২২ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১১:১০

ওপারেকয়লারখনি, এপারেমাছেরমড়ক!

তৃতীয় নয়ন

মীযানুল করীম
চলতি বছরের প্রথম দিকে দেশের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে দুই দফা অকালবন্যার অস্বাভাবিক তাণ্ডবে ফসল ও জীববৈচিত্র্যের সাথে মৎস্যসম্পদের ক্ষতির পরিমাণও বিশাল। বাংলাদেশের অন্যতম ‘শস্যভাণ্ডার’ এই হাওর এলাকার ক্ষেতের ধান বিনষ্ট হওয়ায় চালের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর পাশাপাশি, এবার বন্যায় সেখানকার কয়েকটি জেলায় মাছের ব্যাপক মড়কে জনমনে বিস্ময় ও উদ্বেগের সঞ্চার হয়। ‘অনুসন্ধানের ভিত্তিতে’ সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কারণ জানানো হলেও সচেতন নাগরিকদের সংশয় কাটেনি। গবেষকদের সূত্রে এখন জানা যাচ্ছে, সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়ে, অর্থাৎ আমাদের হাওরাঞ্চলের নদীগুলোর উজানে বিশেষ করে কয়লা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয়ে পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলেছিল। এর পরিণামে ভাটিতে এ দেশের হাওর এলাকায় আগামবন্যায় ক্ষেতের ধান ও গবাদিপশুর সাথে পানির মাছেরও বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে বাংলাদেশের কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৮১ কোটি টাকা, যা ৬২০ মিলিয়ন ডলারের সমান। অপর দিকে জানা যায়, বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের উজানে, ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের ৩৮টি নদীর পানিদূষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ২০১৫ সালেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল।

ঢাকার সুপরিচিত ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা হলিডের গত ১৩ অক্টোবর সংখ্যায় লিড আইটেম ছিল হাওরের পানিতে বিষাক্ত দূষণ এবং এ নিয়ে ‘রাখঢাক’ প্রসঙ্গে। শিরোনামটি হলো, Dhaka experts conceal truth, Indians confirm hazardous pollution (ঢাকার বিশেষজ্ঞরা সত্যকে লুকাচ্ছেন; ভারতীয়রা বিপজ্জনক দূষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন)। এই চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে পর্যাপ্ত গবেষণা ও জরিপের ভিত্তিতে বক্তব্য দেয়া জরুরি। আলোচ্য এই লেখাটির প্রণেতা হলেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব কারার এম হাসান এবং তিনজন সাংবাদিকÑ ইকবাল সিদ্দিকী, এইচ আর চৌধুরী ও এম এম আলী।

