২১ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৩:৩৫

ল্যানসেটের গবেষণা

বাংলাদেশে প্রতি চার জনে এক জনের মৃত্যু দূষণে

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বায়ু, পানিসহ নানা ধরনের দূষণের মাত্রা বাড়ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীতে যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ক্ষুধা-দারিদ্র্যের কারণে যত মানুষ মারা যায়, দূষণের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার এর চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৫ সালে বায়ু, পানি, মাটি ও কর্মক্ষেত্রের নানা দূষণের কারণে বিশ্বে মারা
গেছে ৯০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ দূষণ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষণজনিত মৃত্যুর হার বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বছরে যত লোকের মৃত্যু হয় এর মধ্যে ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ নানা ধরনের দূষণজনিত কারণে মারা যায়। অর্থাৎ এক চতুর্থাংশের বেশি মানুষ মারা যায় দূষণের কারণে।

১৮৮টি দেশের ওপর দুই বছর গবেষণা করে ল্যানসেট এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দূষণজনিত মৃত্যুহার বেশি থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের পরে আছে আফ্রিকার সোমালিয়া (২৬.৪৯ শতাংশ), চাদ (২৫.৫৫ শতাংশ) ও নিজার (২৪.৮৬ শতাংশ)। তালিকায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে আছে ভারত (২৪.৪৫ শতাংশ) ও নেপাল (২৩.৭৫ শতাংশ)। ২০১৫ সালে শুধু ভারতেই দূষণের কারণে মারা গেছে ২৫ লাখ মানুষ। দূষণজনিত কারণে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাই ও ইউরোপের সুইডেনে।

বিষয়টি নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণজনিত মৃত্যুর বেশিরভাগ হয়েছে সংক্রামক নয়, এমন রোগে। এর মধ্যে রয়েছে হূদরোগ, স্ট্র্রোক ও ফুসফুসের ক্যান্সার। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ে ইকান স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ফিলিপ ল্যানিগান বলেন, 'দূষণের চ্যালেঞ্জ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের থেকেও বেশি। দূষণ জনস্বাস্থ্যের নানা দিকের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।'

এই গবেষণার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, শুধু বায়ু দূষণের কারণেই বছরে বিশ্বে প্রাণ হারাচ্ছে ৬৫ লাখ মানুষ। আর এ বায়ু দূষণের জন্য কলকারখানা থেকে নির্গত গ্যাস, বাতাসে দূষণ-কণা এবং ঘরের ভেতর কাঠ ও কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া দায়ী। এরপর সবেচেয়ে বেশি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে পানি দূষণ, যা থেকে এক বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৮ লাখ মানুষের। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে দূষণ থেকে মারা গেছে ৮ লাখ মানুষ।
দূষণবিরোধী সংস্থা পিউর আর্থের লেখক কার্তি সন্ধিলয়া বলেন, 'দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হন দরিদ্ররা। অথচ এই হতভাগ্য মানুষেরা এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারে না। দূষণ মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি হুমকি, অর্থাৎ সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার, স্বাস্থ্য, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও শিশুদের রক্ষার মতো অধিকারগুলো থেকে সবাই বঞ্চিত হচ্ছেন।

http://www.samakal.com/bangladesh/article/17101259