বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাত গ্রাম প্লাবিত
২১ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৩:১৭

ঝালকাঠি ও বরগুনায় নদীর পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও টানা বৃষ্টিতে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামের বাসিন্দারা। শুক্রবার দুপুরে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসতঘর ও ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। ফসলের ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। পানিতে তলিয়ে গেছে নলছিটির ষাটপাকিয়া ও কাঠালিয়ার আমুয়া বন্দরের ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে। এতে বিভিন্ন রুটের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টির সাথে হাল্কা জড়ো হাওয়া থাকায় দীপাবলী উৎসব উপলক্ষে নির্মিত তোরণও হেলে পড়েছে। বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর ওয়েবসাইট থেকে জানাগেছে, শুক্রবার এ অঞ্চলের ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সাথে হাল্কা জড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। শনিবারে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৃষ্টিপাত এবং ভারী বর্ষণ ও বজ্র ঝড়ের আশংকা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী ও হালতা নদীতে নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের পানি ৩/৪ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৪ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের ঘের, আমন ধানের ক্ষেত, হাজার হাজার একর জমির ফসল ও ফসলি জমি। শহরের লঞ্চঘাট থেকে কাঠপট্টি ট্রলারঘাট পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ উপচে ভিতরে ভিতরে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে গেছে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেড় শতাধিক পরিবার।।পুরাতন কলাবাগান চর এলাকায় হালিমা-মোয়াজ্জেম হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়, হালিমা-ইউসুফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দেড় শতাধিক বাসিন্দার ঘরের ফ্লোরে পানি প্রবেশ করে। স্থানীয় বৃদ্ধ খালেক হাওলাদার ও তার স্ত্রী বৃদ্ধা আনজারা বেগম বলেন, সিডরের সময় ঘর ভেঙে গেছে। অনেকে অনেক কিছু পেলেও আমরা কিছুই পাইনি। ভাঙা ঘরের ভিতর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে। ঘরের খাডাল (ফ্লোর) কাদা হয়ে গেছে। নাতি-নাতনি নিয়ে ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকায় অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ. হামিদ খান বলেন, কয়েকবার সাইক্লোন শেল্টারের জন্য বরাদ্দ এনেছিলাম, কিন্তু তা এখানে প্রয়োজন হলেও কর্তৃপক্ষ এখান থেকে বরাদ্দটি সরিয়ে নেয়। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলেই স্কুল ছুটি দিতে হয় এবং এ এলাকার বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ওই ওয়ার্ডে নিয়মিত পরিদর্শন ও বাসিন্দাদের খোঁজখবর রাখছি। নিচু ও ঘনবসতি এলাকায় একটি সাইক্লোন শেল্টার অতি প্রয়োজন। কৃষ্ণকাঠি জেলে পল্লীতে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং সুতালড়ি পুলিশ লাইনের পিছনে রাস্তা উপচিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। কাউন্সিলর মোঃ দুলাল হাওলাদার জানান, জেলে পল্লীতে বৃষ্টির পানির অপসারণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি পাইপ বসিয়ে পানি অপসারণের চেষ্টা করা হয়েছে। সুতালড়ি পুলিশ লাইনের পিছনের রাস্তার জন্য কয়েকবার বিদেশী প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তারা অনুমোদন না দেয়ায় রাস্তা করা সম্ভব হয়নি। এখন পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাত গ্রাম প্লাবিত
সংবাদদাতা, বরগুনা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনাসহ আশপাশের এলাকায় গতকাল শুক্রবার দিনভর মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জেলার প্রধান দুটি নদী পায়রা ও বিষখালীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে একাধিক দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার সদর উপজেলার ডালভাঙ্গা, মোল্লার হোরা, কুমড়াখালী ও তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামসহ মোট সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উঁচু জোয়ারের চাপে প্লাবিত হয়েছে মূল শহর। এ সময় রাস্তাঘাটসহ তলিয়ে যায় শহরের নিম্নাঞ্চল। রিকশা ছাড়া চলাচল করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়ে শহরবাসী।
সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু জানান, জোয়ারের চাপে তার ইউনিয়নের মোল্লারহোরা গ্রামের এক অংশ এবং বিকল্প বেড়িবাঁধ ভেঙে গোলবুনিয়া ও পোটকাখালী আশ্রয়ণের একটি অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার ছয়-সাতশ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে তার ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক দরিদ্র পরিবার।

http://www.dailysangram.com/post/304360