২০১৭ সালের ২৭ মার্চ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হাওর এলাকায় পানির ভয়াবহ দূষণের সূচনা। সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের আগে এখানে বন্যা হয় না। বর্ষার গতানুগতিক সময়ের বেশ আগেই এবার উজানের মেঘালয়ে অতিবর্ষণের কারণে ভাটির হাওরাঞ্চলে ফ্লাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। ভারতের বৃষ্টিপ্রবণ মেঘালয় প্রদেশটি পাহাড় ও ঝরনায় পরিপূর্ণ। এ রাজ্যের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান। গত মার্চ-এপ্রিলে বন্যা বা ঢলের তোড়ে বৃহত্তর সিলেটের চার জেলাÑ সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের দুই জেলা নেত্রকোনা আর কিশোরগঞ্জে কৃষি ও গবাদিপশুসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তদুপরি এসব জেলার চারটিতে মড়ক লেগে মৎস্যসম্পদ নষ্ট হয়েছে বিপুলভাবে, যা ছিল নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিক। তখন থেকেই এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি, প্রতি বছর এ অঞ্চলে এমন বন্যা হলেও আগে কেন মাছের মড়ক লাগেনি? এবার কী কারণে বন্যার পানিতে মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হলো?
তখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, হাওরের কাঁচা ধান ঢলের পানিতে পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মাছ ও গবাদিপশুর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে।’ স্মর্তব্য, তখন হাওরাঞ্চলে শত শত টন মাছ মারা যায়, হাজার হাজার টন ধান বিনষ্ট হয় এবং বহু গরু-মহিষ-ছাগল প্রাণ হারায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ধান তখনো পাকেনি এবং এটা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পচতে শুরু করে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে হাওরের ধান ও মাছের ওপর এ অঞ্চলের বাইরের মানুষের বিরাট অংশও নির্ভরশীল। যা হোক, এ বছর বন্যায় হঠাৎ এত মাছ মারা যাওয়ার ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি। ঢলের পানিতে ফসল নষ্ট হওয়া কিংবা গবাদিপশু মারা যাওয়া নতুন নয়। তবে ঢলের পানিতে মড়ক দেখা দেবে পানির প্রাণী মাছেরÑ এটা রহস্যজনক মনে হয়েছে শুরু থেকেই। সন্দেহ আরো বেড়ে যায় যখন জানা গেল, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ হাওর অধ্যুষিত হলেও বন্যায় এ দু’টি জেলায় মাছের মড়ক লাগেনি। হাওর এলাকার অশীতিপর বাসিন্দারা বলেছেন, বন্যায় মাছ মারা যাওয়ার খবর কোনো দিন শোনা যায়নি।
উল্লিখিত লেখাটিতে বলা হয়েছে, (হাওরাঞ্চলে) উজানের ঢল নেমে আসার কয়েক দিনের মধ্যে এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এই গন্ধ স্থায়ী ছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে। এ বছর বন্যা এসেছে অন্যান্য বছরের তুলনায় আগে এবং বানের পানির রঙও এবার ছিল অন্যান্য বারের চেয়ে আলাদা।

এই প্রেক্ষাপটে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, এবার আমাদের সরকার কি বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে আগাম বন্যার কোনো সতর্কসঙ্কেত পায়নি? না পেলে এটা কি প্রতিবেশীর বন্ধুসুলভ আচরণ? আর যদি আগাম পূর্বাভাস পেয়ে থাকে, তাহলে সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবেলায় কী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল? উজানের ঢলে এবারে হাওরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফসল, গবাদিপশু আর মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব জেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় কোনো মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এই রহস্যের জবাব কে দেবে? বলা দরকার, এই জেলা দু’টি ভারতের মেঘালয় সীমান্ত থেকে দূরে।
প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক, বন্যার সময়ে সবচেয়ে বেশি মাছ মরেছে মেঘালয় সীমান্তবর্তী নেত্রকোনা জেলায়; পরিমাণ ১১৯ টন। একই সীমান্তসংলগ্ন সুনামগঞ্জ জেলায় মাছের প্রাণহানির পরিমাণ ৫০ টনের মতো। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৫ ও ২১ টন। অর্থাৎ নেত্রকোনার ক্ষতির পরিমাণ বাকি তিন জেলার মোট পরিমাণের চেয়েও ঢের বেশি। এ প্রসঙ্গে ‘হলিডে’ পত্রিকার আলোচ্য লেখাটিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, নেত্রকোনায় মাছের এত ব্যাপক ক্ষতির পরও কেন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা সেখানে না গিয়ে জড়ো হলেন সিলেট-সুনামগঞ্জে? প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি ইংরেজি পত্রিকার রিপোর্টে তখন বলা হয়েছিল, সীমান্তের ওপার থেকে আসা ইউরেনিয়াম দূষণের সাথে সুনামগঞ্জে মাছের মড়কের সম্পর্ক আছে। তাহলে কি সরকার তখন এ খবরে বিব্রত ও উদ্বিগ্ন হয়ে সে অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল? ওই রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপা হওয়ার আগে-পরে কর্মকর্তারা সে এলাকায় সফর করা এবং সেখানকার বন্যাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানা যায়।
প্রসঙ্গত যে প্রশ্ন করা উচিত, তা হলোÑ দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি দূষণজনিত কারণে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়ার আগেই ওই পানির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আমাদের সরকারের আছে কি না। এই ব্যবস্থা থাকলে সীমান্তের ওপার থেকে আসা নদীর পানির এ দেশে প্রবেশের পয়েন্টেই পরীক্ষা করে সেই রিপোর্ট অন্তত ‘ইউরেনিয়াম’ দূষণের প্রচারণার সময়ে প্রকাশ করা যেত। আর তখন যেসব বিজ্ঞানী ও গবেষক সিলেট-সুনামগঞ্জ গিয়েছিলেন হাওরের পানি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে, তারা অভিন্ন নদীর পানির মানসম্পর্কিত রিপোর্ট সরকারের কাছে চাইতে পারতেন।

