রামপুরা সড়কের বেহাল দশা
২৫ অক্টোবর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৯

ভাঙা সড়কে দুর্ভোগ

রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, তা একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় যানবাহন ও যাত্রীদের অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। যানজটের অন্যতম কারণও এসব সড়ক। সিটি করপোরেশন দু-একটি সড়কে ইট-বালু ফেলে কোনো রকমে মেরামত করলেও বেশির ভাগ সড়কই থাকছে মেরামতহীন। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে এসব সড়কের অবস্থা আরো করুণ। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী।
এ বছর দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির মওসুম চলছে। আষাঢ় মাসের অনেক আগে থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর পুরো আষাঢ়জুড়েই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছে। সে ধারা এখনো থামেনি। বর্ষাকাল শেষ হয়েছে দু’মাস আগে; কিন্তু গত শুক্র ও শনিবার টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে রাজধানীতে দু’দিনে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে পানি জমে যায়। অনেক সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে থাকে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। কিছু সড়ক থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পর পানি সরে গেলেও এখনো কিছু সড়কে পানি জমে রয়েছে। প্রকৌশলীদের মতে পিচের রাস্তার সবচেয়ে বড় শত্রু পানি। এ কারণে সড়কে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় বেশির ভাগ সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে যেসব সড়ক ভাঙাচোরা ছিল সেসব সড়কে আরো বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। আর যে সড়কে ছিল না সেখানেও গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেক সড়ক এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। কোনো কোনো সড়কে গাড়ি এমনকি পথচারীদের চলাচলও মুশকিল হয়ে গেছে।

রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরাগামী সড়কে প্রতিদিন কয়েক লাখ যানবাহন চলাচল করে। এ সড়কটির রামপুরা ব্রিজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। মালবাহী ভারী গাড়ি চলার কারণে সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে যাচ্ছে। এতে ওই সড়কে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়ই যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ির পাশাপাশি পথচারীরাও সমস্যায় পড়ছেন। হেঁটে যাতায়াতকারীদের কাদা মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ি থেকে কাদা ছিটকে নষ্ট হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছদ। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পড়ছে চমর বিপাকে। গত ৪ জুন রামপুরা বনশ্রীর স্থানীয় বাসিন্দা এ এফ এম কামরুল হাসান খান পাঠান বাদি হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী হয়ে আমুলিয়া পর্যন্ত সড়কটি রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একই সাথে এ রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান এবং রাস্তাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে নাÑ তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। কিন্তু এখনো অব্যাহতভাবে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। রাস্তাটি উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। এ ব্যাপারে উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র ওসমান গণি জানিয়েছেন, সড়কটি সংস্কারে টেন্ডার-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সড়কটির উন্নয়নে কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মহাখালী থেকে সাতরাস্তা রাজধানীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক; কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকেই সড়কটি ভেঙেচুরে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশন ইট দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করে। কিন্তু ক’দিন না যেতেই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সড়কটির অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে গেছে। বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের চালক আসলাম হোসেন বলেন, অনেক দিন থেকেই রাস্তাটি খারাপ। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে যায়। আর রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে গাড়ি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া যানজটের শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। এতে গাড়ির ট্রিপ সংখ্যা কমে আয়ও কমে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
রামপুরায় সম্প্রতি সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। এতে খানিকটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো সড়কের বেশখানিক অংশ এবড়োখেবড়ো রয়েছে। বড় বড় গর্ত দিয়ে চলতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রিকশাসহ ছোট গাড়িগুলো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রায়ই। মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে থেকে খিলগাঁওগামী বাইপাস সড়কটি অনেক দিন থেকেই খারাপ অবস্থা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ সড়কসহ আশপাশের সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। এতে সড়কটিতে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ওই সড়কে ইট ফেলে মেরামতের চেষ্টা হলেও এখন আবার পরিস্থিতি খুবই করুণ হয়ে গেছে। এ সড়কের পাশে থাকা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

খিলগাঁও ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদগামী লুপ থেকে পূর্ব দিকে বাসাবো সড়কের নন্দীপাড়া পর্যন্ত অংশ চলাচলের প্রায় অনুপোযুক্ত হয়ে গেছে। অসংখ্য ছোট বড় গর্ত দিয়ে চলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। বৃষ্টি হলে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। সম্প্রতি আইডিয়াল স্কুলের সামনে সব সময় হাঁটুপানি জমে থাকছে। রাস্তা ভাঙা থাকায় সব ধরনের গাড়ি ও পথচারী চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। রিকশা উল্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাসাবো ওয়াসা রোডের অবস্থাও শোচনীয়। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে রাস্তা দেবে গর্ত তৈরি হয়েছে। উত্তর গোড়ান, সিপাহীবাগ, মুগদা, মাণ্ডাসহ আশপাশের এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। কোথাও রাস্তায় বড় গর্ত আবার কোথাও পানি জমে রয়েছে। বৃষ্টি হলেই গুলিস্তান থেকে বঙ্গভবনগামী সড়কের হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। এ কারণে ওই সড়কটিও ভেঙেচুরে গেছে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুরগামী টয়নবী সার্কুলার রোডে ভেঙে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারগামী বিশ্বরোডে সম্প্রতি পিচ ঢালাই দিলেও টিটিপাড়া মোড়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এ ছাড়া টিটিপাড়া মোড় থেকে কমলাপুর স্টেশনগামী সড়কটিতেও ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে বৃষ্টি হলেই ওই সড়কে পানি জমে যাচ্ছে।
তবে ঢাকা দক্ষিণের ৯০ শতাংশ রাস্তাই ভালো রয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে ১০ শতাংশ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব রাস্তা মেরামতে দরপত্রও আহবান করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, বর্ষা শেষ হলেই এসব রাস্তার মেরামতকাজ শুরু হবে এবং অতি দ্রুততার সাথে তা শেষ করা হবে।

ম্যানহোল আতঙ্ক : সড়কে ম্যানহোল এক বড় আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। অনেক সড়কে পিচ ঢালাই দিলেও ম্যানহোল রয়ে গেছে নিচু। ফলে সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে হঠাৎ করেই গাড়িগুলো এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীরা সবচেয়ে বিপদের মুখে পড়ছেন। সম্প্রতি আদালত থেকে এ ব্যাপারে একটি দিকনির্দেশনা দিলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া কোনো কোনো সড়কে ম্যানহোলের ওপর ঢাকনা তৈরি করলেও তা রাস্তা থেকে উঁচু হয়ে রয়েছে। এ কারণে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/262918