২৩ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৮:৫৮

রোহিঙ্গাদের পিছু ছাড়ছে না দুর্ভোগতাঁবুতে কাদাপানি; এখনো আরাকানে জ্বলছে বাড়িঘর; বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে হাজারো রোহিঙ্গা

বৃষ্টিতে কক্সবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি :নয়া দিগন্তবৃষ্টিতে কক্সবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি :নয়া দিগন্ত
নি¤œচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতে দুর্ভোগ বেড়েছে রোহিঙ্গাদের। বিশেষ করে নতুন আসা রোহিঙ্গারা অনেকেই এখনো মাথাগোঁজার ঠাঁই না পাওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ঠাণ্ডাজনিত রোগে। ত্রাণসংগ্রহেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
নি¤œœচাপের প্রভাবে গত তিন দিনে কক্সবাজারে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বেড়েছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের। এখনো ঝুপড়ি তুলতে না পারায় অনেকেই ভিজেছেন বৃষ্টিতে। আগে থেকে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্তদের অসুস্থতা আরো বেড়েছে। বেড়েছে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধরা মানবেতর দিনযাপন করছেন।

এ দিকে মিয়ানমারে নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ত্রাণ সংগ্রহে অনেককেই ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঘর না পেয়ে অনেকেই রাস্তার ধারে বৃষ্টিতে ভিজেছেন। বৃষ্টিতে ভিজে অনেকেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব রোগী ভিড় করছেন চিকিৎসা ক্যাম্পগুলোতে।
পাহাড়ের ঢালুতে গাদাগাদি করে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের চলাচলের পথগুলো কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেই না। বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটে তাদের।
কাদায় আটকে পড়ে ত্রাণবাহী যানবাহন। ত্রাণ বিতরণে কিছুটা শৃঙ্খলা ফেরার পর বৃষ্টিতে তা আবারো ব্যাহত হয়। তবে অনেক শরণার্থীই টোকেন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
গত শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে উখিয়ার বালুখালী পানবাজারের পশ্চিমে বিস্তৃত পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের নতুন অস্থায়ী ক্যাম্প।
ওই ক্যাম্পে ঢোকার জন্য তৈরি করা হয়েছে ব্রিকরোলিং পথ। তাও কর্দমাক্ত। পিচ্ছিল পাহাড় থেকে তাঁবুতে যাতায়াত করাও কষ্টসাধ্য। পাহাড়ে বন বিভাগের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২২ শ’ রোহিঙ্গা পরিবার। এখানে রোহিঙ্গারা এলোমেলোভাবে যার যার মতো করে শত শত ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। পলিথিন ও জঙ্গলের ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এরই মধ্যে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে তাদের মাথাগোঁজার আশ্রয়টুকুও। ফলে শত শত রোহিঙ্গা পরিবার এখন দিশেহারা। অনেকের তাঁবুতে রান্না নেই। তবুও থেমে নেই ুুধাতুর রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ অনেকেই তাঁবু থেকে বেরিয়ে পড়েন ত্রাণের সন্ধানে। পাহাড়ের পাদদেশে টাঙানো তাঁবুগুলো দমকা হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আবার বালুখালী কাস্টম অফিসের সামনে অবস্থান নেয়া সহস্রাধিক তাঁবু এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওপরে ত্রিপল থাকলেও নিচে কাদাপানি। ত্রিপলের ছিদ্র দিয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ে। এ চিত্র শুধু কুতুপালংয়ের নতুন ক্যাম্পেই নয়, উখিয়া, টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুমসহ বেশির ভাগ ক্যাম্পেই একই অবস্থা।
গত শনিবার ভোর থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ছিল উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে। তারপরও বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়া হয় বেসরকারি ও ব্যক্তি বিশেষের ত্রাণ। গত শনিবার দিনভর ত্রাণের জন্য রোহিঙ্গাদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। টেকনাফ থেকে উখিয়ার অন্তত ১২টি পয়েন্টে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটু পর্যন্ত কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ত্রাণপ্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। সবখানেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এসব রোহিঙ্গা কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ত্রাণের অপেক্ষায়। অনেকের মাথার ওপর মিয়ানমার ও ইউএনসিএইচআরের দেয়া ছাতা। শিশুদের বড় একটি অংশই খোলা জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজছিল। অনেককেই দেখা গেছে ত্রাণের বোঝা মাথায় নিয়ে তাঁবুর দিকে ফিরতে।

অন্য দিকে গত শনিবার বালুখালীর নতুন ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালুতে এবং পাদদেশে থাকা তাঁবুগুলোতে কাদাপানি। ভেতরে অনেক রোহিঙ্গা নারী রান্নার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কেউ কেউ তাঁবু থেকে মালামাল সরিয়ে অন্যত্র রাখতে ব্যস্ত। তাঁবুর ভেতরে শিশুদের কান্না ও হাঁচি-কাশির শব্দও শোনা যায়। এ পাহাড়ের পাদদেশে পাশের সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে হাফেজ নুর হুসাইনের পরিবার। তারা এসেছেন মংডু এলাকার ঝিমংখালী থেকে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকছেন প্রায় দুই মাস ধরে।

