২৩ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৮:৫৯

ইসির ওপর বড় দায়িত্বদেখা অদেখা


চলতি বছর পার হতে দুই মাসের সামান্য কিছু বেশি সময় রয়েছে। আগামী ২০১৮ সালটি সব দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। নানা বিবেচনায় এর গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষ করে আগামী বছর দেশে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সময় নির্ধারিত রয়েছে। এই নির্বাচন আগামী বছরের শেষের দিকে হওয়ার কথা। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে এই নির্বাচন তার আগে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লক্ষণীয় যে, বেশ কিছু দিন আগে থেকেই দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা এলাকায় তাদের অবস্থানসংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। পত্রিকার এসব খবর দেশের সর্বত্র একটা নির্বাচনী আমেজ তৈরি করছে। কিছু দিন আগে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ঘাড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এসে পড়ায় সব কিছু ছাপিয়ে দেশের মানুষের মনোযোগ তাতেই নিবদ্ধ হয়। দুস্থ ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি গভীর সহানুভূতিতে দেশের মানুষ আপ্লুত হয়ে পড়ে, তার জের এখনো চলছে। এসব পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সে কারণেই জনগণ সব সমস্যাকে আগলে নিয়েই নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাবে। হঠাৎ করে ক্ষমতাসীনেরা তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অকারণ ধরপাকড় ও চাপ প্রয়োগ করছে। যেটা থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে আগামী বছর থেকে সেটা শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তা আগেই শুরু হয়েছে। তাই পর্যবেক্ষকদের ধারণাÑ নির্বাচন আগেভাগে করার জন্যই এখন থেকে তাদের প্রতিপক্ষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পথ রুদ্ধ করতেই এমন পরোয়ানা জারি হচ্ছিল বলে তার দল মনে করে। বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরও আটক করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটের মধ্যেই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ ৪০টি রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শেষ হয়েছে। সংলাপের শুরুতে এর ভাগ্য নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল শঙ্কিত ছিলেন সংলাপ সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে কি না। এখন সে শঙ্কা দূর বটে, তবে এই সংলাপে দলগুলো যে সুপারিশ করেছে তার ভাগ্য কী হবে তা বলা সম্ভব নয়। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এ সংলাপ শেষে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন এই সংলাপ হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান বিরোধ মিটবে না। এর সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশ ইসি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ৫০০ প্রস্তাব পেয়েছে, তবে একই ধরনের প্রস্তাব বেশি। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছে ২৫টি দল। এগুলোর বিএনপিসহ ১১টি দল আবার প্রস্তাব করেছে ম্যাজিস্ট্রেসি (গ্রেফতারি) ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংলাপে অংশ নিয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে। সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, সংসদ ভেঙে নির্বাচন অনুষ্ঠান সেনাবাহিনী মোতায়েন অন্যতম। এর আগে সুশীলসমাজও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ইসির সংলাপে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরূপ প্রস্তাব দিয়েছিল।

কয়েকটি বিষয় যেমন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে মোটামুটিভাবে প্রায় সব দলই একমত। বলতে গেলে এসব ইস্যুতে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার একটি পরীক্ষিত বিষয়। এমন সরকারের অধীনে একাধিকবার সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো বিষয়েই কোনো অভিযোগ ওঠেনি। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানির ঘটনা ঘটেনি, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। ভোট শেষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো কারচুপি ও অনিয়মের কোনো অভিযোগ করেনি। পরীক্ষিত এই নির্বাচনপদ্ধতিটি সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে আদালত তা বাতিল করে দেন। কিন্তু বৃহত্তর জনগণ যে বিষয়টি কোনো আপত্তি ছাড়াই গ্রহণ করে নিয়েছিল; যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছিলÑ তার কোনো বিকল্প না নিয়ে বাতিল করে দেয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে তা বিবেচনার বিষয়। সে যা-ই হোক এখন দেশে বেশির ভাগ দল যখন পুনরায় নির্বাচনসহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের দাবি রাখে। তাই এই দাবিটি বিহিতের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে উদাহরণ পেশ করা যেতে পারে : ১৯৯১ সালে একটি নির্বাচনী সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। তখন সেটা সংবিধানে ছিল না। কিন্তু বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ফলে সে সময় নির্বাচনসহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টি শুধরে নিতে সংবিধান পর্যন্ত সংশোধন করা হয়েছিল। এখনো এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন দল যে নির্বাচনসহায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়েছে, সেটা আইন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করা যেতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন যখন সবার লক্ষ্য তখন এতে কারো কোনো বাধা সৃষ্টি করা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সংলাপে দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছে, সংসদ বহাল থাকলে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা (যাদের সংখ্যা ৩০০) তখন নিজ নিজ এলাকায় ক্ষমতার চর্চা করবেন। প্রশাসনকে তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ দেবেন। আর তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি হবে। সংসদ ভেঙে দিলে আর এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ থাকবে না।
ইসির সাথে সংলাপে বেশির ভাগ দল নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, ভোটার আর প্রার্থীরা নিরাপদ বোধ করতে পারেন সে জন্য নির্বাচনের আগে সেনা মোতায়েনের অনুরোধ করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন পরিবেশ স্বাভাবিক করতে কোনো বিতর্ক ছাড়াই এই অনুরোধ মেনে নেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন প্রশ্নমুক্তভাবে করার কথা বলেছেন, তাই তাদেরও এসব দাবির প্রতি সমর্থন জানানো উচিত বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।

দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে ব্যক্তির দলের বোধচিন্তাকে পরিহার করতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও অবিতর্কিত নির্বাচন এখন সবার একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেননা এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশে অস্থিরতা ও বিভাজন ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। তাতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠবে। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে উন্নয়নও সম্ভব নয়। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন পরস্পর পরিপূরক। এ দুটো না থাকলে বাংলাদেশের যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তা ভেস্তে যাবে।
গণতন্ত্রের অবর্তমানে জবাবদিহিমূলক একটি শাসনব্যবস্থা দেশে প্রতিষ্ঠিত নেই। ফলে এর নানা উপসর্গ ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অনিয়ম-অব্যবস্থা সৃষ্টির ফলে প্রায় সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ খবর শুধু দেশের ভেতরে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পর্যবেক্ষণে এসেছে যে, বাংলাদেশ একটি শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্র। এই কলঙ্ক শুধু ঘোচাতে পারে একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক-ব্যবস্থা। সমাজে যেমন নৈতিকতা শিক্ষা ও চর্চার অভাব রয়েছে, তেমনি দেশে এর অভাবে প্রতারণা ও অসামাজিক কার্যকলাপ দেদার চলছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। জননিরাপত্তা বলতে গেলে হুমকির সম্মুখীন। এমন দুঃসহ পরিস্থিতি বিরাজ করলে জনজীবনে স্বস্তি আশা করা সুদূরপরাহত।

আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের মতামত, সিদ্ধান্ত সব বিবেচনায় তাৎপর্যপূর্ণ। ইসির সাথে তারা সংলাপে মিলিত হয়েছে সম্প্রতি। আগামী নির্বাচন ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তারা সংলাপে গিয়ে পেশ করেছে। এর গুরুত্বের বিচারে নির্বাচনে তারা বর্তমানে বহাল নির্বাচনী এলাকা বহাল রাখা এবং ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএম পদ্ধতি চালু করার কথা বলেছে। কিন্তু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন তারা চায় না। ইভিএম পদ্ধতি চালুর প্রতি অন্যান্য দলের আপত্তি রয়েছে। তা তারা সংলাপের সময় জানিয়ে এসেছে। কোনো কোনো উন্নত দেশে এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেসব দেশের জনগণের শিক্ষা ও প্রযুক্তিজ্ঞান ঊর্ধ্বে। তাই সেসব দেশে এই পদ্ধতি চালু করা সম্ভব। আবার বেশ কিছু উন্নত দেশে এই পদ্ধতি চালু করেও পরে তা বাতিল করে দেয়া হয়। অনিয়ম ও অব্যবস্থার কারণেই তা বাতিল করা হয়। বাস্তবতার কারণে আমাদের দেশে এই পদ্ধতি চালু করা সম্ভব নয়। দেশের শহর, বন্দর, নগর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোট দিতে সক্ষম হবে না। সে ক্ষেত্রে তাদের অন্যের সাহায্য নিতে হবে। জনগণ তার ভোট তার পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারছে কি না তাতে সন্দেহ থাকবে। তা ছাড়া এতে ভোটের গোপনীয়তা বিঘিœত হবে। আর এই পদ্ধতিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেলে ভোট গ্রহণ বিঘিœত হবে। এর আগে এক দফা এই ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে ময়মনসিংহে পরীক্ষামূলক ভোট গ্রহণ করার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা পরিত্যক্ত হয়। আওয়ামী লীগ সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণটা আসলে বোধগম্য নয়। সেনা মোতায়েন হলে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ভোটার ও প্রার্থীরা নিরাপদ বোধ করবেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে সহায়ক হবে, তাই এর বিরোধিতা করা সঙ্গত নয়। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্ব রয়েছে। এ দিকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের এক যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহতকরণে তার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করব। আওয়ামী লীগ চায় আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের। তিনি বলেছেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হোক। কেননা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একদিন আমরাই সংগ্রাম করেছিলাম। তিনি বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার সুসংহত করে গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রদানই তার দলের লক্ষ্য। গণতন্ত্রের ভিত্তিটাকে আগে মজবুত করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার যেন আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে না পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য। এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যা যা করণীয়Ñ আমরা তা করে যাবো। এর আগে বহুবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে এমন কথা বলেছেন। তবে এবার কিছু কথা তিনি বলেছেন যা এর আগে তিনি বলেননি। তিনি এবার নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনার কথা বলেছেন। নির্বাচন নিয়ে অন্যদের মতামতকে গ্রাহ্য করার বিষয়ই এর মাধ্যমে বোঝা যায়। নির্বাচন নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ হওয়া উচিত। এতে করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি কাক্সিক্ষত মানের নির্বাচন করা যায়। যাতে দেশে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছাটা বোঝা যায় এবং সে আলোকে সরকার গঠিত হতে পারে। এই দাবি বস্তুত জাতীয় দাবি আর এটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। আরো কিছু অভাবের কথা তিনি বলেছেন। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নির্মাণের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নির্মিত হয়নি। আমরা যদি জাতীয় সংসদের দিকে তাকাই তবে দেখব এই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে। অথচ এর মৌলিক দায়িত্ব একটি সরকারের জবাবদিহি নেয়া, দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য আইন প্রণয়ন করা; জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এবং তার সমাধান দেয়া; ক্ষমতাসীন সরকার সঠিকভাবে সংবিধান ও বিদ্যমান অন্যান্য আইন অনুসরণ করে প্রশাসন পরিচালনা করছে কি না, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে তার দেখভাল করা। কিন্তু এখন এর অবর্তমানে জাতীয় সংসদ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি, দেশকে একটি অগ্রসরমান রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে অবশ্যই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। রাজনৈতিক দলও একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেশুমার। প্রকৃত দলের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি কিন্তু এসব সংগঠন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠেনি। দলগুলোর গঠনতন্ত্র রয়েছে কিন্তু সেই গঠনতন্ত্রের অনুসরণ নেই, নেই দলে গণতন্ত্রের চর্চা। আর রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় দলের সংখ্যা দু’টি, একটি ক্ষমতাসীন অপরটি বিরোধী দল। কিন্তু সেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারছে না। যারা ক্ষমতায় যান তারা প্রতিপক্ষ কাউকে বিবেচনায় নিতে চান না। ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের বিবেচনা অনুসারে চলেন। বিরোধী দলের কোনো পরামর্শ বা কোনো সমালোচনা তারা গ্রাহ্য করেন না। ফলে তারা সক্রিয় এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। নির্বাচিত সংসদ না হওয়ার কারণেই এর এই দুর্ভাগ্যজনক হাল।

সে যা-ই হোক, ইসির সাথে সুষ্ঠুভাবে সংলাপ শেষ হয়েছে। এটা স্বস্তির ব্যাপার। কিন্তু এখন সংলাপ-উত্তর যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে তা সফল করতে সরকার এবং ইসি তাদের পরবর্তী কার্যক্রমই সবচেয়ে মূল্যবান। নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার মধ্যে এই সংলাপের সাফল্য নির্ভর করছে। ইসিকে কোন পথে অগ্রসর হতে হবে তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো তাদের দেয়া ৫০০ প্রস্তাবের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে একটি প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন করে ইসি তার পারঙ্গমতা ও যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে পারে। আর তার মাধ্যমেই ইসির ঘাড়ে চাপানো ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব। ইসির দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে হবে। ইসির দায়িত্ব যেমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া, তেমনি সরকারের দায়িত্ব তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব জাতির কাছে যে প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন তার বাস্তবায়ন করা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/262362