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য থামছেই না। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আদায় করলেও অতিরিক্ত যাত্রী নিতেও কোন বাধা মানছে তারা। কোন প্রতিবাদ করেও লাভ হয়না। শুরু থেকেই নগরীর সিটিং সার্ভিন নিয়ে যাত্রীরা নানা অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীতে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবহনের সেবার মান যাত্রীবান্ধব হলেও সিটিং সার্ভিসের নামে বেশিরভাগ পরিবহনের বিরুদ্ধেই আছে নানা অভিযোগ।

এদিকে রাজধানীতে চলাচলকারী বাসে সিটিং সার্ভিস এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা মিটারে না যাওয়ার বিরুদ্ধে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, সিটিং সার্ভিস ও মিটারে সিএনজি (অটোরিকশা) না যাওয়ার বিষয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি দু-তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। ওই রিপোর্টের আলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারী যানবাহন চলাচলসহ নানা কারণে দেশে সড়ক রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সড়ক ও মহাসড়ক পরিবহন বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের পর তারা একটি মিটিং করে রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, সিটিং সার্ভিস এবং ভাড়া আদায়ের এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তৈরি হয়নি নতুন কোনো নীতিমালাও। ফলে রাজধানীর গণপরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে আগের মতোই স্বেচ্ছাচারীভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক পরিবহন নিয়ে তৈরি হওয়া আইনে মহানগরের পরিবহন সেবা কেমন হবে তার একটি ধারা তৈরি হওয়া উচিত। তাই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নীতিমালা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
যাত্রীদের দাবি এবং চাপের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দিনের জন্য সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও পরে তা আর বন্ধ হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপের মুখে রাজধানীতে চলছে সিটিং সার্ভিস। গত এপ্রিলেই দুই সপ্তাহের জন্য সিটিং সার্ভিস বিরোধী অভিযান স্থগিত করা হলেও ছয় মাসে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সিটিং সেবার পক্ষে-বিপক্ষে যাত্রীদের মত থাকলেও এর নামে আদায় করা ভাড়া নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই কারো। কোনো সড়কে কোনো নিয়ম নেই। প্রতিদিনই যাত্রীসাধারণের সঙ্গে বাস শ্রমিক ও চালকদের বাক-বিতন্ডা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ বাস শ্রমিক ও চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। যেখানে-সেখানে যাত্রী তুলছেন। এ ভাবেই সিটিং সার্ভিসের নামে বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারিত হয়ে আসছেন নগরবাসী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনায় না নিয়েই পরিবহন খাতের এ নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া হঠাৎ করে সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধের সিদ্ধান্তকে পরিবহন মালিকদের কাছে নতি স্বীকার করা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সিটিং সার্ভিস নামে পরিবহন মালিকদের অভিনব প্রতারণার অবসান চায় নগরবাসী।

নগর গবেষণা কেন্দ্র’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শহরের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় রয়েছে চরম দুর্বলতা। তাই এটা বাস্তবায়ন ও পরিচালনের জন্য উপযুক্ত নীতিমালা ও আইন থাকতে হবে। তাছাড়া এ নৈরাজ্য বন্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সরকারকে কঠিন হতে হবে। কিন্তু সেগুলো হচ্ছে না। ফলে গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সুষ্ঠু কোনো নীতিমালা না হওয়ায় এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বললেন, নানা সমালোচনা থাকলেও ঢাকায় সিটিং সার্ভিসের ব্যাপক চাহিদা আছে। তবে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে নির্ধারিত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানালেন তিনি।

http://www.dailysangram.com/post/305051