২৬ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৯

অবরুদ্ধ গ্রামগুলোর রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে

কোনভাবেই থামছে না বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ বর্মী প্রশাসনের জুলুম নির্যাতনের মাত্রা। গত ২ মাসে মগসেনা ও উগ্রপন্থী রাখাইনদের হাতে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে। গতকাল ২৫ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের উপর বর্মী সেনাসহ উগ্রপন্থীদের তান্ডবের ২ মাস পূর্ণ হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে শুরু হওয়া সেনা তান্ডব এখনো থামেনি। আটক পরবর্তী গুপ্তহত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধর্ম পালনে বাঁধা ও লেলিয়ে দেয়া রাখাইনদের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে মায়ানমার প্রশাসন।

বার্মার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরু করার পর আন্তর্জাতিক নিন্দা ও তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও গত দুই মাসেও আরাকানে মানবাধিকার পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সেনারা থামায়নি রোহিঙ্গাদের প্রতি পাশবিক আচরণ। অবরুদ্ধ করে রেখেছে সেসব গ্রাম, যেসব গ্রামের রোহিঙ্গারা এখনো দেশ ছেড়ে পালায়নি।

সেনারা তাদেরকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটের মধ্যে জীবন পার করছেন তারা। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এসব রোহিঙ্গা রাখাইনে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে টিকে থাকার জন্য চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ছোট দল বেঁধে রোহিঙ্গারা এখনও বাংলাদেশে চলে আসছে।

অন্যদিকে বার্মার বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক ভিক্ষুরা সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনছে। গত ২২অক্টোবর রোহিঙ্গা বিরোধী বিক্ষোভ করে সাধারণ রাখাইনদের উস্কে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন এবং তাদের সাথে সহাবস্থান না করার জন্য নানান প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ করেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের। সে থেকে উগ্রপন্থীদের সাথে রাখাইনরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। লুটপাট করছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য করছে। গত দু’দিনেও শ’পাঁচেক রোহিঙ্গা বুথিদং ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ, যে সব রোহিঙ্গা মুসলমানরা আরাকান ছেড়ে যায়নি, তাদের উঠতি বয়সের ছেলেদের আটক করে কয়েদখানায় ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কুইন্দাল নামের গাছের বেরিতে আটকে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। তাদের ঠিক মত খাবারও দেয়া হচ্ছেনা।

এদিকে বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্মা সফরে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অংসান সূ চি বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিতে কাজ করছে বার্মা সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. কর্নেল চ সুয়িও একই কথা জানান। কিন্তু রোহিঙ্গাদেরকে বার্মার নাগরিক নাকি অভিবাসী হিসেবে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।

উল্লেখ্য, গত ২ মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে ৬লক্ষাধিক। অগণিত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রায় ৪’শ গ্রামের ৪০ হাজারের অধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে সেনা ও উগ্রপন্থী রাখাইনরা।

http://www.dailysangram.com/post/304955