তিনি জানালেন, গত বৃহস্পতিবারও বৃষ্টির পরে রাতে ঘুমাতে পারেননি। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশের একজনের বাড়ি বা ছাউনিতে রাত কাটিয়েছেন। বাতাস হলে আরো ভয়ের মধ্যে থাকি। যদি বাতাসে উড়ে যায় বা ভেঙে যায় তাহলে আরো বিপদ। তাই বৃষ্টি আর বাতাস হলে আল্লাহকে স্মরণ করে পরিবার নিয়ে বসে থাকি।
একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা ঘড়ি কালু বলেন, আমি যে স্থান পেয়েছি তা পাহাড়ের একদম ঢালুতে। তাই যেকোনো মুহূর্তে মাটি ধসে ঘর ভেঙে পড়তে পারে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটি-পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরের মধ্যে কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। ঘরে থাকার উপায় থাকে না। গত শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির পরে ঘরের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে গেছে। এখন আছি পরিচিত আরেকজনের ঘরে। তার ঘরেও মানুষ বেশি। সে কারণে দুই-তিনটি ঘরে ভাগ হয়ে আছি। মোটকথা বৃষ্টি আর বাতাস হলে খুব ভয়ে থাকি।
তিনি বলেন, আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে এখানে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক মানুষ আছেন, কিন্তু ঝড়বৃষ্টি হলে তারা কী করবেন?
মোছনি ক্যাম্পে অবস্থানরত আসির আলী বলেন, জীবন বাঁচাতে আজ আমি এখানে পড়ে আছি। অথচ মংডুতে আমার অনেক বড় বাড়ি ছিল। সেখানে যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদে মানুষ আমার ঘরে আশ্রয় নিতেন। সারা জীবন আমি অনেক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি। ভাত-কাপড় দিয়েছি অথচ আজ আমি নিজেই আশ্রয়হীন। সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ঋণ কখনো কোনো রোহিঙ্গা শোধ করতে পারবেন না। বাংলাদেশের সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। খাবার থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব কিছু করছে। তবে এখানে আসার পরে কয়েকবার বৃষ্টির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যখন বৃষ্টি হয় তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব বিপদে থাকি। কারণ পাহাড়ের জমিতে আমরা যে ঘর করেছি মোটা একটি পলিথিন দিয়ে ইতোমধ্যে পলিথিনে কয়েকটি ফুটো হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি হলে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। জোরে বাতাস হলে পলিথিন ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাই খুব ভয়ে থাকি, যখন বৃষ্টি আর বাতাস হয়।
এর পরও দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে সংখ্যালঘু এ জনগোষ্ঠীর আরো ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা টেকনাফের লম্বাবিল সীমান্তবর্তী নাফ নদীর ওপারের কুমিরখালী এলাকায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। সেখানে তারা বৃষ্টি ও ঝড়ো হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করেন বলে জানিয়েছেন প্রবেশকারীরা।

গত শুক্রবারও নাফ নদী পার হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে টেকনাফের লম্বাবিল পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বুচিডং টাউনশিপ সিন্ডিপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়া।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের নাফ নদীঘেঁষা মংডু ও মাঝখানের পাহাড় পূর্বে বুচিডং টাউনশিপ। এ পাশ থেকে বোঝার উপায় নেই মংডুতে কী হচ্ছে। পাঁচ দিন হেঁটে ও পাহাড় পেরিয়ে পৌঁছি মংডুর কুমিরখালী এলাকায়। আসার পথে দেখা মেলেনি কোনো মানুষের। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে আছে গ্রামের পর গ্রাম।
তিনি আরো জানান, কুমিরখালীতে এসে দেখা মেলে হাজারো রোহিঙ্গার ঢল, যারা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। নৌকা না পেয়ে সেখানে সবাই কান্নাকাটি করছেন। শিশুদের অবস্থা আরো গুরুতর। তারা বৃষ্টিতে ভিজে কাহিল হয়ে পড়েছে।
সুলতান মিয়া আরো বলেন, বুচিডংয়ে গত তিন দিন আগে আবারো নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে সেনাবাহিনী। ফলে অনেক মানুষ ভয়ে বাংলাদেশমুখী হওয়া শুরু করেছেন। এপারে এক মাস আগে আমার এক চাচাতো ভাই চলে আসেন। তার মাধ্যমে নৌকায় করে পরিবারের ২০ সদস্যসহ ৩০ জনের একটি দল টেকনাফের লম্বাবিল দিয়ে প্রবেশ করি।
তার দলের সাথে আসা বুচিডং টাউনশিপ পুমালি গ্রামের দিলবাহার (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজে তার ছোট মেয়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্বামী নুরুল আলমকে সেনাবহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।
এ দিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বুচিডং জেলার লাওয়াডং ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাইম্মাখালীর মোহাম্মদ তোহা ও মোহাম্মদ হোসেনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বাড়িতে অবস্থানরত লোকজন আগুন নেভাতে বের হলে তাদের বাধা দেয়া হয়। এ ছাড়া তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে এলাকাবাসী উপস্থিত হলে বিজিপি চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় সবাইকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। তা না হলে গ্রামবাসীকে নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মোহাম্মদ হোসেন ও মোহ্ম্মাদ তোহার বাড়িতে আগুন দেখে আমরা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে তা নেভাতে গেলে বিজিপি বাহিনী দেখে আর অগ্রসর না হয়ে চলে আসি। পরে আরো লোক জমায়েত হলে সম্মিলিতভাবে সাহস করে আগুন নেভাতে যাই। আমাদের দেখা সত্ত্বেও বিজিপিরা বাড়ি দু’টি সম্পূর্ণ পুড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নেয়। বাড়ি দু’টি পুড়ে গেলে তারা চলে যায়। যাওয়ার সময় সবাইকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। অন্যথায় সবাইকে তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয় বার্মার স্টেট স্পন্সর্ড বিজিপি ফোর্স।

