২৩ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৮:৫৬

সত্য বেরিয়ে আসেই

আশিকুল হামিদ : কিছুদিন পর্যন্ত রেখে-ঢেকে রাখা গেলেও সত্য চিরদিনের জন্য গোপন রাখা যায় না। কোনো না কোনো সময় তা প্রকাশিত হয়ে পড়েই। এ যে শুধু কথার কথা নয় তার সর্বশেষ প্রমাণ দিয়েছেন অতি সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। পশ্চিম বঙ্গের এই ‘বাঙালী’ কংগ্রেস নেতা ২০১২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের (২০১৭) জুলাই পর্যন্ত পাঁচ বছর ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি দেশটির রাজধানী নয়া দিল্লিতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রণব মুখার্জিকে দীর্ঘ ৬৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। কথা শুধু এটুকুই নয়। বাস্তবে রাষ্ট্রপতি বানানোর নামে প্রণব মুখার্জিকে প্রধানমন্ত্রিত্বের রেস বা দৌড় থেকেই সুকৌশলে সরিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে গান্ধী পরিবারের অতি বিশ্বস্ত হিসেবে ভূমিকা পালন করে এলেও প্রণব মুখার্জি কংগ্রেসের জন্য ‘বার্ডেন’ তথা বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। সোনিয়া গান্ধী না তাকে গিলতে পারছিলেন, না পারছিলেন উগলে ফেলতে। সুযোগ পেলেই প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আবদার জানিয়ে বসছিলেন। ওই সময়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আরো একবার তৎপর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু যতো বিশ্বস্ত হোন না কেন, একদিকে তিনি ‘বাঙালী’ অন্যদিকে আবার চেষ্টা চলছিল রাজিব ও সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য। সে কারণেই কংগ্রেসের ঘাড় থেকে প্রণব নামের ‘বোঝা’টিকে ঝেড়ে ফেলে দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। সেটাই করেছিল কংগ্রেস। প্রণব মুখার্জি যাতে এদিক-সেদিক করতে না পারেন সেজন্য স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি বানানোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ভারতের জাতীয় রাজনীতি থেকেই প্রণব মুখার্জিকে বিদায় করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী।

এ বিষয়ে সম্প্রতি কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তার নিজের চাইতে ‘অনেক বেশি যোগ্য ছিলেন’ প্রণব মুখার্জি। কিন্তু কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তে প্রণবের পরিবর্তে তাকে অর্থাৎ মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী হতে হয়েছিল। কথাগুলো নিয়ে আলোচনা বেশি হওয়ার বিশেষ কারণ হলো, প্রণব মুখার্জির লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স ১৯৯৬-২০১২’-এর যে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মনমোহন সিং বলেছেন, সেখানে স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী উপস্থিত ছিলেন। তার পাশে ছিলেন সোনিয়া ও রাজিব গান্ধীর ছেলে এবং কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী। বলা হয়, মূলত প্রধানমন্ত্রীর পদে এই রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যই সোনিয়া প্রণব মুখার্জিকে প্রধানমন্ত্রী করেননি। উল্লেখ্য, প্রণব মুখার্জি যখন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং তখন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। অর্থাৎ ড. সিং প্রণব মুখার্জির অধীনে চাকরি করেছেন। সেই তাকেই প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী, তবু প্রণব মুখার্জিকে নয়!

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। অবসরে যাওয়ার দু’মাসের মধ্যেই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স ১৯৯৬-২০১২’ নামে একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করে প্রণব মুখার্জি রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন। শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও গ্রন্থের পাশাপাশি প্রণব মুখার্জিকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর একটি বড় কারণ, গ্রন্থটিতে বিশেষ করে তথাকথিত ১/১১-এর প্রধান খলনায়ক জেনারেল মইন উ আহমেদ এবং শেখ হাসিনার মধ্যকার সমঝোতা সম্পর্কে এতদিন গোপন রাখা কিছু তথ্য তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন। ভারতের ম্যাগাজিন ইন্ডিয়া টুডে’তে প্রকাশিত গ্রন্থের এই অংশটুকুর অনুবাদ ছাপিয়েছে বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো (১৯.১০.১৭)। এতে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক নামের ওই সরকারের হাতে আটক আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ভ’মিকা পালন করেছিলেন ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। মিস্টার মুখার্জি অবশ্য শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা সম্পর্কেও লিখেছেন। বলেছেন, এই দুই নেত্রীকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানানোর জন্য তিনি নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সাক্ষাতও চেয়েছিলেন। জর্জ বুশের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন কি না এবং এতে কাজ হয়েছিল কি না সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ভারতের তখনকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এস কে নারায়ণনের মাধ্যমে ‘হস্তক্ষেপ’ করে তিনি (প্রণব মুখার্জি) সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত’ করেছিলেন।
এই ‘হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে বিশদভাবে জানানোর পরিবর্তে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একটি শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিকে জোর দিয়েছিলাম।’ এ প্রসঙ্গেই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ গ্রন্থটিতে জেনারেল মইন উ আহমেদের সঙ্গে নিজের বৈঠক ও আলোচনার বক্তব্য সম্পর্কে জানিয়েছেন মিস্টার মুখার্জি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মইন উ’র ছয়দিনের ভারত সফরের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় আমি তাকে (জেনারেল মইন উ’কে) রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির গুরুত্ব বোঝাই। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন যে, শেখ হাসিনা বের হয়ে আসার পর তাকে (অর্থাৎ মইন উ’কে) চকিরিচ্যুত করতে পারেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিই এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও তার চাকরিতে বহাল থাকার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করি।’