পরিবেশ সচেতন নাগরিকেরা মনে করেন, হাওরে মাছের মড়কের আগে-পরে সীমান্তের ওপার থেকে আসা নদীর প্রবেশস্থল এবং দেশের অভ্যন্তরে হাওর এলাকার পানির কোয়ালিটি সংক্রান্ত রিপোর্টের তুলনা করে তা প্রকাশ করা উচিত জনস্বার্থেই।
হবিগঞ্জ জেলার তিনটি নদী সীমান্তের ওপার থেকে এসেছে। এগুলো হলো খোয়াই, সুতাং ও সোনাই। এসব নদীর উৎপত্তি মেঘালয়ে নয়, দক্ষিণের ত্রিপুরা রাজ্যে এবং কোনোটাই কয়লাখনি এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়নি। এসব নদীর পানিতে কয়লাখনি থেকে নিঃসরিত এসিড পাওয়া যায়নি। অপর দিকে, কিশোরগঞ্জ জেলার কোনো নদী সরাসরি সীমান্তের ওপার থেকে আসেনি। সেখানেও এই এসিড পাওয়া যায়নি পানিতে। নেত্রকোনা জেলায় সোমেশ্বরী ও কংস এবং পাশের সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটাসহ একাধিক নদী, সিলেটের পিয়াইন নদী প্রভৃতি মেঘালয় থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে। মেঘালয়ে কয়লাখনি আছে এবং কয়েকটি স্থানে নদীতীরে বিপুল কয়লা মজুদ রাখা হয় বাংলাদেশে রফতানির জন্য। এ কারণে এই রাজ্যের বিভিন্ন নদীর পানিতে কয়লাখনি নিঃসৃত এএমডি, অর্থাৎ ‘এসিড মাইন ড্রেনেজ’ পাওয়া গেছে। এটা পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে থাকে। ফলে এসব নদীর পানি ভাটিতে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে পানিদূষণের একটা বড় কারণ হতে পারে বলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ২০১৫ সালেই এক রিপোর্টে জানিয়েছে, মেঘালয়ের ১০টি নদীর পানি ‘মানসম্মত নয়’। একই সাথে জানানো হয়েছিল, আসামের ২৮টি নদীর পানিও দূষিত হয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, আসাম থেকে একাধিক নদী বাংলাদেশের সিলেট জেলায় ঢুকেছে। বলা বাহুল্য, এগুলোর পানি বিশেষ করে বন্যার সময় সহজেই এ দেশের হাওরের পানিতে মিশে যায়। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশÑ দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত, এমন কিছু নদীর কোনো কোনো অংশ মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে।’ এর জন্য দায়ী করা হয় ভারতে কয়লাখনি এলাকায় খনি থেকে প্রত্যক্ষভাবে নিঃসৃত এসিড নদীসহ জলাধারে দূষণ ঘটানোকে। এতে পানি খুবই বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের বিজ্ঞানীদের মতে, ‘অন্তত তিন দশক ধরে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হচ্ছে, যার ফলে পরিবেশ-প্রকৃতি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।’ এ অবস্থায় কয়েক বছর যাবৎ সে দেশের গণমাধ্যম, পরিবেশ আন্দোলনকারী এবং ছাত্রসংগঠনগুলো এ ব্যাপারে সরব হয়ে উঠেছে।