বাড়ি ও বাড়ির পাশে থাকা গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি বলে এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন।
টেকনাফ হোয়াইক্যং পুথিন পাহাড়ের রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, গত শুক্রবার ভোর থেকে সীমান্ত দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো রোহিঙ্গা প্রবেশ করে এ পাহাড়ে আশ্রয় খুঁজছেন। এ ছাড়া প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন আরো ২০ হাজারের মতো। তারা সেখানে বৃষ্টিতে ভিজছেন, রোদে পুড়ছেন।'
ক্যাম্পে কর্মরত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় বেশ নিয়ন্ত্রণে। তবে বৃষ্টি হলে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সব ঘর কাঁচা এবং খুবই নরম হওয়ায় বৃষ্টি এবং বাতাস হলে যেকোনো মুহূর্তে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। আকাশে ভারী মেঘ হলেও তারা দুশ্চিন্তায় থাকেন।
কুতুপালং ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, এখানে কিছু বাড়ি আছে একদম পাহাড়ে, আবার কিছু আছে পাহাড়ের ঢালুতে, যা খুবই ঝুঁঁকিপূর্ণ। ভারী বৃষ্টি হলে এখানে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও আছে। স্বাভাবিক বৃষ্টিসহ বাতাস হলেও ওই সব ঘর ভেঙে পড়তে পারে। অবশ্য এর চেয়ে বেশি কিছু করা আপাতত সম্ভবও নয়। এত বেশি মানুষকে ভালোভাবে ঘর তৈরি করে দিতে গেলে অনেক জায়গা এবং সহযোগিতা দরকার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। সব দিকে শৃঙ্খলা ফিরেছে। সব দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
বান্দরবানের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে খাদ্যসঙ্কট
নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে মো: ইউনুছ আবেদীন টুক্কু জানান, বান্দরবানের নাই্যংছড়ির রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। সীমান্তের বড় ছনখোলায় আশ্রয়শিবিরে বেশ কিছু দিন ধরে খাদ্য সরবরাহ ও ত্রাণ তৎপরতা কমে যাওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মূলত আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেখানে ত্রাণ তৎপরতাও কমেছে। ফলে এলাকায় খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু রোহিঙ্গা ত্রাণ বিক্রি করার কথাও স্বীকার করেন।

চাকঢালার এ আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে এক হাজার ৬৫০ পরিবারের প্রায় সাত হাজার ৪০ রোহিঙ্গা রয়েছেন। শিগগিরই এসব আশ্রয়শিবিরে খাদ্য সরবরাহ করা না হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম জানান, ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর নাই্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তের বড় ছনখোলায় সাত হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন।
তিনি জানান, প্রথম দিকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো বিপুল ত্রাণ দেয়। এ ছাড়া চাকঢালার স্থানীয় একটি স্কুলের কে বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রাখা হয়।
আশ্রয়শিবিরগুলোর রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থা প্রথম দিকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়। পরে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ত্রাণ তৎপরতা কমে গেছে। তারা জানান, তেল, পেঁয়াজ, আটাসহ অন্যান্য ত্রাণ কিছু থাকলেও পর্যাপ্ত চাল নেই।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার কামাল জানিয়েছেন, আপাতত আশ্রয়শিবিরগুলোতে ত্রাণের কোনো সঙ্কট নেই। যা মজুদ আছে তা দিয়ে আগামী কয়েক দিন ত্রাণ দেয়া যাবে। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে উখিয়ায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে ত্রাণ তৎপরতা কমেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/262408