অন্য দুটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ তথ্যও জানিয়েছেন প্রণব মুখার্জি- ১. ‘শেখ হাসিনা আমাদের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির মাধ্যমে ভারত তার (শেখ হাসিনার) দাবি পূরণে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে।’ প্রণব মুখার্জির দ্বিতীয় তথ্যটিও যথেষ্ট গরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা কারাগারে থাকার সময় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তাকে পরিত্যাগ করলে আমি তাদের ভর্ৎসনা করে বলি, কেউ যখন এমন বিপদে থাকে তখন তাকে ত্যাগ করা অনৈতিক কাজ।’ উল্লেখ্য, ‘মাইনাস টু’ নামে বহুল আলোচিত ফর্মুলার বাস্তবায়ন করার জন্য সে সময় আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর সমন্বয়ে ‘র্যা টস’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ শেখ হাসিনাকে দল থেকে ‘মাইনাস’ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু’ প্রণব মুখার্জি তাদের ‘ভর্ৎসনা’ করায় তারা নিবৃত্ত হয়েছিলেন। বলা দরকার, রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রচারণাও রয়েছে যে, প্রণব মুখার্জির মাধ্যমে ভারত সরকার নাকি ‘র্যা টস’ নামের এই চার নেতাকেই দেশটির ‘সেকেন্ড লাইন অব লিডারশিপ’ হিসেবে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময়ে ‘বশে’ এনেছে।
বর্তমান পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেয়ার এবং ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে নিজের তথা ভারতের ভ’মিকার ব্যাপারে প্রণব মুখার্জি খোলামেলাভাবেই জানিয়েছেন। তার গ্রন্থে লিখেছেনও। মিস্টার মুখার্জি কিন্তু তাই বলে বিস্তারিত লেখেননি। কারণ, এই অভিযোগ প্রথম থেকেই অনস্বীকার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে বলে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল বলেই লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস চালিয়ে সবকিছু ভন্ডুল করে দেয়া হয়েছিল। সমগ্র সে কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভ’মিকা সম্পর্কেও তাৎক্ষণিকভাবেই জানাজানি হয়েছিল। সুতরাং এতদিন পর জেনারেল মইন উ আহমেদকে সামনে এনে প্রণব মুখার্জি যা-ই বলুন বা বোঝাতে চান না কেন, সত্য হলো, সবই জানা ছিল তার। প্রতিটি বিষয়ে তিনি অংশগ্রহণ যেমন করেছেন, তেমনি দিয়েছেন নির্দেশনাও। জেনারেল মইন উ নিজেও ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই নিয়োজিত ছিলেন। একই কারণে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মইন উ’কে যাতে চাকরিচ্যুত না করেন এবং তার বিরুদ্ধে যাতে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেন- এসব বিষয়ে মিস্টার মুখার্জি ‘ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব’ নিয়েছিলেন। মইন উ’কে চাকরিতে বহাল রাখার ব্যাপারেও তাকে ‘আশ্বস্ত’ করার মতো অবস্থা বা ক্ষমতা ছিল তার। সেটা তিনি করেও দেখিয়েছেন। এজন্যই আজও পর্যন্ত জেনারেল মইন উ’র বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাকে বরং মুক্তভাবে বিদেশে চলে যেতে দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ যখন এসেছেই তখন বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রণব মুখার্জির ভূমিকার কথা স্মরণ করা যাক। দেখা যাক, ভারতের এই ‘বাঙালী’ রাজনীতিক বাংলাদেশের কোনো উপকার করেছেন কি না। মাঝখানে কিছুদিনের বিরতিসহ ১৯৭৭ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য থেকে সীমান্তে হত্যা ও পানি সমস্যাসহ কোনো একটি বিষয়েই বাংলাদেশ লাভবান হতে পারেনি। এর সহজ অর্থ, বাংলাদেশে যাকে যাকে ‘বাঙালী’ হিসেবে ‘পুজনীয়’ করার চেষ্টা করা হয়েছিল সেই প্রণব মুখার্জিও অন্য ভারতীয়দের মতোই ক্ষতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো উপকার করেননি। বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে বরং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালনেই বেশি তৎপর দেখা গেছে।
উদাহরণ দেয়ার জন্য ২০০৭ সালের নভেম্বরে সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রণব মুখার্জির তামাশার কথা উল্লেখ করতেই হবে। তিনি তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিডরের পর পর ঝটিকার বেগে উড়ে এসেছিলেন প্রণব মুখার্জি। মনে হয়েছিল যেন ‘উদার হস্তে’ সাহায্য দেয়াই তার উদ্দেশ্য! কিন্তু পরে দেখা গেলো, তিনি আসলে ‘খেল’ দেখাতে এসেছিলেন। কারণ, পাঁচ লাখ টন চাল রফতানির অঙ্গীকার ঘোষণা করলেও তারা এমনভাবেই নতুন নতুন শর্তের বেড়াজালে বেঁধে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হয়েছিল। প্রণব মুখার্জির আশ্বাসে মইন-ফখরুদ্দিনদের অসাংবিধানিক সরকার সে সময় অন্য কোনো দেশ থেকে চাল আমদানির চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। ফলে ‘খেল’-এর ধাক্কায় বাংলাদেশকে প্রচন্ড খাদ্য ঘাটতিতে, প্রকৃতপক্ষে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘চালবাজ’ ও ‘চাউল দাদা’ নামে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন প্রণব মুখার্জি। এই চালবাজির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল, নামে ‘বাঙালী’ হলেও বাংলাদেশের প্রতি সামান্য মমতাও নেই প্রণব মুখার্জির।
ভারতের সদ্য অবসরে যাওয়া এই রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে তথ্যের দ্বিতীয় কিস্তি জানা যাবে পিলখানা হত্যাকান্ড এবং তার আগের ও পরের কিছু কথা স্মরণ করলে। এ ব্যাপারে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ ‘উইকিলিকস’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে কিছু খবর প্রকাশ করেছিল ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ এবং ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’।
পিলখানায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহের পর ‘সাহায্য চেয়ে’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে টেলিফোন করেছিলেন (‘ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু’) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রণব মুখার্জি ‘ইতিবাচক সাড়া’ দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ সাহায়তা করা হবে।
এভাবে যে কোনো পর্যালোচনায় দেখা যাবে, প্রণব মুখার্জির ভূমিকা কোনো পর্যায়েই বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি। এ সম্পর্কে জানার জন্য বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার পড়ে না। ড. মনমোহন সিং-এর সরকারের আমলেও প্রণব মুখার্জিই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। বাংলাদেশ কি পেয়েছে বা আদৌ কিছু পেয়েছে কি না পাঠকরা তা ভেবে দেখতে পারেন।