নেত্রকোনার সোমেশ্বরী একটি সুপরিচিত নদী। মেঘালয়ে এর নাম সিমসাং। এটা গারো পাহাড়ের কয়লাখনি এলাকার একটি প্রধান নদী। খনির দূষিত নিঃসরণ সরাসরি এ নদীতে গিয়ে পড়ে তদুপরি, এর তীরে বিপুল কয়লার স্তূপ করে রাখা হয় নিলামে তোলার জন্য। এই প্রেক্ষাপটে নদীটির মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। কয়লাখনির বিষাক্ত বর্জ্যে সোমেশ্বরী নদীর কোথাও কোথাও মাছ বা অন্য কোনো জলজ প্রাণী নেই। সোমেশ্বরী মেঘালয়ের পূর্ব গারো পাহাড় ও দক্ষিণ গারো পাহাড়Ñ এই দু’টি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এই নদী পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ছিল। ভারতে ছয় বছর ধরে সোমেশ্বরী নদী নিয়ে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে দুঃখের সাথে উল্লেখ করা হয়, ‘কয়লাখনির কারণে সৃষ্ট দূষণ সম্পর্কে পরিকল্পিত কোনো জরিপ চালানো হয়নি।’

বাংলাদেশের নেত্রকোনা, তথা হাওরাঞ্চলের উজানে, ভারতের মেঘালয়ে সোমেশ্বরী বা সিমসাং নদীজুড়ে ২৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় কয়েক বছরব্যাপী এই গবেষণায় ছয়টি স্থান ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে নিকরেক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ। ময়মনসিংহ সীমান্তের কিছু উত্তরে উইলিয়ামনগরে নিয়মিতভাবে কয়লা মজুদ করা হয়। গারো পাহাড়ে কয়লাখনির একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে নঙ্গাল বিব্রা। সিজু নামে জায়গাটির চার পাশে কয়লাখনি। বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরবর্তী বাঘমারা এমন এক স্থান যেখান থেকে নদীপথে নিয়মিত কয়লা পরিবহন করা হয়। এর পাশাপাশি খনি এলাকা থেকে দূরে অবস্থিত রোমাগ্রের প্রকৃতিতে দূষণ কতটুকু, তাও পরীক্ষা করা হয়েছে। ভারতের আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর ১০০ কিমি দীর্ঘ খাতজুড়ে পানিতে কয়লাখনির এসিড-বর্জ্য মিশে গেছে, যা মাছের অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকি। গারো পাহাড় এলাকার ছোট শহর নঙ্গাল বিব্রা। এখানেই কয়লাখনির কার্যক্রম বেশি। এই জায়গায় নির্বিচারে কয়লাখনির কাজ অব্যাহত থাকায় সোমেশ্বরীর পানি মারাত্মক দূষণের শিকার। একসময়ে মাছের জন্য খ্যাতি থাকলেও গত ক’বছরে কমতে কমতে এখানে মাছ এখন প্রায় নেই। সোমেশ্বরীর শুধু উজানে নয়, অপেক্ষাকৃত ভাটিতেও কয়লার অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। এসব স্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়।

ভারতের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে, আলোচ্য লেখাটিতে এ দেশের কয়েকজন সাংবাদিকসহ একজন সাবেক সচিব ও উন্নয়ন সংগঠক অনেক তথ্যই তুলে ধরেছেন। জনগণ স্বাভাবিকভাবেই এখন জানতে চাইবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য। সার্বিক ও যথাযথ অনুসন্ধানের নিরিখে কর্তৃপক্ষ যদি হাওরের সম্পদহানির প্রকৃত কারণ তুলে না ধরে, তাহলে বিভ্রান্তি বাড়বে; আশঙ্কা থেকে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে যেসব পরিবেশবিদ ও মাৎস্যবিজ্ঞানী রয়েছেন, তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। হাওরের সাতটি জেলাসহ দেশের মানুষের উদ্বেগপূর্ণ জিজ্ঞাসা, যদি সীমান্তের ওপারে উজানের নদীতে কয়লাদূষণ অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী দিনে প্রতি বছরের বন্যায় হাওরাঞ্চলের কী অবস্থা দাঁড়াবে? তাই এখন থেকেই এই দূষণরোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সতর্কতা প্রয়োজন।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/262000