প্রণব মুখার্জিকে অবশ্য একটি কারণে ধন্যবাদ দিতে হবে। সর্বশেষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার প্রতি সোনিয়া গান্ধীর মনোভাব যথেষ্ট ‘শীতল’ ছিল। বিনয়ের সঙ্গে প্রণব মুখার্জি আরো বলেছেন, তিনি নিজে কখনো প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য প্রার্থী হননি। কাজেই দুঃখিত হওয়ারও প্রশ্ন ছিল না। অন্য একটি নতুন কথাও শুনিয়েছেন প্রণব মুখার্জি। বলেছেন, জওয়াহেরলাল নেহরুর সমসাময়িক কংগ্রেসের নীতনির্ধারক নেতা কুমার স্বামী কামরাজ বলেছিলেন, ‘নো হিন্দি, নো পি এম’। অর্থাৎ হিন্দি জানা ছাড়া কাউকে প্রধানমন্ত্রী করা যাবে না। অন্যদিকে প্রণব মুখার্জি একেবারেই হিন্দি জানেন না। সে কারণে তিনি নাকি আবার দুঃখিতও হননি! বলা হচ্ছে, কথাটার মধ্য দিয়ে প্রণব মুখার্জি বাস্তবে তার ক্ষোভ ও দুঃখের কথাই জানিয়ে দিয়েছেন। এটাই সম্ভবত একটি বড় কারণ, যার জন্য ‘অনেক বেশি যোগ্যতা’ থাকা সত্ত্বেও প্রণব মুখার্জি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। তাকে বরং এমন এক মনমোহন সিং-এর অধীনে মন্ত্রিত্ব করতে হয়েছিল, যিনি প্রণব মুখার্জি অর্থমন্ত্রী থাকার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে চাকরি করেছেন।
এগুলো অবশ্য ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বর্তমান পর্যায়ে শেষ করার আগে জানিয়ে রাখা দরকার, নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের বাংলাদেশ অংশে প্রণব মুখার্জি আসলে নতুন কিছুই জানাননি। শুধু কিছু গোপন রাখা তথ্য প্রকাশ করে ফেলেছেন এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন, সত্য এক সময় বেরিয়ে আসেই!

http://www.dailysangram.com/post/304551